শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বই পরিচিতি

বাছাই মুখ ও মুখোশ

বাছাই মুখ ও মুখোশ

দেশের পত্র-পত্রিকার জগতে মাসুক হেলাল অত্যন্ত পরিচিত নাম। পোর্ট্রেট আঁকার জন্য বিখ্যাত। বইয়ের কভার ও ইলাস্ট্রেশনেও সুনাম রয়েছে তার। পেশাগত ব্যস্ততায় তার সময় অতিবাহিত হয়। বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলোর শিল্পী। এত ব্যস্ততার মধ্যেও মাঝে মধ্যে লেখাজোকার দিকে ঝুঁকে যায় মাসুক। এই লেখালেখির সাম্প্রতিক একপর্যায়ে ‘পথের মানুষ’দের নিয়ে অনেক কাজ করেছে। প্রথম আলোর ‘ঢাকায় থাকি’র পাতায় ‘মুখ ও মুখোশ’ নামে ধারাবাহিকতাভাবে ও লিখেছে এবং এঁকেছে। এগুলো পাঠকপ্রিয়তা বা বলা যায় জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এখন পুস্তকাকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকাশকের চাপও রয়েছে।

 

আমি মাসুকের বৃহৎ পাণ্ডুলিপিটি দেখে ও পড়ে অভিভূত। শুধু যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক মানুষকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিখেছে, তা নয়, প্রত্যেকের প্রতিকৃতিও এঁকেছে। পুরো ব্যাপারটিই চমত্কৃত হওয়ার মতো। পথে-ঘাটে দেখা মানুষদের কাছাকাছি যাওয়া, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার বৃত্তান্ত শোনা এবং লেখার মতো বিভিন্ন দিককে লেখাতে উপস্থাপন একটি দুরূহ কাজ বলেই আমার মনে হয়। মাসুক এসবকে সফলভাবে উপস্থাপন করেছে তার শিল্পীসুলভ অনুভূতির মিশ্রণ ঘটিয়ে। ছোট ছোট উপাখ্যান কিন্তু খুবই হৃদয়গ্রাহী। প্রকাশের ধরনটি তার একান্তই নিজস্ব। বোঝা যায়, পুরো ব্যাপারটাই তার ইমোশনাল ভাবনা থেকে উৎসারিত। রিপোর্টের মতো নয়। প্রতিটি লেখার শিরোনামে লেখার বিষয়, অর্থাৎ তার বাছাই করা পছন্দের মানুষগুলোর নামও উল্লেখ আছে। শিরোনামও আকর্ষণীয়। যেমন— মেসিয়ার আবদুস সালাম, কাসিদা গায়ক রেজা হাবিব, রঞ্জুর অন্য জীবন, মালেক মুন্সীর লুঙ্গি, হাঁড়ি-পাতিলের রওশন আলী, কবীরের ভাগ্য বর্ণনা, রাশেদ রানার এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, লিঙ্গ-প্রতিবন্ধী ময়না ইত্যাদি।

এসব মানুষের জীবন ধারণ, জীবনযুদ্ধ, জীবনাচার, অর্থাৎ যা কিছু মাসুককে লিখতে প্রলুব্ধ করেছে তার সবই জীবনভিত্তিক। একেক মানুষ একেকভাবে বাঁচার চেষ্টায় নিয়োজিত। বেশিরভাগই দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করে। কিন্তু তার মধ্যে নিপতিত হলেও অনেকেই নিজ নিজ কাজে অত্যন্ত মনোযোগী, সচল। গভীরভাবে নিজের অবস্থাকে নিয়ে সচেতন বসবাস। কেউ কেউ দুঃখবিলাসী, আবার কেউবা টানাপড়েনের মধ্যে থেকে রস নিংড়ে বাঁচতে চায়, হতাশাকে প্রশ্রয় দেয় না। তার মানে মাসুক তেমন মানুষদেরই বাছাই করেছে, যাদের লেখায় উপস্থিত করা যায়। তার এই চরিত্রগুলো বানোয়াট গল্পের নয়, বাস্তবের। সংক্ষেপে লেখা। সুপাঠ্য। সঙ্গে সব চরিত্রের প্রতিকৃতিগুলো পুস্তকটিকে আরও বাঙ্ময় করতে সহায়ক হয়েছে।

ছবিগুলো পেনসিলে আঁকা। স্কেচধর্মী। অভিব্যক্তিকে ধরে রাখার চেষ্টা রয়েছে। মাসুকের দেখার চোখ নিশ্চয়ই প্রশংসা পাবে। তার কথায় জানলাম প্রতিকৃতি সরাসরি দেখে আঁকা। ভালো লেগেছে শুনে যে, প্রায় সবাইকেই মডেল হওয়ার জন্য তাদের সময়ের দামটুকু দিতে হয়েছে। অনেকে আবার ছবি দেখে চমত্কৃত হয়ে বিনিময়টুকু বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যানও করেছে। মোট কথা, এসব চরিত্র চিত্রণে মাসুক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লিখেছে এবং ছবি এঁকেছে। তার এই প্রচেষ্টা যে নেহাত একটি কাজ সমাধা করার মতো কিছু নয় বলে আমার ধারণা। ব্যাপারটিকে সৃষ্টিশীল আর সংবেদনশীলতা মিশিয়ে করা। তাই আমার ধারণা, পুস্তকটি পাঠকদের প্রশংসাধন্য হবে। তাহলেই মাসুকের শ্রম সার্থক হবে।

 

রফিকুন নবী

সূত্র : বাছাই মুখ ও মুখোশ, আঁকা ও লেখা মাসুক হেলাল প্রকাশক : পারিজাত প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৪২, মূল্য ৫০০ টাকা প্রচ্ছদ : আফজাল হোসেন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর