শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানুষের সেবাই আমার স্বপ্ন

মানুষের সেবাই আমার স্বপ্ন

দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান থেকে মেডিসিনে এমআরসিপি ও এফআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার লেখা বই পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে উপমহাদেশসহ, ব্রিটেন ও মধ্যপ্রাচ্যের  অধিকাংশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ও অধ্যাপক। তিনি একুশে পদক, ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন—শেখ মেহেদী হাসান

 

আপনার জন্ম জামালপুরে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। কেমন ছিল আপনার ছেলেবেলা?

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হাড়িয়াবাড়ি গ্রামে আমার জন্ম। একেবারে অজপাড়া-গাঁ। আমার আব্বা এ টি এম মনজুরুল হক ও মা আমেনা খাতুনের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়। আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয় জামালপুর হারিয়াবাড়ি প্রাইমারি স্কুলে। আমাদের ক্লাসে শিক্ষার্থী ছিল মাত্র পাঁচজন। কম শিক্ষার্থীর কারণে একটা সুবিধা ছিল, ক্লাসে ফার্স্ট হতাম। শিক্ষকরা আমাকে খুব আদর করত। মনে পড়ে জিয়াউদ্দিন ও  আবদুর রহমান স্যারের কথা। বিনাপয়সায় তারা পড়া দেখিয়ে দিতেন। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। তবুও আব্বা-মা আমাকে কষ্ট বুঝতে দেননি। আমি যা চেয়েছি—বইপত্র, কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়া যতটুকু সম্ভব দিয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে সিক্সে ভর্তি হই ইসলামপুর নেকজাহান হাইস্কুলে। তিন চার মাইল দূরের এই স্কুলে পায়ে হেঁটে যেতাম। কিছুদিনের মধ্যে আমি শিক্ষকদের নজরে আসি। আবদুস সামাদ খন্দকার বিএসসি, মজিবুর রহমান, আশরাফ, পরেশ স্যার আমাকে অসম্ভব স্নেহ ও উৎসাহিত করতেন। ১৯৬৯ সালে আমি তাদের মান রেখেছিলাম, বেশ কয়েকটা সাবজেক্টে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করি। এতে আমার স্কুলেরও বেশ সুনাম হয়। ছোটবেলায় হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা খেলতাম। স্কুলে প্রতি বছর বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা হতো, সেখানে পুরস্কার পেতাম।

 

তারপর এইচএসসি কোথায় পড়লেন?

আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকার কোনো বিখ্যাত কলেজে এইচএসসি পড়ব। কিন্তু সে সামর্থ্য ছিল না। বেশ ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু ওই সময় পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। এর মধ্যে পড়াশোনা করতাম। থাকতাম ঢাকা কলেজের নর্থ হোস্টেলে। ১৯৭০-এ দেখলাম স্বাধীনতা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করছে। এরপর এলো একাত্তর সাল। শুরু হলো স্বাধীনতা সংগ্রাম। ঢাকার অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। মিছিল-মিটিংয়ে ঢাকার অবস্থা ধীরে ধীরে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বাড়ি থেকে তাগাদা আসছিল ঘরে ফেরার। এক সময় ঢাকায় থাকতে সাহস পেলাম না। ব্যাগ গুছিয়ে এক সকালে হাজির হলাম কমলাপুর রেলস্টেশনে। সারা দিন বসে থেকে সন্ধ্যায় একটি ট্রেন পেলাম। পরে জেনেছি সেটিই ছিল শেষ ট্রেন। ওই ট্রেনে উঠতে না পারলে আমার বাড়ি ফেরা হতো না। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও আমি সব সময় খোঁজখবর রাখতাম। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় গ্রামেই কাটিয়েছি। আমাদের গ্রামে একটিমাত্র রেডিও ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর শোনার জন্য গ্রামের সবাই ভিড় করত। বঙ্গবন্ধুর খবরের জন্য উদগ্রীব ছিলাম। তাঁর কী হলো? মুক্তিযোদ্ধাদের খরব শুনতাম। এভাবে নয় মাস কাটল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সেই আনন্দ আমি ভুলব না।

   

মেডিকেলে ভর্তি হলেন কখন?

স্বাধীনতার পর ঢাকায় এসে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিলাম। ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করি। স্কুলে পড়ার সময় ভাবতাম প্রশাসনিক বড় পদে ঢুকব। আমার ধারণা ছিল সিএসপি অফিসার হলে মানুষকে সেবা করা যাবে। তাদের দাপটও ছিল। পরে মনে হলো, বড় পদে কাজ করলে বড় হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে না। বাবা-মা চাইতেন আমি যেন ডাক্তার হই। ডাক্তার হলে মানুষের সাহায্য করা যায়, জনগণের কাছাকাছি যাওয়া যায়। একেবারে নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যায়ের মানুষকে সেবা দেওয়া যায়। এই ভাবনা থেকেই ডাক্তারি পড়া। তখন মেডিকেল কলেজ ছিল আটটি, প্রতিযোগিতা ছিল অনেক। আমি সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলাম। স্বাধীনতার পর আমরাই ছিলাম প্রথম ব্যাচ। মেডিকেলে পড়লে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে সময় কাটাতে হয়। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ১৯৭৮ সালে এমবিবিএস পাস করি।

 

আপনার কর্মজীবন শুরু কবে?

ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করার পর এক বছর ইন সার্ভিস ট্রেনি করতে হতো। সেটা আসলে চাকরি। ওই প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৯৭৯ সালে আমার গ্রামে পোস্টিং হয়। জামালপুরের একটি গ্রাম। সেখানে থাকার জায়গা তেমন ছিল না। প্রচুর রোগী আসত কিন্তু ওষুধপত্র নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই। ৭/৮ মাস থাকার পর ঢাকা মেডিকেলে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে আমার পোস্টিং হয়।

 

গ্রামে চাকরির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

তখন মেডিকেল অফিসার বা জিপিদের সব কাজই করতে হয়। সাধারণ রোগী দেখা লাগে। ছোটখাটো কাটাছেঁড়া করা লাগে। সেখানে যাবার কয়েকদিন পর একটি ডেলিভারির ডাক আসে। আমি বললাম, এটা তো আমার সাবজেক্ট নয়। তখন তারা বলল, আর তো কোনো ডাক্তার নেই। সেই অজপাড়া-গাঁ থেকে শহরে রোগী আনারও সুযোগ নেই। পরিবারটির সামর্থ্যও ছিল না। সাহস করে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি বাচ্চার শরীর বাইরে, মাথা পেটের ভেতর রয়ে গেছে। কীভাবে এই কাজ করব? পরে মনে হলো, রোগীর জীবন রক্ষা করা জরুরি। ডেলিভারি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় গ্লাভসও ছিল না। একজন দাইকে নিয়ে নারকেল তেল মেখে জায়গা পিচ্ছিল করে কোনোরকম বাচ্চাটিকে বের করে আনি। আল্লাহর রহমতে প্রসবটি সফল হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো—কয়েক বছর আগে ডিপার্টমেন্টে সেই ছেলে ও তার বাবা এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। ছেলেটা তখন মেডিকেলে সদ্য চান্স পেয়েছে। সত্যিই আমি দারুণ অবাক হয়েছিলাম। আর আনন্দিত হয়েছিলাম তার চেয়েও বেশি।

 

আপনি তো কয়েক বছর সৌদি আরবে কাজ করেছেন।

আমি ঢাকা মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগে কাজ করছি। আমার দক্ষতাও বাড়তে থাকল। তখন আমার মাথায় চিন্তা এলো কীভাবে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া যায়? তৎকালীন আইপিজিএম-এ এফসিপিএসে ভর্তি হলাম। এক পর্যায়ে পার্ট ওয়ান পাস করলাম। পার্ট-টু পড়ছি এ সময় মধ্যপ্রাচ্যের একটি টিম এলো। তারা চিকিৎসক নেবে। বেতন খুব ভালো। আমি সামান্য বেতন পাই। তাতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারি না। এই লোভনীয় চাকরিটা ছাড়া কঠিন হয়ে গেল। আমি দরখাস্ত করলাম, চান্সও পেলাম। ১৯৮৪ সালের দিকে চলে গেলাম সৌদি আরব। সেখানেও অজপাড়া-গাঁয়ে চাকরি করতে হয়। পড়াশোনা যা করেছিলাম তা ভুলে যাওয়ার অবস্থা। তখন রিয়াদে ব্রিটেনের এমআরসিপি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল। আমি রিয়াদে পরীক্ষা দিয়ে পার্ট-ওয়ান পাস করলাম। স্বাভাবিকভাবে পার্ট-টু পাস করতে হবে। পাঁচ বছর সৌদি আরব থেকে দেশে এসে কিছুদিন থাকলাম। তারপর কিছু পয়সা সংগ্রহ করে ১৯৮৯ সালে লন্ডন চলে গেলাম।

 

 

লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান থেকে আপনি উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। 

