শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্র্যাজেডির শেষ ছিল না তাদের

সাইফ ইমন

ট্র্যাজেডির শেষ ছিল না তাদের

সক্রেটিস

৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের একটি আদালত দার্শনিক সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। নিজ মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রেটিস আদালতের রায় মেনে নিয়েছিলেন। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে  হেমলক বিষ পান করে ধীরে ধীরে মৃত্যুকে বরণ করে নেন তিনি। এর আগে বিচার চলাকালীন নানাভাবে তাকে অপমান করা হয়। যদিও সক্রেটিস ছিলেন বিনয়ী মহান পণ্ডিত। ওই ঘটনার প্রায় আড়াই হাজার বছর পর ওনাসিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আধুনিক এথেন্সের একটি আদালতে বিচারের রায় নিয়ে নতুন করে শুনানি হয়। আর এ বিচারে তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে রায় দেয় আদালত। প্রাচীন গ্রিসে তার বিরুদ্ধে তরুণদের খারাপ কাজে উৎসাহ দান, ধর্মের অপব্যাখ্যা ও দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। আরও বলা হয়েছিল তিনি উসকানিমূলক কথা বলে মানুষকে খেপাতেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তর্ক ছুড়ে দিতেন। অথচ প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিস গণতন্ত্র ও মুক্ত আলোচনার যে দাবি করেছিলেন, আধুনিক বিশ্বের আদালত তারই প্রতিধ্বনি। আজকের বিশ্ব রাজনীতি এবং জটিল পরিস্থিতি মহান দার্শনিক সক্রেটিসের দাবিকে মেনে নিতে আহ্বান জানায়।

 

লিও তলস্টয়

লিও তলস্টয় একজন মহান রুশ মনীষী। তিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। মানবতাবাদী লিও তলস্টয়ের জন্ম হয় রাশিয়ার এক জমিদার পরিবারে। তবে জন্মের পরই মাকে হারান তিনি। তার বিখ্যাত কিছু ছোট গল্প হলো মানুষ কি নিয়ে বাঁচে, দুজন বৃদ্ধ মানুষ, যেখানে ভালোবাসা সেখানেই ঈশ্বর, বোকার ইভানের গল্প, মানুষের কতটা জমি প্রয়োজন, ধর্মপুত্র ইত্যাদি। এই গল্পগুলোর মধ্যে ফুটে ওঠে লিও তলস্টয়ের দর্শন, তার আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণা। তার লেখার একদিকে যেমন রয়েছে নৈতিক শিক্ষা, আরেক দিকে রয়েছে মহৎ ও সরল জীবনের পথের নির্দেশ। সব কিছু ভালোই চলছিল। তার লেখা পাঠকের হৃদয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু হঠাৎ পাল্টে যায় চিত্রপট তার লেখা ‘ক্রয়োজার সোনেটা’ নামের একটি উপন্যাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে। লিও তলস্টয়ের বয়স তখন ৬১ বছর। উপন্যাসে তিনি একজন বৃদ্ধকে উল্লেখ করেন যে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় দ্বিচারিণী স্ত্রীকে হত্যা করেন। আর এতেই চারদিকে বিতর্কের ঝড় ওঠে। উপন্যাসটি সমালোচিত হয় বিকৃত যৌনতার অভিযোগে। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় বইটি। পুরো রাশিয়াজুড়ে এই মনীষীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

 

পিথাগোরাস

পিথাগোরাসের উপপাদ্য মনে আছে নিশ্চয়। শিক্ষা জীবনে সবাইকেই এই বিখ্যাত উপপাদ্য শিখতে হয়। কিন্তু পিথাগোরাসকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আপনাকে দ্বিধায় পড়তে হবে। কারণ তাকে নিয়ে লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার সময়ের লোকেরা বিশ্বাস করত পিথাগোরাসের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। পিথাগোরাসের জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসের সামোস দ্বীপে। তার বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। আরেক বিখ্যাত গণিতবিদ থেলিসের নিকট গণিত শিক্ষা লাভ করেন পিথাগোরাস। ২২ বছর বয়সে পিথাগোরাস মিসরে যান। সেখানে ২২ বছর কাটিয়ে পিথাগোরাস নিজের জন্মভূমি সামোসে ফিরে আসেন। গণিত ও জীবন সম্পর্কে নিজের দর্শন থেকে মানুষকে শিক্ষা দেন। তার দর্শনের ভিত্তি ছিল নিজের চিন্তা, গণিত এবং প্রাচীন মিসরীয় অতিন্দ্রীয়বাদী কাহিনী। নিজের এই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারেননি পিথাগোরাস। জন্মভূমি সামোসে ফিরে আসার দুই বছরের মাথায় তাকে সামোস ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কারণ তার নতুন নতুন তত্ত্বে অনেক মানুষ অবিশ্বাস পোষণ করত এবং তারা ক্রমশই তার শত্রু হয়ে ওঠে। পরে প্রাচীন গ্রীসের ক্রটন শহরে পাড়ি জমান।

 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যের সার্থক রচয়িতা। অমিতাক্ষর ছন্দ, প্রহসন রচনারও তিনি পথিকৃৎ। তার স্মরণে যশোর সাগরদাঁড়িতে তার পৈতৃক নিবাসে প্রতিবছর মধুমেলা হয়। উনিশ শতকের নব জাগরণের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা জমিদারপুত্র মধুসূদন দত্ত। অথচ তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয় অর্থাভাবে অনাহারে। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মধুসূদনের জীবনযাপন ছিল অত্যধিক বিস্ময়কর। ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছিলেন, ইংরেজি সাহিত্য রচনা করেছিলেন, সমধিক খ্যাতি ও যশ অর্জনের জন্য। ১৮৬৩ সালে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ভার্সাই নগরে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। এই সময় তার তীব্র অর্থাভাব দেখা দেয় এবং ঋণের দায়ে জেলে যাবার উপক্রম হয়। তার দূরবস্থার কথা লিখে জানান শ্রদ্ধেয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। ওই অভাবের দিনে বিদ্যাসাগর দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে এবং পরে আরও টাকা সংগ্রহ করে কবিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। অনাহারে রোগশয্যা চিকিৎসাহীনতায় ভুগে ওই বছর ২৯ জুন আলিপুর দাতব্য চিকিৎসালয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

 

কাজী নজরুল ইসলাম

ভারতের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানায় অবস্থিত। কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। কাজী ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। ছেলেবেলা থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম অনেক কষ্ট করে বড় হন। তাকে বলা হয় বিদ্রোহী কবি। তিনি সমাজের নানা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত।

১৯৪২ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুস্পষ্টরূপে জানা যায় ওই বছরের জুলাই মাসে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হন। সেই বছরই শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর নজরুল পরিবার ভারতে নিয়ে যান কবিকে। ১৯৫২ সালে কবিকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এরপর ১৯৫৩ সালের মে মাসে কবিকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই বছর মে মাসের ১০ তারিখ লন্ডনের উদ্দেশে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ছাড়েন। লন্ডনে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি সপরিবারে ঢাকায় আসেন।  ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল এই সুদীর্ঘ চৌত্রিশ বছর কবি বেঁচেছিলেন জীবন্মৃত হয়ে। এ সময় কবি বর্ণনাতীত কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। ১৯৭৫ সাল থেকেই কবির স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যেতে থাকে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, বাংলা ১৩৮৩ সনের ১২ ভাদ্র রবিবার ব্রংকোনিমোনিয়ায় কবি ঢাকার পি.জি. হাসপাতালে ছিয়াত্তর বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিনই কবির মরদেহ দাফন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

মহাকবি হোমার

বিশ্বের সর্বকালের সেরা দুটি গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াড এবং অডিসি। সেই আদিকাল থেকে অদ্যাবধি মহাকাব্য দুটি সমানভাবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। আর এই কালজয়ী সাহিত্যকর্মের রচয়িতা মহাকবি হোমার। কিন্তু তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। আর এ কারণেই তাকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা বিভ্রান্তি। তবে অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন হোমার ছিলেন অন্ধ ও নিঃস্ব দরিদ্র একজন ভিক্ষুক। তিনি পথে পথে ভিক্ষা করে বেড়াতেন। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি চমৎকার সুরে গান গাইতে পারতেন। হোমার ইলিয়াডের পদ্যাংশ অনবদ্য সুরে পথে পথে গেয়ে বেড়াতেন আর ভিক্ষা করতেন। তাই পরবর্তী সময়ে এই গানগুলো গিসের লোকদের মুখে মুখে পরিচিতি পায়। হোমার ছিলেন এক মহান কবি এবং অসাধারণ গায়ক। এই দুটি মহাকাব্য প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে সেকালে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। গ্রিসের গোটা শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতীকীরূপ উঠে আসে হোমারের রচনায়। বিষয়টা কী অদ্ভুত। এক ভিক্ষুক তার সময়কে ধারণ করেছেন তার কাব্যে। মৃত্যুর আগে পথে পথে হেঁটে সেই সময়কে তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছেন মহাকালে।

পাবলো নেরুদা

পরাবাস্তব এক বিপ্লবী কবি পাবলো নেরুদা। তিনি চিলিতে ১৯০৪ সারের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। এই কবিকে কুড়ি শতকের অন্যতম কবি বলা হয়। পরাবাস্তববাদ পাবলো নেরুদার হাতেই সফলভাবে কর্ষিত হয়। তিনি চিলির কমিউনিস্ট পার্টিতে সক্রিয় ছিলেন। চিলির প্রেসিডেন্ট তখন কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেন। নেরুদাকে অ্যারেস্ট করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করার নির্দেশ দিলেন। নেরুদা চিলির পূর্বে আর্জেন্টিনার সীমান্ত পথে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। চিলি ফিরে আসেন কবি। তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন সালভাদর আলেন্দে। যিনি ছিলেন চিলির বিশিষ্ট সমাজতন্ত্রী নেতা এবং পরে ক্ষমতায় আসেন। নেরুদা একসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সে সময় চিলির স্বৈরাচারী জেনারেল পিনোশে সমাজতন্ত্রী আলেন্দেকে হত্যা ও উত্খাত করে। এদিকে নেরুদার অবস্থার অবনতি হয়। ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নেরুদা মারা যান। স্বৈরাচারী পিনোশে কবির শেষকৃত্যের অনুমতি দেননি। পিনোশে কারফিউ জারি করেন। লাখ লাখ মানুষ কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এসে কবির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়।

 

মেরি কুরি

ফরাসি বিজ্ঞানী মেরি কুরি তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করে নিজেকে অমর করে গেছেন। তিনিই দুই বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মেরি কুরি ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন। মারাত্মক অর্থ সংকটের কারণে তার বড় বোনের পড়াশোনার খরচের ভার নিতে হয় তাকে। তিনি মাসিক পাঁচশ রুবলের বিনিময়ে এক অভিজাত রুশ আইনজীবীর বাড়িতে গভর্নেসের চাকরি নেন। দুই বোনের মধ্যে শর্ত ছিল একজনের পড়াশোনা শেষ করে অপরজনের পড়াশোনার খরচ জোগাবে। তাই অনেক মানসিক পীড়নের মধ্যে থেকে মেরি কুরি তিন বছর সেই গভর্নেসের চাকরি করেন। ১৯১০ সালে মেরি কুরি রেডিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ রেডিয়াম নিষ্কাশন করেন। এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য ১৯১১ সালে মেরি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আজীবন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করার ফলে এক অজানা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। অবস্থা এতই খারাপ হয় যে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতেন না। অবশেষে ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন।

 

গ্যালিলিও গ্যালিলাই

আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাণপুরুষ গ্যালিলিও গ্যালিলাই। ১৫৬৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ইতালির পিসা শহরে। সংগীত ও অঙ্কশাস্ত্রের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। যোগ দেন পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে। তখনকার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল অ্যারিস্টেটলময়। তিনি দেখলেন অ্যারিস্টেটলের সব মতের সঙ্গে তার মত মিলছে না। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দুটি জিনিস একসঙ্গে মাটিতে পড়ার তত্ত্ব। নিজেকে প্রমাণও করেন গ্যালিলিও। কিন্তু তখনকার গোরা শিক্ষাবিদরা গ্যালিলিওকে মেনে নিতে পারেননি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপকের পদে যোগ দেন। এখানে থেকেই তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তিনি ব্যাখ্যা করলেন গতিতত্ত্ব, বিশ্ব প্রকৃতি, শব্দ, আলো, রং প্রভৃতি। একসময় তিনি কোপার্নিকাসের পক্ষে অবস্থান নিলেন। অর্থাৎ তিনি বললেন পৃথিবী নয় সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অন্যান্য গ্রহসহ পৃথিবী। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে তার এই বক্তব্য সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বাধ্য করা হয় অঙ্গীকারনামায় সই করতে। যেখানে বলা হয় তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো মত প্রকাশ করতে পারবেন না। জীবনের শেষ ৫ বছর গ্যালিলিও সম্পূর্ণ অন্ধ অবস্থায় কাটান।   

সর্বশেষ খবর