শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনো দাঁড়িয়ে আছি

মুহাম্মদ সামাদ

এখনো দাঁড়িয়ে আছি

অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন যেকোনো বাঙালি কিশোর-তরুণের মতো সরিষাবাড়ী রানী দিনমণি হাইস্কুলের আমরা কয়েক বন্ধু মিল দিয়ে কবিতা লেখার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের লেখা প্রকাশের একমাত্র জায়গা ছিল স্কুলের দেয়ালপত্রিকা আর শহীদ দিবসে চাঁদা তুলে (এবং প্রতিদিনের টিফিনের দুই আনা বাঁচিয়ে) অ. আ. ক. খ. প্রচ্ছদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই কিংবা শহীদ স্মৃতি অমর হোক শিরোনামের নিউজপ্রিন্টের ষোলো অথবা আট পৃষ্ঠার স্মরণিকা। তা ছাড়া ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমার আঞ্চলিক উচ্চারণে কবিতা আবৃত্তি করে অগ্নিবীণা, সোনার তরী, নকশিকাঁথার মাঠ পুরস্কার পাচ্ছিলাম; নববর্ষ, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী আর নানা পালা-পার্বণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রতিদিনই ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম। স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েই এসব অকাজে অসন্তুষ্ট আর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন মা-বাবারা। ইতিমধ্যে আমাদের থানায় কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলো। ১৯৭৪ সালে আমাদের সেই পাড়াগাঁর কলেজে বাংলার অধ্যাপক আলাউদ্দিন খানের কাছ থেকে কবি শামসুর রাহমানের প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, নিজ বাসভূমে এবং এক ধরনের অহংকার কাব্যগ্রন্থ চারটি পড়ার দুর্লভ সুযোগ হয়। সেই সময়েই কবি নির্মলেন্দু গুণের প্রেমাংশুর রক্ত চাই এবং দাউদ হায়দারের জন্মই আমার আজন্ম পাপ কবিতার বই দুটি পড়া হয়ে যায়। রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ বলয় আর সুকান্ত চট্টাচার্যের বাইরে নতুন কবিতা আর কবিদের কথা সত্যিকার অর্থে আমি সেই থেকেই জানতে শুরু করি। নির্মলেন্দু গুণ ও দাউদের কবিতা তুলনামূলক বিচারে সহজবোধ্য হলেও শামসুর রাহমানের অধিকাংশ কবিতার স্বাদ-গ্রহণের সাধ্য তখন আমার ছিল না। তবুও, ওই বয়সেই আমার নিজের সমস্যাজর্জর জীবনে আশা-জাগানিয়া দুর্মর দর্শন আর অপরিসীম আত্মশক্তি খুঁজে পেয়েছিলাম শামসুর রাহমানের কবিতার একটি পঙিক্ততে—‘এখনো দাঁড়িয়ে আছি, এ আমার এক ধরনের অহংকার।’

সদ্য-স্বাধীন নতুন বাংলাদেশে কবিতার জয়জয়কার বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গনে ভরা জোয়ারের আবাহন। হঠাৎ পঁচাত্তরের আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আবহমান বাঙালি-সংস্কৃতিতে এলো ভাটার টান। স্তব্ধ-নিশ্চল বাংলাদেশের সেই যুগসন্ধিক্ষণে, ছিয়াত্তর সালে, গ্রাম ছেড়ে পড়তে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা এসে, শামসুর রাহমানের বন্দী শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি, আমি অনাহারী এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তার কবিতা পড়ে প্রতিদিন শিহরিত ও সমৃদ্ধ হচ্ছি। টানাপড়েনের মধ্যেও নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, আবুল হাসান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শহীদ কাদরী, আল মাহমুদের কবিতার বই সংগ্রহ করছি, পড়ছি। অনুমতি নিয়ে এত বড় কবি আর সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করা যায়— সদ্য গ্রাম থেকে রাজনীতিতে আসা আমার মতো এক তরুণের পক্ষে সেটা ভাবা ছিল দুঃসাধ্য। তাই, সাতাত্তরের শীতকালে দুপুরের দিকে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় গিয়ে দূর থেকে কবি শামসুর রাহমানকে দেখে আসি। তিনি নম্র-সম্র পা ফেলে ফেলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হেঁটে আসছিলেন। আমি কিয়-দ্দুর থেকে তাকে দেখেছি আর অভিভূত হয়েছি।

একাশি-বিরাশি সাল থেকে আমি হাকিম চত্বরের আড্ডায় নিয়মিত যোগ দিই। বাংলা বিভাগের কৃতিছাত্র কবিবন্ধু তুষার দাশ একদিন এক নির্মোহ তরুণের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। সাবের— মইনুল আহসান সাবের, কবি আহসান হাবীবের ছেলে। আহসান হাবীবের কবিতা মুখস্থ করে স্কুলের ক্লাস ডিঙিয়েছি। স্মৃতিতে বিদ্যুৎ খেলে গেল : ‘আমাদের গ্রামখানী ছবির মতন/মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন’। অতঃপর তুষার, ফরিদ কবির, মোহাম্মদ সাদিকের সঙ্গে দৈনিক বাংলার একটি কুঠুরিতে কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে পরিচিত হই। শুভ্র কেশ, চোখে কালো ফ্রেমের বাইফোকাল চশমা আর আঙুলের ফাঁকে সিগারেট নিয়ে কাঠের চেয়ারে বসা কোনো শীর্ণকায় সন্ত যেন। আমাদের চা খেতে বললেন। আমি বললাম, চা খাই না। তুষার বলল, হাবীব ভাই বলেছেন, খান মিয়া। গ্রাম থেকে এসেছেন তো, শরীর থেকে কাদা আর ছাড়াতে পারলেন না। আমি চা খেলাম। হাবীব ভাইয়ের হাত দিয়ে ‘খোঁপা খুললেই’ শিরোনামে আমার একটি কবিতা দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে দু-একবার শামসুর রাহমানের কামরায় গেছি। দেখেছি, আড্ডার মধ্যমণি হয়েও তিনি কথা বলছেন কম। ১৯৮৫ সালের জুলাই মাসে লিভার সিরোসিসে হাবীব ভাইয়ের মৃত্যু হয়। দুপুরের দিকে তার মরদেহ দৈনিক বাংলায় আনা হয়। কর্মস্থলের অপরিসর প্রাঙ্গণে কবি শামসুর রাহমানসহ সাংবাদিক-সাহিত্যিক-ভক্ত-অনুরাগীরা তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আমি প্রথম দিনের মতো সেদিনও কান্তিমান শামসুর রাহমানকে দেখেছি। নিশ্চুপ। বিষণ্ন। শোকার্ত শামসুর রাহমান।

এরই মধ্যে তুষারের আন্তরিক আগ্রহে ফরিদ কবির, মোহাম্মদ সাদিক এবং আমি বিচিত্রায় আড্ডা দিতে শুরু করি। বিচিত্রায় দু-একটা কবিতা ছাপানোর লোভও দেখিয়েছিল তুষার। ‘তৈলচিত্র’ শিরোনামের আমার একটি কবিতা ছেপেছিলেন রাহমান ভাই। হঠাৎ একসময় তাকে বিচিত্রার সম্পাদক থেকে দায়-দায়িত্বহীন প্রধান সম্পাদক (?) করা হয়। আড্ডা দেওয়া ছাড়া তেমন কাজ নেই। তিনি এহেন অবস্থাকে বলেছিলেন— দে কিকড মি আপ। প্রথম প্রথম ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল যে, শামসুর রাহমানের সামনে বসে কথা বলছি। আমি তখন জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতায় ঢুকেছি। সাদিক সচিবালয়ে কাজ করে। আমরা দুই বন্ধুই আমাদের সরকারি বাসা গ্রিন রোড অফিসার্স হোস্টেলে থাকি। মুখোমুখি দুই বিল্ডিংয়ে। অল্পদিনের মধ্যে রাহমান ভাইয়ের তল্লাবাগের বাসায় আমাদের প্রবেশাধিকার ঘটে। প্রথম প্রথম ছুটির দিনে। অতঃপর সকাল দুপুর বিকেল রাত— যখন ইচ্ছে তখন। আমরা তার সঙ্গলাভের আসক্তিতে পড়ে যাই। রাহমান ভাইও তাই। দেখা গেল দু-চারদিন বাসায় না গিয়ে আমরা বিচিত্রায় গেছি— রাহমান ভাই জিজ্ঞেস করতেন, বাসায় আসেন না কেন? রাতে আড্ডা দিয়ে তুষার আর ফরিদ হরহামেশাই আমার বাসায় থেকে যেত। ফরিদের অনুজ সাজ্জাদ শরীফ আসত মাঝে মধ্যে। আমাদের একটা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল— বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন রোড অফিসার্স হোস্টেল থেকে পরদিন শুক্রবার দিনভর আড্ডায় মেতে থাকতাম রাহমান ভাইয়ের তল্লাবাগের বাসায়। এ আড্ডায় রাহমান ভাইয়ের দুই বন্ধু— কথাসাহিত্যিক রশীদ করীম ও কবি কায়সুল হককে আমার খুব ভালো লাগত। আড্ডার প্রধান বিষয় ছিল নানা দেশের কবি ও কবিতা। শামসুর রাহমানের প্রকাশিত কিংবা সদ্যরচিত কোনো কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় মেতেছি আমরা। তার কবিতার প্রশংসা করলে বলতেন— আরে না, এসব কিছুই হয়নি। জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে রাহমান ভাইয়ের সাক্ষাতের বর্ণনা আর সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘোড়ার গোশত ভক্ষণের গল্প আমি কখনো ভুলতে পারি না। কিছুক্ষণ পরপর খাবার আসত। আদি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শামসুর রাহমানের প্রিয় খাবার বাখরখানি আর চা-বিস্কুট-মিষ্টি-ফলমূল ইত্যাদি। তল্লাবাগের বাসায় কবিকন্যা, তখনকার বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সেবা আমাদের অনেক খাইয়েছে। এই কিছুদিন আগেও সেবার কথা তুললে রাহমান ভাই বলছিলেন— আমার এই মেয়েটা খুব ভালো!

দেখতে দেখতে দেশে সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করল। কবি-শিল্পী-সাংবাদিক-সংস্কৃতিকর্মীরা সোচ্চার হতে থাকলেন সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে। এই সময়ে শামসুর রাহমানের ‘দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে’, ‘একটি মোনাজাতের খসড়া’, ‘ধন্য সেই পুরুষ’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’ প্রভৃতি কবিতা বাংলাদেশের সামরিক স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকদের দারুণভাবে প্রাণিত ও শাণিত করে। এই একই সময়ে ১৯৮৭ সালে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ তার দুঃশাসনের গায়ে মানবিক আভরণ চাপানোর অসৎ উদ্দেশ্যে আয়োজন করেন এশীয় কবিতা-উৎসবের। প্রতিবাদে জ্বলে উঠলো তরুণ কবিরা। বিনয়ী-লাজুক-শান্ত শামসুর রাহমান অসীম সাহসিকতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন জাতীয় কবিতা-উৎসব আয়োজনে। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের রোষানলে পড়ে চাকরি হারাতে হয় তাকে। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতির গুরু দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন ধরে। শামসুর রাহমানের ডাকে সারা বাংলার নবীন-প্রবীণ কবিরা সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়ক-মোহনা থেকে আলোর মিছিল ছড়িয়ে দেন দেশের প্রতিটি প্রান্তে। স্তিমিতপ্রায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নতুন গতি পায়। জাতির সেই ঘোর সংকটকালে কবি-শিল্পী, সাংবাদিক-রাজনীতিক, ছাত্র-শিক্ষক—সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের বন্যায় উছলে উঠেছিল জাতীয় কবিতা-উৎসব। শামসুর রাহমানের মানবিক ও দয়ার্দ্র হৃদয়ের পরিচয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়েছি। ছেলে ফাইয়াজের বিয়ের পর থেকে মাতৃসম-কন্যাসম পুত্রবধূ টিয়াই ছিল রাহমান ভাইয়ের চালিকাশক্তি। কোথায় কোন অনুষ্ঠানে যাবেন-না-যাবেন, কী খাবেন, ওষুধপত্র, ঘুম বা জেগে ওঠা—সব কিছুতেই টিয়া। মমতাময়ী এই টিয়ার তত্ত্বাবধানে থেকে, জীবন-সায়াহ্নে এসেও মানুষের প্রতি তাঁর অসীম মমত্ববোধ আর গভীর ভালোবাসা ছিল অটুট। সারা জীবন কত মানুষের যে উপকার করেছেন, তার হিসাব নেই; কত মানুষের চাকরির জন্য, চিকিৎসার জন্য যে উদ্বেগাকুল হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। একবার দিল্লিতে আমার একটি বৃত্তির ফাইল আটকে গেলে, শোনামাত্র তা ছাড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্ব-উদ্যোগে চিঠি লিখেছিলেন তখনকার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মুচকুন্দ দুবেকে। মুচকুন্দ দুবের ফিরতি চিঠির সম্বোধনে—‘গু ফবধৎ কবি’ এখনো আমার চোখে জ্বলজ্বল করে। আমার মতো সহায়হীন, সম্বলহীন, অতি নগণ্য নিধিরাম সর্দারকেও তিনি সময়ে-অসময়ে নানা দায়িত্ব দিয়েছেন। কোনোটা পেরেছি, কোনোটা পারিনি। সকাল সাতটা-সোয়া সাতটায় রাহমান ভাইয়ের ফোন মানেই কারোর জন্য কিছু করার বিনম্র তাগিদ। এই অপার স্নেহভরপুর ফোনের একদিনের কথা বলি : ‘সামাদ, শামসুর রাহমান।’ ‘হ্যাঁ, রাহমান ভাই, ক্যামন আছেন?’ ‘ভালো না ভাই, শোনো, শুনলাম মহাদেব নাকি অসুস্থ, ওর জন্যে কিছু করো...।’ সাহিত্য-সংস্কৃতি-বুদ্ধিচর্চার জগতে আমার দেখা এমন পরোপকারীর জুড়ি শুধু আনিস স্যার।

