শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শামসুর রাহমানের কবিতা কালের আখরে লেখা

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

শামসুর রাহমানের কবিতা কালের আখরে লেখা

শামসুর রাহমান [জম্ন: ২৩ অক্টোবর ১৯২৯ মৃত্যু : ১৭ আগস্ট ২০০৬]

ডব্লিউ এইচ অডেনের কবিতা পছন্দ করতেন শামসুর রাহমান, তার ‘মিউজে দে বজার্ট’ কবিতা থেকে ইকারুসের আকাশ কাব্যগ্রন্থের মূল মিথ প্রতিমাটি তিনি গ্রহণ করেছিলেন, এ কথাটি তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু অডেন সম্পর্কে তার সেই উচ্ছাস ছিল না, যা ছিল ডব্লিউ বি ইয়েটসকে নিয়ে। পশ্চিমা যে কজন কবি তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তাদের মধ্যে ইয়েটস ছিলেন সর্বাগ্রে। ইয়েটস মারা যান ১৯৩৯ সালের জানুয়ারি মাসে এবং তার মৃত্যুতে বিচলিত অডেন একটি শোকগাথা লেখেন ‘ইন মেমোরি অব ডব্লিউ বি ইয়েটস’ শিরোনামে। এটি তিনি শামসুর রাহমানকে নিয়েও লিখতে পারতেন, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন এবং নিরানব্বই বছরেও যদি একজন নীরদচন্দ্র চৌধুরীর কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন :

এটি ছিল তার নিজের মতো থাকার সর্বশেষ বিকেল,/নার্স ও নানা গুজবের এক বিকেল;/তাঁর শরীরের প্রদেশেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল,/তাঁর মনের চত্বরগুলো ছিল শূন্য,/নীরবতা দখল করে নিয়েছিল সকল শহরতলী,/তাঁর অনুভ‚তির স্রোতগুলো হারিয়ে গিয়েছিল;/তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন তার ভক্তকুলে।

২০০৬ সালের সতেরোই আগস্ট সন্ধ্যায় শামসুর রাহমান হারিয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি চিরদিনের জন্য মিশে গেলেন তার পাঠক-গুণমুগ্ধ ভক্তদের ভেতরে। অডেনের কথা ধার করে বলা যায়, ‘একজন মৃত মানুষের কথাগুলো/জীবিতের অন্ত্রে অন্ত্রে পরিমার্জিত হয়।’

শামসুর রাহমান অসংখ্য কবিতা লিখেছেন, তার কিছু হারিয়ে যাবে, কিছু হয়তো গৌণ হয়ে যাবে কালের বিচারে। কিন্তু অনেক কবিতা থেকে যাবে জীবিতের উচ্চারণে, গোত্রের কাব্য ভাষা; যেহেতু গোত্রের ভাষাকে তিনি পিথাগোরাস-ম্যালার্মে-এলিয়ট কথিত কবির প্রধান করণীয় হিসেবে, পরিশ্র“ত করেছেন। শামসুর রাহমানের প্রথম চারটি গ্রন্থের বিষয়-আশয়, ভাষা, চিত্রকল্প-উৎপ্রেক্ষা-উপমা, মেজাজ ও সুর প্রভাবিত করেছেন পরবর্তী অসংখ্য কবিকে, এখনো করছে। তার থেকে একেবারে পৃথক একটি কাব্যভাষা তৈরি করেছেন, ষাট-সত্তর দশকে এ রকম কবির সংখ্যা বেশি নয়। এভাবে ‘জীবিতের অন্ত্রে অন্ত্রে’ অনুরণিত হয়েছেন জীবনানন্দ দাশ এবং বুদ্ধদেব বসুও। শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থে ছিলেন জীবনানন্দ দাশ, দ্বিতীয়টিতে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এ রকম অভিমত অনেক সমালোচকের। প্রথম গ্রন্থে বুদ্ধদেব বসুও ছিলেন, কোথাও কোথাও ‘কবর খোঁড়ার গান’-এ যেমন ‘মাটির নিচে পচে অন্ধ গোরে/হয়তো সুন্দরী কুরূপা কেউ।’

বুদ্ধদেবের একটি কবিতায় নরম ননীর মতো তনুর ভিত্তিমূলে যে কুৎসিত কঙ্কালের উপস্থিতি, এ দুটি পঙ্ক্তিতে তার অনুরণন। কিন্তু এসব প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি শামসুর রাহমানের। ষাটের দশকের দৈশিক এবং বৈশ্বিক সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, ঢাকাকেন্দ্রিক একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যচর্চার শক্তি অর্জন এবং কলকাতা থেকে আলাদা একটি কবিতা-ভাষার বিকাশ, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আÍপরিচয়ের সন্ধান এবং বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে আমাদের সৃষ্টিশীল একটি সম্পর্ক স্থাপনের প্রেক্ষাপটে তার জন্য এই কাজটি সহজ হয়েছিল। তিনি সমকালীন বাংলাদেশকে তার চিন্তা-চেতনায় ধারণ করে কবিতা লিখেছেন, একটি প্রচ্ছন্ন নাগরিক সুর তিনি তার কবিতায় বাজিয়েছেন, আধুনিক মানুষ ও আধুনিক মননের সূ² প্রকাশগুলোকে বাঙ্ময় করার জন্য আবেগ-অনুভ‚তির সঙ্গে জ্ঞান ও বুদ্ধি এবং চিন্তার সংবেদী সংযোগ ঘটিয়েছেন, আধুনিক ঐতিহ্যের নানা পরম্পরায় (চিত্রকলা, মনস্তত্ত¡, প্রকাশবাদ থেকে নিয়ে পরাবাস্তববাদ ইত্যাদি) তিনি নিজেকে স্থাপন করেছেন এবং বাংলাদেশের জম্নযুদ্ধের উত্তাপ তিনি নিজের ভিতর অনুভব করেছেন। তার পথটি তাই ছিল মৌলিকভাবেই পৃথক। অন্যের কাছ থেকে যেটুকু ঋণ তিনি নিয়েছিলেন, তার অনেক বেশি তিনি পরিশোধ করে দিয়েছিলেন মেয়াদের অনেক আগেই। বাংলা কবিতার তিনি ছিলেন পরাক্রমশালী মহাজন। তাকেই বরং ঋণ দিতে হয়েছে অন্যদের আজীবন। শুরুতে অডেন ও ইয়েটসের উল্লেখ শামসুর রাহমানের নিজস্বতা নির্ণয়ে আমাদের সাহায্য করবে। প্রথম পর‌্যায়ে অডেনকে তিনি পছন্দ করতেন, যে পর‌্যায়ে মার্কসীয় বীক্ষণে অনুপ্রাণিত অডেন প্রান্তবাসী মানুষজন, পুঁজির শোষণ এবং যুদ্ধবাজদের উপজীব্য করেছেন তার কবিতায়। কিন্তু ‘খ্রিস্টধর্মে প্রত্যাগত’ অডেনের মরমি ধাঁচের কবিতায় তার আস্থা ছিল না। তিনি উৎসাহী পাঠক ছিলেন ইয়েটসের কবিতার। ইয়েটসের কবিতা নিয়ে একাধিকবার আমার আলোচনা হয়েছে শামসুর রাহমানের সঙ্গে, রিচার্ড এলম্যানের লেখা ‘দি আইডেনটিটি অব ইয়েটস’ বইটি তিনি আমার থেকে নিয়ে পড়েছিলেন, অনেক পৃষ্ঠায় তিনি দাগ দিয়েছেন, মার্জিনে দু’এক মন্তব্য লিখেছেন। ইয়েটসের প্রকৃতি-প্রেম, জাতীয়তাবাদ, যুদ্ধ-বিরোধিতা এবং ইতিহাস ও মিথের প্রতি তার দুর্বলতার তিনি প্রশংসা করতেন, হয়তো নিজের চিন্তা-ভাবনা ও পছন্দের সঙ্গে নিকট একটি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়ায়। ইয়েটসের মতো রাহমানও কবিতার শুদ্ধ নান্দনিকতার সঙ্গে রাজনৈতিক চিন্তার একটি মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। আবদুল মান্নান সৈয়দ শামসুর রাহমানের কাব্যমণ্ডলকে দুটি ‘মহলে’ ভাগ করেছেন, এর একটির তিনি নাম দিয়েছেন ‘সুন্দরায়ন’, অন্যটি ‘জীবনায়ন’। আমার মনে হয়েছে, দুটি মহল পরস্পর প্রবিষ্টই ছিল, ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র পর থেকে। বস্তুত, ত্রিশের দশকের কবিদের থেকে এখানে স্বাতন্ত্র্য এবং শক্তি ছিল শামসুর রাহমানের। বুদ্ধদেব বসুর ‘নান্দনিক’ ধারাটি আলাদা ছিল সমর সেনের ‘রাজনৈতিক’, ধারা থেকে, কচিৎ কোনো কবি দুটি ধারাকে একত্র করার প্রয়াস নিয়েছেন; কিন্তু শামসুর রাহমান এ দুটি ধারার এই সুন্দরায়নের এবং জীবনায়নের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন অনেক কবিতা, যেগুলোতে একই সঙ্গে আগুন ও জল, রোদ ও জ্যোৎøা ছিল সহঅবস্থিত। বাংলাদেশের প্রকৃতি মনুষ্য-অধ্যুষিত এবং মানুষ প্রকৃতিকে জীবিকার কাজে লাগায়। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে জম্নায় মানুষের রোমান্টিক নান্দনিক আবেগ কিন্তু জীবিকার প্রশ্নে তাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়, সে জন্য জীবনায়ন অথবা জীবনের রাজনীতিকীকরণ আবশ্যক হয়ে ওঠে। এই বাস্তবতা ছায়া ফেলে শামসুর রাহমানের কবিতায়। তাকে নাগরিক কবি বলা হয়, কিন্তু নগরের ক্লান্তি-অবসাদ, বিকার-বিক্ষিপ্ত অথবা পারক্যবোধের বাইরে তিনি যখন এক পরাবাস্তববাদী চিত্রমালায় সাজান এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ও নাগরিকের জীবন, ‘নাগরিক’ অবিধাটি তখন হয়ে দাঁড়ায় আংশিক বর্ণনামূলক। তার রোমান্টিক বোধটি পরাবাস্তবের বেশ ধরে হাজির হয়েছে অথবা শহরের বাইরে প্রকৃতির বর্ণনায় ফুটে উঠেছে। কিন্তু প্রকৃতি নিয়ে তার প্রগলভতা ছিল না, যেহেতু প্রকৃতির ভিতর আছে মানুষ এবং মানুষের জীবনে আছে সংগ্রাম। তার প্রকৃতি দূর থেকে দেখা চিত্রমালা ছিল না, ছিল একজন ভিতরবাসীর ইন্দ্রিয়জ অনুভ‚তিতে প্রতিফলিত বোধগুচ্ছ। এ জন্য প্রকৃতি নিয়ে তার নস্টালজিয়া ছিল প্রচুর। নস্টালজিয়া কোনো বাস্তব ফেরত যাত্রা নয় বরং ফেরত-যাত্রার ভার্চুয়ালিটি। এতে তৈরি হয় বিষাদ, কখনো কখনো বেদনা। রাহমানের অনেক কবিতায় দুঃখবোধ প্রবল ছিল, অনেক কবিতায় প্রচ্ছন্ন। রৌদ্র করোটিতের প্রথম কবিতাতেই ছিল দুঃখের অমোচনীয় দৃশ্যকল্প।

...ছাদের কার্নিশ, খড়খড়ি

ফোমের বার্নিশ আর মেঝের ধুলোয়

দুঃখ তার আঁকে চকখড়ি (‘দুঃখ’)

শামসুর রাহমানের ‘আধুনিকতার’ অনেক শনাক্তি-চিহ্ন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হুমায়ুন আজাদ রাহমানের কবিতায় আধুনিকতার ‘ঝাড়লণ্ঠনের বর্ণাঢ্য শোভা প্রদীপ্ত’ দেখতে পান; ‘বস্তুবাস্তবতা ও অব্যবহিত প্রতিবেশ-পৃথিবী’র উপস্থিতিকে ওই আধুনিকতার চিহ্ন হিসেবে দেখেন; খান সারওয়ার মুরশিদ মনে করেন, তার কবিতায় ‘আধুনিক মানুষের অভ্যুত্থানের সব পর্ব, আবেগগত বুদ্ধিগত তত্ত¡গত সব দিক ধরা পড়েছে’। আধুনিকতার ব্যাখ্যায় বস্তুবাস্তবতা এবং প্রতিবেশচিন্তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ; সমান গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক মানুষের বুদ্ধি ও তত্ত¡গত অবস্থানের বিশ্লেষণও। তবে শামসুর রাহমান বন্ববাস্তবতার প্রতিরূপ আঁকার সঙ্গে সঙ্গে এর ভেতরের বিন্যাসটি-এর ‘এসেন্স’-এর চরিত্রটি-বুঝে ওঠারও চেষ্টা করেছেন। যে কারণে চিত্রকলার কিউবিজমের এবং উপন্যাসে চেতনা-প্রবাহ পদ্ধতির উদ্ভব, সেই একই কারণে শামসুর রাহমানের কবিতায় পরাবাস্তবের উম্নেষ, প্রকাশবাদের আয়োজন।

আধুনিক সাহিত্যে, শিল্পকলায়, এমনকি চলচ্চিত্রেও যে বিমূর্তায়ন আমরা লক্ষ্য করি, সেটি শামসুর রাহমানের কবিতাতেও আছে। যেহেতু বোধের বাইরে যেসব জ্ঞান-অনুভ‚তি সেগুলোর বর্ণনায় স্বচ্ছতা ধরে রাখা দুরূহ, অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ও। এজরা পাউন্ড বা এলিয়টের কবিতায় এই দুরূহতা একটি প্রধান অভিযোগ শুরুর-পাঠকদের। এই দুরূহতা অথবা বিমূর্ততা বিষ্ণু দে অথবা সুধীন্দ্রনাথ দত্তেও বর্তমান। কিন্তু শামসুর রাহমানের কবিতায় বিমূর্ততা, কখনো অনচ্ছ তার দেয়াল তৈরি করে না; ‘কবিতাটিতে কী বলতে চাচ্ছেন’ এ ধরনের অভিযোগও তাই তেমন শুনতে হয় না। শব্দচয়ন, আবহ-নির্মাণ, ছন্দ-মাত্রা-খেলা-আয়রনি এসবের ঝকঝকে আধুনিকতা সত্তে¡ও যেহেতু তার কবিতার একটি বৈশিষ্ট্য এর আখ্যানধর্মিতা। একজন গল্পকার যেমন গল্প লেখেন, সেরকম তার কবিতাকে সাজান শামসুর রাহমান। এবং ন্যারেটিভ কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করেন তার ভাষাবৈচিত্র্য এবং শব্দভাণ্ডার। রাহমানের কবিতার চিন্তা-বিশ্বটি পরিব্যাপ্ত হলেও এর ভিতর-জগৎটি খুবই পরিচিত, অন্তরঙ্গ। তার অনেক শব্দ পুরান ঢাকার মহল্লাবাসীর, অনেক শব্দ আরবি-ফার্সিজাত, অনেক শব্দ সংস্কৃতই, তৎসম। কিন্তু তাদের সহ-অবস্থান কোনো অসঙ্গতির সৃষ্টি করে না, কেননা তাদের উৎস জীবনের, প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার অঞ্চলে। এই অন্তরঙ্গ, প্রায় আটপৌরে আবেদন তার কবিতাকে দীর্ঘজীবী করবে।

২.

শামসুর রাহমানের কবিতা নিয়ে অনেক লেখা হবে, অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-অভিসন্দর্ভ-পুস্তক তৈরি হবে। এখন তিনি আমাদের কাছে স্মৃতির মানুষ, যদিও তার কবিতারা জীবন্ত। কিন্তু কিছু কথা তার কবিতা সম্পর্কে সব সময় বলা হবে, যেমন তিরিশ ঐতিহ্য থেকে কীভাবে একটি ভিন্ন আবহ ও ধারা তারা তৈরি করল; কীভাবে আধুনিকতার একটি দেশজ এবং সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিকভাবে নিজস্ব ব্যাখ্যা তারা নির্মাণ করল, এবং বৈশ্বিক বোধ ও চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বাতন্ত্র্যবোধে দীপ্যমান বাংলাদেশি কবিতা-ভাষা তারা তৈরি করল; অথবা নাগরিক বিচ্ছিন্নতা ও পার্থক্যবোধ, ব্যক্তির অনিকেত-উম্মুলতার আবহটি অভিনিবেশে রেখেও কীভাবে তারা মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক আশা-আকাক্সক্ষা এবং অধিকার অর্জনের সংগ্রামটিকে শুদ্ধ আবেগের আখ্যানে ভাষা দিল। প্রেমিক ও বিপ্লবী, বিপন্ন নাগরিক ও প্রকৃতিবাসী মানুষ, ভিক্ষুক ও মাতাল, খঞ্জ ও সহিস, কবি ও গণিকা সবাই পাশাপাশি হাঁটে তার কবিতায়, সবার জন্য উম্মুক্ত তার কবিতা। মিখাইল বখতিন যে ‘পলিগ্লোসিয়া’র বা বহু কণ্ঠস্বরের কথা বলেছেন ফিকশনের জগতের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে, তার সাক্ষাৎ রাহমানের কবিতাতে আমরা পাই। আরও পাই সব আধুনিক কবির এক বিশেষ কম্পালশনকে কবি ও কবিতা বিষয়ে আÍকথন এবং নিজেকে নানা আÍজৈবনিক উল্লেখ চিহ্নের আড়ালে ছড়িয়ে দেওয়া। ‘শামসুর রাহমান বলে আছে একজন’, ‘পারিপার্শ্বিকের আড়ালে’ কবিতায় তিনি লেখেন, (শূন্যতায় তুমি শোকসভা) ‘নিজের কাছেই বন্দি সর্বক্ষণ’। বন্দী বটে, তবে সদা-মুক্ত, জন ডানের সেই কবিতার মতো, যেখানে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর, তুমি আমাকে বন্দী না করলে আমি মুক্তি পাই কি করে?’

বন্দিত্ব-মুক্তি বৈপরীত্যটি, আরও অসংখ্য বৈপরীত্যের মতো মেলানোর প্রয়াস পেয়েছেন শামসুর রাহমান, আধুনিক কবিতায় যা আরেক করণীয়।

সর্বশেষ খবর