শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিকারাগুয়ায় ভ্রমণ : বাসস্টপে গাবরিয়েলা

মঈনুস সুলতান

নিকারাগুয়ায় ভ্রমণ : বাসস্টপে গাবরিয়েলা

দাঁড়িয়ে আছি নিকারাগুয়ার সমোটো শহরের সুনসান সাদা একটা গির্জার কাছাকাছি। তার  ক্লক টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখি, সাড়ে আটটার মতো বাজে। এ শহরে হালফিল পর্যটক আসছে। তাদের দেখাশোনার জন্য গ্রো করেছে গাইড সম্প্রদায়। মার্কিন মুলুক থেকে আসা টুরিস্টরা ঘোড়ায় চড়তে ভালোবাসে। তাদের তত্ত্ব-তালাবির জন্য ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে জিনগদি পিঠে কয়েকটি সুদর্শন ঘোড়া। কাছেই বাসস্টপ। ইসতেলির শহর থেকে বাস আসতে এখনো দেরি আছে। তাই গাছের ছায়ায় বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করি। একটু দূরে রেলিংয়ে বাঁধা লুসিয়ার ধূসর ঘোড়াটি। এ ঘোড়া-চড়িয়ে ট্যুরগাইড নারীর সঙ্গে গতকাল পরিচয় হয়েছে। লুসিয়া নিশ্চয়ই আশপাশে কোথাও তার ঘোড়া নিয়ে আছে।

মনে মনে গাবরিয়েলার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখি। ইভার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গাঢ় হচ্ছে, আমরা পরস্পরের কিছু সিক্রেট নিজেদের মধ্যে শেয়ার করেছি। প্রায়ই তার সঙ্গে বসছি ইন্টারনেট ক্যাফেতে। ইভার বয়ফ্রেন্ড এরিক হুসটিস ড্রাগস-ভয়োলেন্স খ্যাত করোটি-বৃশ্চিক গ্যাংগের রিংলিডার। সে মৃত্যুদণ্ড পেয়ে কারাগারের নির্জন সেলে দিন যাপন করছে।  তার দণ্ডাদেশ মওকুফের সুপারিশ জানানোর জন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আবেদন ড্রাফট করতে আমি ইভাকে সাহায্য করেছি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জবাব দিয়েছে ইভার পত্রের। তারা চাচ্ছে, এরিক হুসতিস সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য। ইভার তো খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তার মর্মস্পর্শী বিষণ্নতা আমাকে বিস্মিত করে। তাই জানতে চাই, এরিকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফের প্রক্রিয়ায় বিপুল অনিশ্চয়তা কি তাকে বিমর্ষ করছে? জবাবে সে বলে, বিষয়টি তার বান্ধবী গাবরিয়েলাকে নিয়ে। তার ক্যান্সারের গ্রোথ অনেক ডিপ রুটেড। ছড়িয়েছেও চারদিকে বেশ খানিকটা। ডাক্তার বলে দিয়েছে, পনেরো-ষোলো মাস, জোর দুই বছর সময় বাকি আছে। গাবরিয়েলা তার স্কুলজীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড। সিঙ্গেল মাদার এই তরুণীর মারিয়া নামে বছর চারেকের একটি ছোট্ট মেয়েও আছে। তার পরিবার বলতে মা-বাবা। কেউ নেই যে, ওদিক থেকে কোনো সাপোর্ট পাবে। সে-ও আরেক ‘ভিকতিমা দে লা রিভোলিউসিওন’ বা বাম ধারার সমাজতন্ত্রী সান্দিনিস্তা বিপ্লবের আরেক ভিকটিম, যুদ্ধে পিতা-মাতাকে হারিয়ে বড় হয়েছে আত্মীয়স্বজনদের কাছে। ইভা এ সিক্রেটটিও আমার সঙ্গে শেয়ার করেছে যে, স্কুলে ইভা একদিন যৌন হয়রানির শিকার হলে, গাবরিয়েলা ছুটে এসে তার পক্ষে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। চার্চে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইভা মারিয়ার গড-মাদারও হয়েছে। তবে গাবরিয়েলার অসুখের খবরটি আমার কাছে নতুন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইভা বলে যে, গাবরিয়েলার মৃত্যুর পর তার মেয়ে মারিয়ার লালন-পালনের ভার সে নিচ্ছে। মেয়েটিকে সে ভালোবাসে। তদুপরি এরিক হুসতিসের যদি যাবজ্জীবন হয়, তাহলেও তো বছর দশেকের আগে সে মুক্তি পাচ্ছে না। মারিয়ার টেক কেয়ার করে সে না হয় এ বছর কটি কাটিয়ে দিল।

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর আমিই প্রস্তাব করি, গাবরিয়েলার সঙ্গে কথা বললে বা দেখা করলে কি তার স্ট্রেজ খানিকটা লাঘব হবে? ইভার তীব্র সহমর্মিতা বোধ সম্পর্কে আমি সচেতন। সে কিছু বলতে গিয়ে আমার দিকে গাঢ়ভাবে তাকালে তার কালো চোখে যেন বেদনাকীর্ণ হৃদয় ভেসে ওঠে। সে বলে, গাবরিয়েলার তো কথা বলার কেউ নেই। কিছু কিছু বিষয় হয়তো সে আমাকেও বলতে চাচ্ছে না। তুমি দূরের মানুষ, পরদেশি, হয়তো তোমার কাছে ফ্রি হতে তার বাধবে না। লিখবে তুমি একটি চিঠি তার কাছে, যেভাবে আমাকে ‘কারতা-দে—আমর’ বা লাভনোট গুছিয়ে লেখ? তুমি হবে তার ‘সিমপেতিকো আমিগো’ বা সহানুভূতিশীল বন্ধু। আমি তোমাদের কুরিয়ার হব, চিঠি আনা-নেওয়া করে দেব, কিন্তু পড়ব না। আমি ইভার প্রস্তাব নিয়ে ভাবি, আর মনে হয়, আমার তরী যেন এসে ভিড়ছে অজানা আরেকটি দ্বীপে। নতুন এই ঘাটে নেমে পড়ার অদম্য আগ্রহ আমাকে উদগ্রীব করে তোলে। নোটবুক থেকে পাতা ছিঁড়ে শুরু করি ইনট্রোডাকটরি পত্র। লিখি, গাবরিয়েলা, আমি ভালোবাসি কোনো কার্যকারণ ছাড়া ঘুরে বেড়ানো, হিস্পানিক মিউজিক ও মাঝরাতে ছায়াপথে নিহত নক্ষত্রের সবুজে তীব্র স্বর্ণালি রেখা। বর্তমানে যে নির্জন কুঠুরিতে বাস করছি, তার প্রাঙ্গণের ছোট্ট একটি গাছের ঝরা কুসুম আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে। আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ইভা পরদিন নিয়ে আসে গাবরিয়েলার কাছ থেকে জবাব। শব্দ ও বাক্যের তার বেয়ে আমাদের মধ্যে প্রবাহিত হয় বিদ্যুৎ। সে লিখেছে, আমার মেয়ে মারিয়া প্রিস্কুলে গেলে ঘরে তো আমি একাই থাকি। তবে পুষছি একটি টিয়া পাখি। কথা বলে সে। আমি যখন একা একা কিছু চিন্তা করি, মাঝে সাঝে আমার ভাবনার প্রতিফলন উচ্চারিত হয় শব্দে। পাখিটি তা অবিকল আমার বাচনভঙ্গিসহ শিখে নিচ্ছে। তুমি নিশ্চয়ই ইভার কাছ থেকে শুনেছ যে, বছর দুয়েক পর আমি আর থাকব না। টিয়া পাখিটি তখনো বেঁচে থাকবে। এবং উচ্চারণ করে যাবে আমার নির্জন ভাবনার কিছু প্রতিফলিত শব্দ। আমি না থাকলেও এ পৃথিবীতে এ শব্দগুলো আরও কিছুদিন থেকে যাবে।

কোনো দ্বিধা না করেই আমি লিখি আমার শরীরের কথা, স্বাস্থ্যের কিছু তীব্র সংকটের কথা, বছর তিনেক রিগোরাস চিকিৎসা করার পর আমাকে বলা হয়েছে চল্লিশ শতাংশ ক্ষেত্রে এরকম ব্যাধি আবার ফিরে আসে। তখন নিরাময় চিকিৎসাবিজ্ঞানের অসাধ্য। মাস তিনেক পর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ব্যাধি ফিরে এলো কিনা, তা নিশ্চিত হতে পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার। আমি গাবরিয়েলাকে অকপটে লিখি—পরীক্ষা করানোর সাহস আমার নেই, আমি আতঙ্কিত। জবাবে সে লিখেছে, মাস চারেক আগে তারও আতঙ্ক হতো খুব, মৃত্যুভীতিতে ঘুমাতে পারত না সে। এখন আর ওরকম হচ্ছে না। মৃত্যুর প্রতীক্ষা এখন তার কাছে অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

তবে কথা বলার একজন মানুষ থাকলে ভালো হতো। যত দিন তার স্বামী ম্যানুয়েল বেঁচে ছিল, চমৎকার একজন মানুষ ছিল সে। সবকিছু বলা যেত তাকে। দেশে সমাজতন্ত্র আসার পর বিপ্লবী পুরুষ ম্যানুয়েল সান্দিনিস্তা পার্টির কালচারেল ট্রুপের একজন হয়ে স্ট্রিটে ব্রেক-ড্যান্স করত। বিপ্লবের গেরিলা তৎপরতায় যোগ দিতে পারেনি বলে তার আক্ষেপ ছিল। মার্কিন মদদে নিকারাগুয়ায় প্রতিক্রিয়াশীল কন্ট্রা গেরিলাদের নাশকতামূলক তৎপরতা বেড়ে গেলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সে অপারেশনে যায়। দাড়ি রেখেছিল চে গুয়েভারার কায়দায়। মাইনে আহত হয়েছিল মারাত্মকভাবে। সরকার তাকে কিউবায় চিকিৎসার জন্য পাঠায়। খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারত সে, কিন্তু ব্রেক-ড্যান্স করার মতো অবস্থা তার আর থাকল না। দুঃসময়ে সমাজতান্ত্রিক সান্দিনিস্তা পার্টি তাকে ত্যাগ করেনি। পেশা হিসেবে জুটিয়ে দেয় কারারুদ্ধ এক পাতি বুর্জোয়ার বাজেয়াপ্ত করা একটি কনফেকশনারির দোকান। কিন্তু বড় অস্থির ছিল ম্যানুয়েল। দোকানে বসতে চাইত না। সমুদ্রে সেইল করা শিখল সে। ট্যুরিস্ট করপোরেশনের সেইল বোটে পর্যটক নিয়ে সে ভেসে যেত, প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট একটি প্রবাল দ্বীপে।

দ্বীপটি কোস্টাল এরিয়ার কাছেই। পালে হাওয়া লাগলে পৌঁছে যাওয়া যায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিটে। ম্যানুয়েল এক জার্মান পর্যটককে নিয়ে এই প্রবাল দ্বীপে গিয়েছিল। ফিরেও আসে সে বেলাবেলি। কিন্তু ভুল করে পর্যটক দ্বীপে ফেলে এসেছেন তার ব্যাকপ্যাক, তাতে আছে ল্যাপটপ। পর্যটকের পর্যাপ্ত বিয়ার খাওয়া হয়ে গেছে। তিনি আর দ্বীপে ফিরে যেতে চান না। দ্বীপটির যে ট্রেইলে পর্যটক ব্যাকপ্যাক ফেলে এসেছেন, ওখান থেকে তা খোয়া যাওয়ারও কোনো কারণ নেই। তাই ম্যানুয়েল একা ফিরে যায় পড়ন্ত বিকালে তা কালেক্ট করে আনতে। তীব্র হাওয়ায় ঢেউ দিচ্ছিল, সন্ধ্যার দিকে ঝড়ও হয়। ওল্টানো সেইল বোট সৈকতে ফিরে আসে দুই দিন পর। তার পাটাতনের নিচে বাক্সের ভিতর ব্যাকপ্যাকটি ল্যাপটপসহ পাওয়া যায়। তবে ম্যানুয়েলের লাশ আর ফিরে আসেনি।  মনে করা হয়, ভাটির জলে সে ভেসে গেছে বার-দরিয়ার দিকে।

ম্যানুয়েলের মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিতে পারিনি। একটু ভেবেছি কী লিখব তা নিয়ে। একটা বিষয়ে খটকা লেগেছে। ইভার কাছে আমি আর ‘কারতা-দে-আমর’ বা লাভনোট লিখছি না। আমার তাবৎ এনার্জি ব্যয় হচ্ছে গাবরিয়েলাকে পত্র লেখায়। ইভা কিন্তু কুরিয়ার হিসেবে আদান-প্রদানের কাজ খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করছে। তিনতলা বাড়ির কাচের জানালায় ভাসমান চিলের ছায়ার মতো একটি ভাবনা আমার ভিতর দিয়ে উড়ে গেছে। ইভার প্রয়োজন ছিল আমাকে দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার অ্যাড্রেস বের করিয়ে ইংরেজিতে চিঠি ড্রাফট করানো। প্রয়োজন তো ফুরিয়েছে। দূরে ঠেলে দেওয়াও যাচ্ছে না, তাই সে জুটিয়ে দিয়েছে গাবরিয়েলার বিকল্প। আমার অনুমান সঠিক কিনা, তা ইভার চোখের দিকে চেয়ে বুঝে নিতে চেয়েছি, কিন্তু সহজে তল খুঁজে পাইনি। গাবরিয়েলার ব্যাপার নিয়ে ইভাকে জেনুইনলি চিন্তিত দেখিয়েছে। ম্যানুয়েলের রেখে যাওয়া কনফেকশনারির দোকানে এখনো মাঝে মধ্যে গাবরিয়েলা গিয়ে বসছে। ব্যবসাটি লাভজনক। সে ভাবছে, বিক্রি করে দিয়ে ইভার অ্যাকাউন্টে টাকা রেখে যাবে, যার সুদ দিয়ে সে মারিয়ার লালন-পালনের খরচ জোগাবে।

গাবরিয়েলাকে কিছু একটা লিখতে হয়, তাই আমি প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাই, তোমার কি কখনো কোথাও যেতে ইচ্ছা হয়েছে, তবে সময় সুযোগের অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি? জবাব এসেছে সঙ্গে সঙ্গে, সমোটো কেনিয়ান। ইসতেলির এত কাছে, কত দূর দেশ থেকে সমোটো কেনিয়ানে পর্যটকেরা আসছে, কিন্তু গাবরিয়েলার কখনো কেনিয়ান দেখা হয়নি। আর মারিয়াও চিলড্রেন্স পার্কে গিয়ে শিশুতোষ রেলগাড়িতে চড়তে চাচ্ছে। ইসতেলিতে তো শিশুপার্ক নেই। সমোটোতে গেলে কেনিয়ান দেখার সঙ্গে সঙ্গে মারিয়াকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে চিলড্রেন্স পার্কে। আমি একটু দ্বিধা নিয়ে লিখি, গাবরিয়েলা, চল মারিয়াকে নিয়ে। নিকারাগুয়া ছেড়ে যাওয়ার আগে আমিও সমোটো কেনিয়ান ঘুরে যেতে চাই। আপত্তি নেই তো আমার সঙ্গে যেতে? একটু আশঙ্কা হয়, গাবরিয়েলার সঙ্গে এক্সকারসন হয়তো ইভার ভালো লাগবে না। আমাকে অবাক করে দিয়ে ইভাই সমোটোতে আসার সবকিছুর অ্যারেঞ্জমেন্ট শুরু করে।

ক্লক টাওয়ার থেকে একটু আগে নয়টা বাজার ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। ট্যুরগাইড লুসিয়া ঘোড়ায় চেপে আমার কাছাকাছি আসতেই বাসটি ইসতেলি থেকে এসে থামে। জানালা দিয়ে ইভা হাত নাড়ে। অন্য পেসেঞ্জারদের সঙ্গে আস্তে-ধীরে সিঁড়ি ধরে নামে গাবরিয়েলা। তার মাকে ভালো করে সম্ভাষণের আগেই আমার দিকে ছুটে আসে মারিয়া। শিশুপার্কে কি চড়বে তার এক্সাইটমেন্ট মেয়েটির চোখে-মুখে। গাবরিয়েলা হালকা মেকাপ পরে এসেছে, তাকে তেমন একটা ক্লান্ত দেখায় না। আমি হাত স্পর্শ করে তার দিকে তাকাই, আমাদের এই প্রথম দেখা হচ্ছে, সে বোধ করি একটু চুপচাপ প্রকৃতির, তবে স্পর্শ থেকে পাখির বুকের মতো কবোষ্ণ অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে আমার স্নায়ুতে। তার দেহকে দেখায় সতেজ এক বৃক্ষের মতো একহারা, তবে ঘুণপোকায় কুরে কুরে খেয়ে তার ভিতর বুঝি ফোঁপরা করে দিয়েছে। তার উৎসাহ দেখে মনে হয়, যাওয়া যায় এখনই কেনিয়ানে।

মারিয়াকে নিয়ে শিশুপার্কে যাচ্ছে ইভা। আমি ও গাবরিয়েলা কেনিয়ানে ঘণ্টা দুই বা আড়াই কাটিয়ে ফিরে যাব গেস্ট হাউসে। মারিয়াকে নিয়ে ইভাও ওখানে আসবে। সুতরাং আমি তাকে গেস্ট হাউসের কামরার এক্সট্রা চাবি দেই। সবকিছুর আয়োজনে লুসিয়া হাত লাগায়। এদের সঙ্গে মালসামানা খুবই কম, লুসিয়া ব্যাকপ্যাকগুলো ঘোড়ার স্যাডেলের সঙ্গে বেঁধে দেয়। ইভা ম্লান মুখে হেঁটে গেলে মারিয়া ফিরে আসে। তার হাতে রেডক্রস লেখা প্লাস্টিকের ছোট্ট একটি খেলনা ডাক্তারি ব্যাগ। খুলে তাতে যে স্টেথিস্কপ, থার্মোমিটার, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ— সবকিছু আছে; তা দেখিয়ে সে বলে, ‘মায়ের যদি শরীর খারাপ হয়, তাহলে তুমি তাকে ওষুধ দিও।’ আমি ডাক্তারি ব্যাগটি হাতে নিলে ইভা মারিয়াকে নিয়ে শিশুপার্কের দিকে হাঁটে।

সর্বশেষ খবর