শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

জহির রায়হান জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

জহির রায়হান জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

শনিবার বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক জহির রায়হানের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট তিনি ফেনী জেলার মজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক এবং ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। জহির রায়হান কলকাতায় মিত্র ইনস্টিটিউটে এবং পরে আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ভারত বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজ গ্রামে চলে আসেন। তিনি ১৯৫০ সালে আমিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। অল্প বয়সেই জহির রায়হান কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তখন কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। তিনি কুরিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন অর্থাৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চিঠি ও সংবাদ পৌঁছে দিতেন। গোপন পার্টিতে তার নাম রাখা হয় রায়হান। মূলত তার নাম ছিল জহিরুল্লাহ। পরবর্তীকালে তিনি জহির রায়হান নামে পরিচিত হন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে ১০ জন প্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। অন্যদের সঙ্গে তাকে মিছিল থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ছাত্রজীবনেই তিনি লেখালেখিতে দক্ষ ছিলেন।  ১৩৬২ বঙ্গাব্দে তার প্রথম গল্পসংগ্রহ সূর্যগগ্রহণ প্রকাশিত হয়। তার লিখিত অন্যান্য বই হচ্ছে ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’ এবং ‘আর কত দিন’। তিনি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা ‘দ্য উইকলি এক্সপ্রেস’ প্রকাশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এ ছাড়া তিনি কতিপয় সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

জহির রায়হান ১৯৫২ সালে ফটোগ্রাফি শিখতে কলকাতায় গিয়ে প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬১ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ মুক্তি পায়। তারপর একের পর এক তার নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকে— ‘কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘আনোয়ারা’, ‘সঙ্গম’ এবং ‘বাহানা’। তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নামে একটি ইংরেজি ছবি নির্মাণ শুরু করেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি তা শেষ করতে পারেননি। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর তিনি কলকাতায় যান। সেখান থেকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যার চিত্র সংবলিত ‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণ করেন। ছবিটি পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৬১ সালে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুমিতা দেবীকে বিয়ে করেন। ১৯৬৮ সালে অপর চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচন্দাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তার ভাই লেখক শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। এই দিনটি তার অন্তর্ধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সর্বশেষ খবর