আমি ট্রেনিংয়ে গিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবরার একটি হাসপাতালে কাজের সুযোগ পেলাম। সেখানে  কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করতাম ও প্রশিক্ষণ নিতাম। তারপর লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করি। পাস করার পর আবার চিন্তায় পড়লাম, কী করব? মধ্যপ্রাচ্যে গেলে অধিক বেতন পাব, বিলেতে থেকে কী হবে? এর মধ্যে ঢাকার হলিফ্যামিলি হাসপাতালে একটি পোস্ট খালি হলো। তখন দেশে (১৯৯২) ফিরে হলি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল হক জামাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। অধ্যাপক শহীদুল সাহেব, অধ্যাপক এস বি ডানা, মিহির কুমার দাশ আমার মৌখিক পরীক্ষা নিলেন। তারা বললেন, আপনি দ্রুত জয়েন করেন। কনসালটেন্ট মেডিসিন হিসেবে যোগ দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান, পরিচালক, স্টাফ, রোগীদের মধ্যে আমার একটু গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলো। সেখানে আমার ভালোই দিন কাটছিল। অনুশীলন, রোগী দেখা সব কিছুতেই নতুন ছন্দ ফিরে এলো। এরই মধ্যে পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) আমাকে কল করল। সেখানে অনেক প্রতিযোগিতা। অনেক প্রার্থী দরখাস্ত করেছে। মাত্র দুটো পোস্ট। তারা আমার পরীক্ষা নিল এবং আমি চান্স পেয়ে গেলাম। পিএসসি আমাকে পিজি হাসপাতালে নিয়োগ দিল।

 

পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) যোগ দিলেন কখন?

পিএসসি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বন্ধু-বান্ধবদের জিজ্ঞেস করলাম, কী করব? তারা বলল—এ তো সরকারি চাকরি। ঝামেলা। কোথায় কখন বদলি করে ঠিক নেই। অন্যদিকে হলি ফ্যামিলিতে স্থায়ী চাকরি। বদলি নেই। কিন্তু আমার মনে হলো পিজির চাকরিটা একটা অ্যাকাডেমিক পোস্ট। এখানে যদি ঢুকতে পারি আমার হাত দিয়ে কিছু ডাক্তার তৈরি হবে। ১৯৯৫ সালের জুন মাসে পিজি হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করলাম। পরে তো পিজি হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেল। আমি সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হয়ে গেলাম। বর্তমানে মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এরই মধ্যে ২০০৩ সালে লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান থেকে এফআরসিপি ডিগ্রি করেছি।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

আল্লাহর রহমতে জীবনে ব্যর্থ হয়েছি বলে মনে হয় না। কিছু সময় দেরিতে হলেও যা চেয়েছি সেটা পেয়েছি। আসলে চাহিদার তো শেষ নেই, তারপরও মনে হয় আর নিজস্ব কোনো চাহিদা নেই। এখন ব্যস্ত থাকি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের শিক্ষা ও জ্ঞান দান নিয়ে।

 

পরপর তিনবার মেডিসিন অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে দুবার মেডিসিন অনুষদের নির্বাচিত ডিন ছিলাম। গত সপ্তাহে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো ডিন নির্বাচিত হয়েছি। ইতিমধ্যে নতুন কয়েকটি বিভাগ চালু করেছি।

 

বাংলাদেশে চিকিৎসাবিষয়ক বই অপ্রতুল। আপনাকে পাইওনিয়র বলা যেতে পারে। চিকিৎসকদের মধ্যেও আগ্রহ কম।

ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে উপলব্ধি হলো এই জ্ঞান তো ধরে রাখা দরকার। তখন বই লেখার পরিকল্পনা করি। মেডিকেল বিষয়ে আমার ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে—১. Short case in Medical Practice., ২. Long case in Medical Practice. ৩. ECG in Medical Practice. ৪. Case history and data interpretation in Medical Practice. ৫. Radiology in Medical Practice. ৬. স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্বাচিত কলাম। বইগুলো প্রকাশ করেছে দিল্লির আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ELSIRBR. আমি চেয়েছি আমার অর্জিত জ্ঞানকে লিপিবদ্ধ করে যেতে। আমি যা শিখেছি এবং যা শেখাই তার একটা লিখিত রূপ দিয়ে তা স্থায়ীভাবে আমার উত্তরসূরিদের জন্য রেখে যেতে চাই। যেহেতু আমি একজন শিক্ষক, সেহেতু পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষক তার পরীক্ষার্থীর কাছে কী চান তা আমি ভালো বুঝি, তাই এ ব্যাপারগুলোই গুছিয়ে সহজবোধ্য করে শিক্ষার্থীদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমার বইয়ে। এটা তাদের জন্য একটি দিক-নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। ‘Short cases in clinical medicine’ বইটি ইউজিসি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশনে ২০১৩ সালে পুরস্কৃত হয়েছে। মৌলিক ও উদ্ভাবনীমূলক গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননা তারা দিয়েছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা আমার কলামগুলোর একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে ঢাকার অনন্যা প্রকাশনী। আমার বইগুলো ভারতীয় উপমহাদেশসহ ব্রিটেন, মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি টেক্স বুকস লিখছি।

 

দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমানোর ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ ভূমিকা ছিল।

এই শতাব্দীর শুরুর দিকে ডেঙ্গু জ্বরের খুব প্রকোপ হয়েছিল। তখন অনেক রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে পেরেছিলাম। মানুষের মধ্যে ভীতি ছিল ডেঙ্গু জ্বর হলে আর বাঁচে না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এক-দুজন ছাড়া সবাই ভালো হয়েছিল।

 

চিকিৎসক হিসেবে আপনি সবচেয়ে আনন্দ পান কিসে?

কোনো রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারলে খুব ভালো লাগে। আসলে মানুষের সেবাই আমার স্বপ্ন।

 

আপনার আইকন কে ছিলেন?

আসলে একজন তো নয়, আমার সব শিক্ষককেই আমি আমার অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে মনে করি। আমি যার সঙ্গেই কাজ করেছি তার কাছ থেকেই কিছু শিখতে চেষ্টা করেছি। এ ক্ষেত্রে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত নুরুল ইসলাম স্যার, অধ্যাপক মনিরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এম. এন. আলম, অধ্যাপক এম. এ কাদরী, অধ্যাপক এম এ জামান, অধ্যাপক এম. জি. এম চৌধুরীর নাম আলাদা করে না বললেই নয়।

 

আমাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে কিছু নেতিবাচক কথা প্রচলিত আছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

আসলে নেতিবাচক ধারণাগুলো সব ডাক্তার সম্পর্কে নয়। যারা সত্যিই দায়বদ্ধতা নিয়ে রোগী দেখেন, খোঁজ নিয়ে দেখবেন তাদের সম্পর্কে সবার ধারণাই ভালো। রোগীদের অধিকাংশেরই অভিযোগ হচ্ছে, ডাক্তাররা কথা বলেন না, রোগীকে পরীক্ষা করে দেখেন না ইত্যাদি। আমরা ডাক্তাররা চাইলেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারি। তা ছাড়া প্রশাসনিক বিষয়গুলোতেও রোগীদের যেসব অভিযোগ আসে যেমন— বিছানা খারাপ, হসপিটাল অপরিষ্কার, কর্মচারীর অভাব; এ ব্যাপারে আসলে আমাদের করণীয় খুব বেশি কিছু নেই। এ ব্যাপারটা দেখাশোনা করছে প্রশাসন। অথচ রোগীরা এটি বুঝতে চান না। তারা ডাক্তারদেরই দায়ী মনে করেন। মূলত চিকিৎসা সেবাটা কিন্তু একটি টিম ওয়ার্ক। ডাক্তারের সঙ্গে নার্স, টেকনিশিয়ান, এমএলএসএস সবাই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সেবা উন্নত করতে হলে পুরো টিমকেই ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের নিজেদেরও মানের উন্নয়ন করতে হবে। সেটা একাডেমিক এবং নৈতিক দিক থেকেও।

 

দেশের চিকিৎসা খাতকে আরও উন্নতি করতে আপনার পরামর্শ কী?

আমাদেরকে, মেডিকেল কলেজগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গুণগত চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ও সেবার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। সেজন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন এখন অতীব জরুরি। তা ছাড়া যত্রতত্র বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন, ভালো চিকিৎসক তৈরির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

আপনার অবসর কীভাবে কাটে?

অবসরে পড়াশোনা করি স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালিখি করি। রবীন্দ্রসংগীত শুনি।

 

আপনার পরিবারের কথা জানতে চাই।

১৯৮৩ সালে বিয়ে করি। আমার স্ত্রী মাহমুদা বেগম একটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। আমার ছেলে ডা. সাদি আবদুল্লাহ ও মেয়ে ডা. সাদিয়া সাবা।

 

আপনাকে ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ

সর্বশেষ খবর