ইতিপূর্বে শামসুর রাহমান জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হলে শেখ হাসিনা তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে সুস্থ করে এনেছিলেন। এবার শামসুর রাহমান অসুস্থ হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একদিন প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁর কাছে ছিলাম। আমি তাঁর হাত ধরে বসেছিলাম। সেদিন কবি জাহিদুল হকও ছিলেন। দেখে মনে হয়নি রাহমান ভাই এত দ্রুত চলে যাবেন। বলতে গেলে, সেই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। তিনি এরপর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ, আসলাম সানী, নিপু, দিলদার এবং আমি প্রায় প্রতিদিনই গেছি। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা-নাটক আমি আজো মেনে নিতে পারিনি। রাহমান ভাইয়ের চোখের অবস্থা তখন খারাপ হতে শুরু করেছে। সেবার হলদিয়া উৎসবের সময় কলকাতার নন্দনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আলাপচারিতায় তিনি যেকোনো চিকিৎসার প্রয়োজনে শামসুর রাহমানকে ভারতে চলে আসতে বলেছিলেন। অথচ শামসুর রাহমান—আমাদের প্রধান কবি, আমি বলব অচিকিৎসায়, বড় অনাদরে চলে গেলেন। শামসুর রাহমান আমাদের কবিতার আধুনিক কাব্যভাষার নির্মাতা, লীলাময়ী কাব্যদেহের মহৎ শিল্পী এবং কবিতার সঙ্গে জনসমাজের মেলবন্ধনের অগ্রদূত। মানবজীবনের প্রেম-বিরহ, আমাদের ভাষা সংগ্রাম, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক স্বৈরাচার, মৌলবাদ বা সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সব সংগ্রাম, আর বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা-কথা, সব আনন্দ-বেদনার শিল্প সুষমামণ্ডিত প্রতিচ্ছবি শামসুর রাহমানের কবিতা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে থাকবে অনন্তকাল। কোনো রাষ্ট্রীয় তকমা-পদক আর নিছক শোক-প্রকাশে নয়, মানুষের অনাবিল ভালোবাসা আর কবিতাতেই তাঁর জয়। শামসুর রাহমানের স্নিগ্ধ-ক্ষিপ্র আলোকধারায় প্রতিদিন সিক্ত হবো আমরা। তাই,— ‘এখনো দাঁড়িয়ে আছি’।

জনান্তিকে বলি, কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে কবিতা পড়েছি, বক্তৃতা করেছি, প্রায় আড়াই দশকের পরিচয়ে আড়াইশোবারের বেশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে গেছি, আবার বাসায় পৌঁছে দিয়েছি। অনেক সময় টিয়া বলেছে— সামাদ চাচা, আপনার হাতে আব্বুকে দিলে আমি নিশ্চিন্ত থাকি। আপনি এসে নিয়ে যাবেন। রাহমান ভাই নেই, তাঁর কবিতা আছে। কবিতা দিয়ে কি ভালোবাসার অভাব পূরণ হয়?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর