শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে

সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে

ছবি : রোহেত রাজীব

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ (জন্ম : ১২ মার্চ, ১৯৪৩) বাংলাদেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও পরিবেশকর্মী। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের সভাপতি এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর মহাপরিচালক। ২০০৭ সালে আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেল (আইপিসিসি) নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনি আইপিসিসির অন্যতম সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— শেখ মেহেদী হাসান

 

আপনার ছেলেবেলা কেটেছে সিলেটে। মনে পড়ে ছেলেবেলার দিনগুলোর কথা?

আমার জন্ম ১৯৪৩ সালে, সিলেটে। শুনেছি, ছেলেবেলায় খুব চঞ্চল ছিলাম। এক বোন, চার ভাইয়ের মধ্যে আমি সবার বড়। তৃতীয় ভাইটি চার বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছে। এক ভাই ও বোনটি বিদেশে, আমি আর এক ভাই দেশে আছি। বাবা মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন শিক্ষক-রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারত বিভাগের আগে আসাম বিধানসভার এমএলএ ছিলেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে আবার শিক্ষকতা পেশায় ফিরে আসেন। আব্বা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ওই কলেজে অনেক দিন পড়িয়েছেন। তিনি আরবি-ফার্সি-উর্দু-ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। মা ছহিফা খাতুন।

 

ছোটবেলায় আব্বার কাছে পড়তাম। মনে পড়ে, রাজনগর হাই স্কুলে একবারেই ক্লাস এইটে ভর্তি হয়েছিলাম। ছেলেবেলায় বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু শিখেছি। গণিত শিখেছি কিন্তু স্কুলে প্রথম বছর খুব একটা ভালো করিনি। বীজগণিত, পাটিগণিত ও জ্যামিতি— এই তিনটি মিলিয়ে গণিতে ১০০ নম্বর ছিল। প্রথম পরীক্ষায় মনে আছে, পাটিগণিতে ৩১ পেয়েছিলাম। বাকি দুটিতে গোল্লা। তবে ইংরেজিতে খুব ভালো করেছিলাম। তবে ক্লাস টেনে ওঠার সময় ফার্স্ট হয়ে গেলাম। ওখান থেকে পাস করে এমসি কলেজ পড়ি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হই। পরে আমার বন্ধু আবদুর রাজ্জাকের উৎসাহে অর্থনীতিতে চলে আসি। 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার বন্ধু-বান্ধব কারা ছিল। আমরা বেশ কয়েকজন ক্লাসমেট খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। একসঙ্গে হৈচৈ করতাম, পড়াশোনা করতাম। এই বন্ধুত্ব সারা জীবন থেকে গেছে। আমার ক্লাসমেট মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ড. ওসমান ফারুক মন্ত্রী হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী আমার বন্ধু। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এম জলিল, কাজী শামসুল আলম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হয়েছিলেন। আমাদের তুমুল প্রতিযোগিতা হতো, পড়াশোনায় কেউ কাউকে ছাড় দিতাম না; আবার ভালো বন্ধুত্বও ছিল। তখন ইউনিভার্সিটিতে খুব শান্তির পরিবেশ ছিল। শিক্ষকরাও আমাদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করতেন।

 

আপনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে পড়তে গেলেন কখন?

আমার কিছু আত্মীয়স্বজন লন্ডনে ছিলেন। তারা বললেন, লন্ডনে এসে বেড়িয়ে যাও। তখন সবে আমি এমএ পরীক্ষা দিয়েছি। ১৯৬৩ সালের আগে, পাসপোর্ট থাকলেই ইংল্যান্ডে যাওয়া যেত। ভিসা লাগত না। তবে পাসপোর্ট পাওয়া খুব কঠিন ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাসপোর্ট আসত। পাসপোর্ট হলো। বেড়াতে গেলাম। এর মধ্যে একটা ব্যাপার ঘটে গেল। যখন এমএ পড়ি, তখন পিআইডিই (পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিস্ট, এখন বিআইডিএস) করাচিতে ছিল। ওখানে সাধারণত যারা এমএতে ভালো রেজাল্ট করতেন, তাদের নির্বাচন করা হতো। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম (পরে তিনি বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন) আমাদের ক্লাস থেকে আমিসহ পাঁচজনকে পিআইডিইতে চাকরির জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এদিকে আমি তো বেড়াতে গিয়ে ইংল্যান্ডে নয় মাস থেকে গেলাম। এক সময় করাচির পিআইডিইকে লিখলাম, আমাকে একটা চাকরি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যোগ দিতে পারিনি। ওটা যদি থাকে, তাহলে আসতে চাই। ওরা টেলিগ্রাম করল, ‘কাম অ্যান্ড জয়েন ইমিডিয়েটলি’। করাচিতে শুরু হলো কর্মজীবন। এক পাঞ্জাবি কলিগ বললেন, ‘আমার কাজিন আইবিএম পাকিস্তানের চিফ; তুমি চলো, ওখানে বেশি টাকা পাবে।’ একদিন ওর সঙ্গে গেলাম। একজন বিশেষজ্ঞ ইন্টারভিউ নিলেন। তিনি গ্রাফ এঁকে দেখালেন, ‘তুমি যেখানে আছ, সেখানে উন্নতি হবে ধীরে ধীরে। আর এখানে উন্নতি হবে খুব দ্রুত।’ শুনে আমি তো বেশ খুশি। মনে মনে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে অর্থনীতিবিদ হওয়ার খায়েশ অবশ্যই ছিল। ওরা বারবার ফোন করে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। একপর্যায়ে ঠিক করলাম অর্থনীতিবিদ হব। এরপর লন্ডন গিয়ে ভর্তি হলাম লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে। সেখান থেকে অর্থনীতিতে এমফিল ও পিএইচডি করেছি। আমার পিএইচডি ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকসে। তদানীন্তন পাকিস্তানের পাটশিল্প ছিল কেস স্টাডি। বলতে গেলে পাট বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলাম। পাট কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলাম। দেশে পাটনীতি হয়েছে, সেটা আমাদের কমিশনের সুপারিশে তৈরি।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জানতে চাই।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে চার ঘণ্টা প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেছি। শেষ বাক্যটির পর তো বাঁধভাঙা করতালি— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এটাই আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর তো অসহযোগ শুরু হয়ে গেল। পিআইডিইর তৎকালীন পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুর কী কী প্রশ্নের উত্তর বা তথ্য দরকার, সেগুলো আমাদের এনে দিতেন। আমি, স্বদেশ বোস এবং আরও দুজন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দিতাম। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সেগুলো বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যেতেন। একেক দিন একেকজনের বাসায় কাজ করতাম। ২৫ মার্চ রাতে আমার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় বৈঠক ছিল। রাত ১০টার দিকে সবাই চলে গেলেন। খেয়ে ঘুমিয়েছি। মাঝরাতে গোলাগুলি শুরু হলো। পরদিন কারফিউ। ২৭ মার্চ কারফিউ উঠল। পরে আমরা বাসা পাল্টে ধানমন্ডির ১৯ নম্বরে শ্যালিকা রাশেদাদের (রাশেদা চৌধুরী) বাসায় উঠলাম। এরপর সুনামগঞ্জ হয়ে কলকাতায় গেলাম। মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছি। আমাদের চেয়ারম্যান ছিলেন মোজাফফর আহমদ চৌধুরী। কলকাতায় ভারতীয় পাটশিল্প বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘পাটনীতি’ তৈরি করি। স্বাধীনতার পরে সেটি প্রথম পাটনীতি হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর আমরা চারটায় জানলাম, দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারপর ৩১ ডিসেম্বর ভারতীয় এয়ারফোর্সের একটি বিমানে ঢাকায় ফিরে এলাম। সহযাত্রী হিসেবে একই ফ্লাইটে মন্ত্রী কামরুজ্জামানও আসেন।

 

স্বাধীনতার পর আবার কর্মজীবনে ফিরলেন।

স্বাধীনতার পর মাসদুয়েক ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ছিলাম। রেডক্রসের প্লেনে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম তদারকিতে যেতাম। এরপর বিআইডিএস-এ কাজ শুরু করলাম। সেখানে বহু বছর গবেষণা পরিচালক ছিলাম। ১৯৮৭ সালে ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিলাম। ১৯৮০ সালে যখন বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ তৈরিতে আমার ভূমিকা ছিল। বিআইডিএস ছেড়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেই। তারপর ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের মহাপরিচালক পদে যোগ দেই। এর বাইরে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বিআইডিএস থেকে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সে দুটি কোর্স  পড়াতাম। একটি হলো প্ল্যানিং, আরেকটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস। আগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকসে বেশি ছেলেমেয়ে আসত না। কারণ ওটা আবশ্যকীয় ছিল না। আমি যাওয়ার পর দেখি, ক্লাস ভর্তি। অনেক ছাত্রছাত্রী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকসে আসছে। শিক্ষকতা আমার খুব ভালো লাগত, এখনো লাগে।

 

ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস গড়ে তুললেন কখন?

