শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও কাজী মোতাহার হোসেন

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও কাজী মোতাহার হোসেন

কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১) শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী এবং সাহিত্যিক। ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে তার জন্ম। তিনি কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯১৫ সালে ডিস্টিংশনসহ প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯১৭ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৩৮ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে পরিসংখ্যানে পিএইচডি উপাধি পান।

ছাত্রাবস্থায় ১৯২১ সালে মোতাহার হোসেন নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ডেমোনেস্ট্রেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৩ সালে তিনি এ বিভাগের সহকারী প্রভাষকের পদ লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি নিজস্ব উদ্যোগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব ও তথ্যগণিত বিষয়ে এমএসসি কোর্স চালু করেন। তিনি এ নতুন বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৫৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ‘সুপারনিউমেরারি প্রফেসর’ হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইমেরিটাস প্রফেসর’ এবং ১৯৭৫ সালে ড. কাজী মোতাহার হোসেন ‘জাতীয় অধ্যাপক’ পদে সম্মানিত হন।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবিতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তিনি ছিলেন তার একজন দৃঢ় পৃষ্ঠপোষক। ১৯৬১ সালে প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীদের বিরোধিতার মুখে ঢাকায় রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী পালনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি-সংস্কৃতি খর্ব করার জন্য রেডিও-টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তার বিরুুদ্ধেও প্রতিবাদজ্ঞাপন করেন। তিনি বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ ও পুস্তক রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাসমূহ হচ্ছে— সঞ্চয়ন (১৯৩৭), নজরুল কাব্য পরিচিতি (১৯৫৫), সে পথ লক্ষ্য করে (১৯৫৮), সিম্পোজিয়াম (১৯৬৫), গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস (১৯৭০) এবং আলোক বিজ্ঞান (১৯৭৪)।

শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’, বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৬৬ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। কাজী মোতাহার হোসেন একজন খ্যাতিমান দাবাড়ু এবং দাবা সংগঠকও ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর