শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

কম্বোডিয়ার বিলুপ্ত নগর আংকর থম

মঈনুস সুলতান

কম্বোডিয়ার বিলুপ্ত নগর আংকর থম

নগরীটি প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। খেমার সম্রাজ্য বা কম্বোডিয়ার এক কালের এ রাজধানী শহরটির নাম ‘আংকর থম’। যার সোজা বঙ্গানুবাদ হচ্ছে ‘মহান নগরী’। নগরীটির প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে মনে হয় নামকরণটি নিতান্ত মিথ্যা বাগাড়ম্বর নয়। এখানকার চারদিকে এককালের প্রশস্ত গড়খাই—যা বিবর্তিত হয়ে অধুনা রূপান্তরিত হয়েছে ধানক্ষেতে। একটি দীর্ঘ পাথুরে পুল দিয়ে মধ্যযুগের এ খেমার নগরীটি মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। পুলের দু’পাশে সারি দিয়ে পাহারারত পাথরের সুর ও অসুর সম্প্রদায়। এখানে ফণা তুলে শরীর মোচড়ায় পাষাণের অনন্ত নাগ।

নগরীর সিংহ দুয়ারটি—যেহেতু কোনো সিংহ মূর্তি নেই, তাই বলা উচিত হস্তি দুয়ারটি আকারে তেমন বৃহৎ না, তবে মাত্র ৭৫ ফুট উঁচু। তিন মাথাওয়ালা একটি পৌরাণিক হাতির শরীরকে কারিগরি দক্ষতায় করা হয়েছে দৌউড়ীর খিলান। মনে হয় শুড় দিয়ে দেববাহন এ জন্তুটি একটি পদ্মফুল তুলছে। তার ওপরে বসে আছেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র। একা নন তিনি, দুপাশে আছে দুই অপ্সরা এবং আছে স্বর্গের রাজাধিরাজের হাতে চিরায়ত বজ্র। পুরনো দিনের ভাস্করের কারিকুরি কিন্তু এখানেই শেষ নয়। দুয়ার চূড়ায় পাষাণ খুদে নির্মাণ করা হয়েছে চারদিক পানে চেয়ে থাকা চার মনুষ্য-মস্তক। দেউড়িখানির বয়স হয়েছে অষ্ট শতাব্দী। পাহারারত দেবতা ও দানবের চোখের জ্যোতি হয়ে এসেছে ক্ষীণ। তারপরও এক কালের এ রাজকীয় নগরে প্রবেশের সময় শিষ্টাচারে কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে গেল কি না ভেবে শরীর শিউরে ওঠে।

ট্যাক্সিতে চেপে মূল প্রাসাদ প্রাঙ্গণের দিকে চলি। আংকর থম নগরীটি সম্পর্কে আমার প্রথম ধারণা জন্মে প্রায় বছর তিনেক আগে। কম্বোডিয়ার বর্তমান রাজধানী নমপেনের বিমান বন্দরে আটকা পড়েছিলাম ঘণ্টা ছয়েকের জন্য। বিমানের কল বিগড়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে কি আর করা। ডিউটি ফ্রি শপ্ থেকে চড়া মূল্যে ক্রয় করেছিলাম আংকর থম নগরী ও খেমার সভ্যতা নিয়ে রচিত একখানা পুরাতাত্ত্বিক উপাত্তে ভরপুর গ্রন্থ। পুস্তকটিতে মধ্যযুগের এক চীনা রাজদূতের খেমার রাজ্যে ভ্রমণের বিস্তারিত বয়ান উদ্ধৃত আছে। দূত জু ডাগুয়ান আংকর থমের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সুউচ্চ স্বর্ণালী মিনার, হাতির দাঁতের কারুকাজ করা রাজকীয় পুল এবং প্রাসাদ দ্বারে প্রহরারত দুটি চন্দ্রকান্ত মণির জ্বলজ্বলে চোখওয়ালা সিংহের কথা বিপুল তারিফের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ট্যাক্সি চলছে মস্ত মস্ত সব শতাব্দী প্রাচীন গাছে ছায়াময় রাজ সড়ক দিয়ে। পথের দুই পাশে ধূসর বেলেপাথরে তৈরি বিপুল আকৃতির খানিক ভগ্ন স্থাপত্যরাজি। চীনা রাজদূতের বর্ণিত স্বর্ণময় কারুকাজ বোধকরি সভ্যতার সোনালি যুগের স্মৃতির মতোই এতদিনে হয়েছে বিলীন; আমি সে সবের তেমন কোনো নিশানা দেখতে পাই না।

ট্যাক্সি থামতেই যা চোখে পড়ে তা হলো কৌণিক, অজস্র স্তরে সুবিন্যস্ত, দেয়ালগাত্রে রিলিফে খোদিত চিত্রময় বিপুল এক মন্দির। আমি মন্দিরটির দিকে পা বাড়াতেই চারদিক থেকে এসে আমাকে ঘিরে ধরে খুদে শিশু ফেরিওয়ালার দল। ওদের ঠেলে অতি কষ্টে এগুতে হয়। এদের কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছে কাঠের তৈরি একখানা দৌড়ের নাও, কারও হাতে পসরা হিসেবে আছে বেতের তৈরি সারস পাখি—তার ঠোঁটে মাছ। কোনো শিশুর এক হাতে ফিল্ম আরেক হাতে পিতলের তৈরি অপ্সরা। অতি ছোট্ট বছর তিনেকের একটি মেয়ে ভারি আদুরে গলায় পরিষ্কার ইংরেজিতে বলে, ‘যখন ক্লান্ত হবে মিস্টার, তখন এসে আমার কাছ থেকে এক বোতল পানি কিনো কিন্তু।’ এই শিশু শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের বিমুখ করতে কষ্ট হয়।

ঠিক এ সময় চোখাচুখি হয় এক কিশোরী মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটিও ফেরিওয়ালা, তার কাঁধের ঝোলায় এক রাশ ‘সরং’ বা রংচঙে লুঙ্গি। মেয়েটি আমার নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে বেজায় আমোদ পাচ্ছিল। হঠাৎ এগিয়ে এসে সে খুদে ফেরি-দস্যুদের খেমার ভাষায় খানিক ধমক দিয়ে—খানিক ঠেলাঠেলি করে সরিয়ে দেয়। শিশু শ্রমিকরা সম্পূর্ণ তিরোহিত হয় না বটে; তবে তারা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখতে থাকে। মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাকে কি বেয়ন মন্দিরে নিয়ে যাব?’ আমি তত্ক্ষণাৎ রাজি হয়ে তার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করি। খুদে ফেরি-দস্যুরা কিঞ্চিৎ দূরত্ব রেখে আমাদের পিছু পিছু চলে। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু ধুপকাঠি বিক্রি করছে। অতি নিচু পাথরের চৌকাঠ পার হয়ে আমরা অলিন্দময় প্রায় অন্ধকার বারান্দায় এসে দাঁড়াই। মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, ‘এ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতার নাম তুমি জান কি?’ আমি জবাবে বলি, ‘নাম জানি না, তবে আন্দাজ করি ওই ফেরিশিশুদের কোনো এক পূর্বপুরুষ এ মন্দির তৈরি করেছিলেন।’ মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে বলে, ‘ও নো, ইট ওয়াজ মাইটি কিং জয়বর্মন হু বিল্ড দিস্ টেম্পোল। ইট টুক্ টুয়েলভ্ ইয়ারস টু বিল্ড দ্য হোল কমপ্লেক্স।’ মন্দিরটি তৈরি করতে সত্যি কি রাজা জয়বর্মনের বারো বছর লেগেছিল? আমি মেয়েটির মুখে এ হেন তথ্যবহুল ইংরেজি শুনে একটু অবাক হই। জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি এত কিছু জানো কীভাবে?’ সে জবাব দেয়, ‘আংকর থম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হওয়ার পর ইউনেস্কো একটি ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে। আমি ওই ট্রেনিং থেকে এসব শিখি। ইচ্ছা ছিল ট্যুর গাইড হব। কিন্তু কেউ আমাকে নিতে চায় না।’ আমি তার জবাবে একটু বিষণ্নতা শুনি। জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কী বিক্রি করো?’ বলা মাত্রই সে ঝোলা থেকে বের করে এক গাদা ‘সরং’ বা লুঙ্গি। লুঙ্গিগুলো রঙিন, সুতির জমিনে মধ্যে মধ্যে ছাপচিত্র আঁকা। সে আমাকে একখানা লুঙ্গি কিনতে খুব করে ধরে। বলে, ‘তোমার মেয়ে-বন্ধুর জন্য একখানা সরং কিনে নিয়ে যাও।’ মনে মনে চটে উঠে বলি, ‘আমার কোনো মেয়ে-বন্ধু নেই।’ মেয়েটি এতে নিরুৎসাহিত হয় না। খিলখিল করে হেসে বলে, ‘আমি তোমার মেয়ে-বন্ধু হতে পারি, শুধু একখানা সরং কিনে দাও।’ আমার এবার মেজাজ তেঁতে ওঠে। আপদ বিদায় করার জন্য একটি সরংয়ের দাম জিজ্ঞেস করি। সে ‘দু ডলার’ বলতেই আমি তাকে দুটি ডলারের নোট দিয়ে রূঢ়ভাবে দূর হতে বলি। আমার ঈষৎ অশোভন আচরণে মেয়েটি একটু দমে যায়। গলার চেনে একটি আঙ্গুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে আমার দিকে দুঃখী দুঃখী ভাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে—অবশেষে সে ধীরে ধীরে চলে যায়।

আমি এবার বেয়ন মন্দিরটি ভালো করে দেখার সুযোগ পাই। এ দেবালয়কে একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে দেখার জন্য চলে যাই খোলামেলা আঙিনায়। নানা উচ্চতায় সারি সারি সুবিন্যস্ত পাথরের স্তূপ সৃষ্টি করছে কৃত্রিম পাহাড়ের অনুকৃতি। প্রতিটি স্তূপের চূড়ায় নানা দিক নিশানা করে পাষাণে খোদা হয়েছে অবলোকিতেশ্বরের স্ন্নান শান্ত হাসিমুখ। একটু মগ্ন হয়ে তাকালে মনে হয়, মন্দিরটির পাষাণে গড়া অজস্র চোখ যেন অবলোকন করছে দিগন্ত, আকাশ ও প্রকৃতি। আমার নিমগ্নতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ‘সরং’ বিক্রেতা মেয়েটি আবার এসে উদয় হয়। এবার তার বেশভুষা একটু অন্য রকম। একটু খেয়াল করে বুঝতে পারি—সে তার আগের আধ ময়লা ‘সরংটি’ বদলে একটি নতুন সরং পরে নিয়েছে। চোখেও বুলিয়ে নিয়েছে সস্তা আই-শেড্। আমি জিজ্ঞেস না করে পারি না, ‘তুমি এর মাঝে চেঞ্জ করলে কোথায়?’ মন্দিরের অজস্র প্রায় অন্ধকার অলিন্দের একটি দেখিয়ে বলে, ‘ওখানে গিয়ে শুধু তোমার দেওয়া সরংটি পরে আসলাম।’ জবাব শুনে আমার বাকরুদ্ধ হওয়ার দশা হয়। সে কিন্তু সাবলীলভাবে বলে, ‘মিস্টার, এখানে আমার একটি ছবি তুলে দেবে কী?’ সাতপাঁচ ভেবে অবশেষে অনুরোধটি রাখি। ক্লিক্ শেষ হতেই সে ঠোঁট ঈষৎ ফুলিয়ে বলে, ‘আমার নাম মিস্ কিমেনা, সবাই আমাকে কিম বলে। তোমাকে আংকর থমের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখাতে পারি, তবে তুমি না চাইলে আমি কিন্তু এখনই চলে যাচ্ছি।’ বলেই সে সত্যি সত্যি যেতে উদ্যত হয়। আমি  পেছন থেকে তার সদ্য পরা সরংয়ে এক ঝাঁক অস্পরার ছাপচিত্রকে তরঙ্গায়িত হতে দেখি। দৃশ্যটি আমাকে এতই আকৃষ্ট করে যে—কোনোরূপ ভাবনা-চিন্তা না করেই বলি, ‘কিম, তোমার যাওয়ার দরকার নেই। আমাকে তুমি এ এলাকাটি একটু ঘুরিয়ে দেখালে খুব খুশি হব।’

সে চকিতে ঘুরে আমার দিকে তাকায়। আমরা চলে আসি আরেকটি মন্দিরের প্রাঙ্গণে। জাপানের কারিগরি সহায়তায় এখানে পুনঃসংস্কারের কাজ চলছে। আমরা গড়খাইয়ের ওপরে ঝুলন্ত পুল ধরে হাঁটি। মূল আঙিনার প্রবেশ মুখের দুদিকে দুটি চতুষ্কোণ বাঁধানো পদ্মপুকুর। আমরা ভিতরে ঢুকে অলিন্দ থেকে অলিন্দে হেঁটে বেড়াই। কিম তার প্রায় সাবলিল ইংরেজিতে দেয়ালচিত্রের মর্মার্থ বুঝাতে থাকে। আমরা একটি বিপুল আকৃতির পাথরের লিঙ্গের সামনে এসে দাঁড়াই। বস্তুটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কিমের গণ্ডদেশ রক্তিম হয়ে ওঠে। আমি তাকে বলি, ‘শিব ঠাকুরের পৌরাণিক প্রত্যঙ্গটি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যার দরকার নেই কিম।’

সে এবার আমাকে নিয়ে চলে ‘প্যালেস অব দি স্কাই’ বা আকাশপুরি দেখাবে বলে। আমরা পিরামিড আকৃতির স্তরে স্তরে উপরের দিকে উঠে যাওয়া বর্তমানে প্রায় ভগ্ন একটি স্থাপত্যের সামনে এসে দাঁড়াই। কিম এখানে আমাকে জানায় যে, রাজা জয় বর্মণের হাজার তিনেক স্ত্রী ও উপপত্নী থাকা সত্ত্বেও তিনি নাকি প্রতি রাতে এখানে এসে একটি নাগকুমারীর সঙ্গে নিদ্রা যেতেন। আমি রাজার শয্যাভ্যাস নিয়ে বিশেষ একটা ভাবিত হই না। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হয় প্রাসাদ প্রাঙ্গণ।

রাজপুরির দেয়াল সংলগ্ন দুটি পুকুর। কিমের ভাষ্যানুযায়ী— একটিতে রাজমহিষী এবং অন্যটিতে নাকি দেহরক্ষী প্রতিহারীরা অবগাহন করতেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি এত কিছু এত সঠিকভাবে জান কীভাবে?’ সে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, ‘তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি একা একাই ঘুরো, আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি।’ আমি এতে একা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃত্রিম হলেও খানিক ভয় পেয়ে, বলি, ‘অবিশ্বাসের কিছু না, তবে এই যে বৃহৎ আঙ্গিনাকে তুমি রাজপুরি বলছো— এখানে ঘরদুয়ার, শয়ন মন্দির,  আস্তাবল কিছু নেই কেন?’ অবশেষে আমরা এসে পৌঁছাই ‘এলিফ্যান্ট টেরাস’ বা হস্তী মঞ্চের কাছে। স্থানটি বেলেপাথরে গড়া প্ল্যাটফর্মের মতো। বিস্তীর্ণ দেয়ালের সর্বত্র নানা ভঙ্গিমায় যুদ্ধ সাজে হাতি ও সশস্ত্র সৈনিকের অজস্র চিত্র ব্যাস্ রিলিফ পদ্ধতিতে আঁকা।

রিলিফের কাজগুলোর রেখা বিভঙ্গে শেষ মধ্যাহ্নের সূর্যালোক তীব্র হয়ে ফোটে। কিমের ঠোঁটের ওপর ও নাকের ডগায় ফুটে ওঠে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আমারও পিপাসা পায়। আমি এদিক ওদিক তাকাই। বেশিক্ষণ খুঁজতে হয় না। ঘণ্টা দেড়েক আগে দেখা হওয়া ছোট্ট পানি বিক্রেতা মেয়েটিকে টলোমলো পায়ে হাঁটতে  দেখি। আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে দুই বোতল পানি কিনি। আমরা পরস্পরের দিকে একটু তাকাই, তারপর অবলীলায় ঢুকে পড়ি পাথরে আমাদের রাশিচক্র খোদাই করা একটি প্রকোষ্ঠে। প্রকোষ্ঠটির দেয়ালে তীব্র ফাটল। পাথরের খোদাই চিত্রে বিস্তৃত হয়েছে বিরাট একটি বৃক্ষের শিকড়। স্থানটি বসার উপযুক্ত নয়। তাই আমরা পরস্পরের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কারাগারের চূড়ায় একটি তক্ষক তিনবার ডেকে ওঠে। কিম আমাকে ফিস্ ফিস্ করে বলে, ‘আমার মা প্রায়ই বলে এখানকার তক্ষকের ডাক হিসাব করে সেই সংখ্যানুযায়ী লটারির টিকিট কিনলে ভাগ্য ফিরে যেতে পারে।’

আমার ফেরার সময় হয়ে আসে। ট্যক্সির দিকে যেতে যেতে কিমকে জিজ্ঞেস করি, ‘সবচেয়ে ভালো মানের একটি লটারির টিকিটের দাম কত হতে পারে? সে জানায়, ‘দু থেকে তিন ডলার।’ আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসতে গিয়ে তার হাতে এক ডলারের তিনটি নোট গুঁজে দিয়ে বলি, ‘ভালো দেখে একটা লটারির টিকিট কিনে নিও।’ কিম কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে ডলারগুলো হাতে নেয়। তারপর নির্লিপ্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মিস্টার, ট্যাক্সিতে ওঠে তোমার সঙ্গে হোটেলে আসব কি?’ আমি উত্তরে বলি, ‘তার প্রয়োজন নেই, আমি খানিক পরে বিকালের ফ্লাইটে ব্যাংকক চলে যাচ্ছি।’ ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। ভাবি পেছন ফিরে তাকাব না। কিন্তু রিয়ার ভিউ মিররে একটি ‘সরং’ এর কিয়দংশ ও নৃত্যরতা অস্পরার ছায়া পড়ে।

সর্বশেষ খবর