ভাবনাটি বহু বছর মাথায় ছিল কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়নি। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস’। প্রতিষ্ঠানটি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব মর্যাদা তৈরি হয়েছে।

 

আপনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের সর্বোচ্চ পরিষদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দেশের অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছি তা কাল বিচার করবে।

 

আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই।

আমি সারা জীবন পড়াশোনা আর গবেষণায় নিমগ্ন থেকেছি। প্রথমদিকে শিল্পের ওপর একাডেমিক প্রবন্ধ লিখতাম। পাটের ওপর অনেক লেখা আছে। খুব ছোট চার পৃষ্ঠার একটা নিবন্ধ আছে, সেটা অনেক বিখ্যাত হয়েছিল। নাম ‘ওয়াজ দ্য জুট ইন্ডাস্ট্রি প্রফিটেবল ইন ১৯৬৯’ আর্টিকেলটি দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। এ যাবৎ একক এবং  যৌথভাবে ৩৫টি গ্রন্থ লিখেছি, ২৫০টির মতো গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রেও ইংরেজি ও বাংলায় অসংখ্য লেখা বেরিয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রথম বইটি কিন্তু আমার। নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রিচার্ড ওয়ারিক মিলে সম্পাদনা করেছি ‘ইমপ্লিকেশনস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সি লেভেল রাইজ ফর বাংলাদেশ’। হল্যান্ডের ক্লোয়ার প্রকাশনা থেকে ১৯৯৬ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি আরও ৮টি বই প্রকাশের অপেক্ষায়। 

 

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়নে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নীতিটি প্রণয়নে একটি প্রধান দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশে একমাত্র নীতি যেটা সংসদে পাস হয়। এই নীতি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি ছিল না। জাতীয়ভাবে এটা গৃহীত হয়েছে। বলা হয়েছিল, গুণগত মানের বই তৈরি করতে হবে। বই হয়েছে কিন্তু গুণগত মান হয়নি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, হাওরের জনগোষ্ঠীকে সুযোগ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। মোট ২৪টি লক্ষ্য ছিল শিক্ষানীতিতে। তার এক ভাগ ছিল মানবিক গুণাবলী, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা। দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো দক্ষতা বৃদ্ধি। আসলে মানুষ হতে হবে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন। জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে আমরা এর সুফল পাব।

 

পাসের হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে না, আপনার অভিমত কী?

এখন তো পড়াশোনার একমাত্র উদ্দেশ্য জিপিএ ৫ পাওয়া। কোনো মান, পড়া, জানা, চিন্তা-ভাবনার দরকার নেই। এটা আমাদের সাংঘাতিক ক্ষতি করছে। শিক্ষা বিশ্বমানের হতে হবে, নতুবা আমরা পিছিয়ে পড়ব। 

 

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের অতিমাত্রায় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কতখানি সমর্থন করেন।

প্রতিটি শিক্ষকের রাজনীতিসচেতন হওয়া উচিত কিন্তু অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

 

আপনি পরিবেশ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আপনি কাজ করছেন। 

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক নেগোসিয়েশন কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আসলে বাংলাদেশ পৃথবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এখানে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট নানা রকমের ঝুঁকি আমাদের জীবনযাত্রাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা সেসব পরিকল্পনা প্রণয়নে কার্যকর ভূমিকা রেখেছি।

 

নিজেকে নানা সামাজিক কর্মে জড়িত রেখেছেন।

১৯৮৫ সালে আমার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। স্কুলটির নাম ‘পাঁচগাঁও হাই স্কুল’। প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মেয়ে। এ ছাড়া পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৯৪ সালে আমাদের বসতভিটা এবং সব জমিজমা ট্রাস্ট করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আব্বার নামে ‘মৌলানা মোফাজ্জল হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজ’ স্থাপন করি। গ্রামের এই কলেজে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী  আছে। ইতিমধ্যে কলেজটিতে একটি বিষয়ে অনার্স চালু হয়েছে। আমি মনে করি, সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

 

আপনার অবসর কিভাবে কাটে?

পড়াশোনা, লেখালেখি আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এমনি কোনো অবসর নেই। আমি রবীন্দ্র, নজরুলসহ বিভিন্ন রকমের গান শুনি। সিনেমা দেখার সময় হয় না।

 

আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

আমার স্ত্রী ড. জাহেদা আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘রোকেয়া চেয়ার’ হয়েছিলেন। এখন অবসরে আছেন। বড় ছেলে কাজী রুশদী আহমদ অ্যাস্ট্রো-ফিজিক্সে পিএইচডি করে এখন ব্রড ইনস্টিটিউট অব এমআইটি অ্যান্ড হার্ভার্ডে সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। বউমা ফারজিন করিম আমেরিকার সবচেয়ে বড় ফান্ড ম্যানেজমেন্ট  কোম্পানি ফিডালিটি ইনভেস্টমেন্টে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট। নাতনির নাম আনিজা, নাতি আয়ান। ওরা স্কুলে পড়ে। ছোট ছেলে কাজী উলফী আহমদ দীপ্ত টেলিভিশনের সিইও। ছোট বউ সেজামী খলিল ছয়-সাত বছর আমেরিকায় পড়ালেখা করেছে। সে রেকিট বেনকাইজারের ব্র্যান্ড ম্যানেজার। ওরা গুলশান নিকেতনে থাকে।

ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর