শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহামিলনের মহাযাত্রার অভিযাত্রী...

বিশ্বখ্যাত মসনবি শরিফ

বিশ্বব্যাপী জালালউদ্দিন রুমির খ্যাতি ও পরিচিতির মূলে হলো তার শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ মসনবি। এতে রয়েছে সুফিদর্শন ও আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে পরম করুণাময়ের সান্নিধ্য লাভের পথনির্দেশনা। সুফিতত্ত্ব রুহ বা আত্মার প্রকৃতি, জীবন-মৃত্যু ও জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ রকম প্রতিটি বিষয়ের অভিব্যক্তি রয়েছে এ মসনবিতে। বাস্তব ও কল্পিত কাহিনী, উপকথা, নীতিগল্প, রূপক কাহিনী ও গভীর চিন্তাধারার সমাহারে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিষয়সমূহ হয়ে উঠেছে সহজবোধ্য ও সাবলীল।

বৈষয়িক ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতির অনীহা সৃষ্টি এবং পারলৌকিক জীবনের প্রতি অনুগামী করে তুলতে অনুপ্রেরণার উৎসমূল হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে এ মসনবি শরিফ। যা মুসলিম বিশ্বের সাহিত্যসাধনা, ইসলামী সংস্কৃতি ও দর্শনের বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ। মাওলানা রুমির ২২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই মসনবি শরিফ। যা সুবিশাল ৪০ হাজার লাইনের একটা মহাজ্ঞানের সমাহার। বর্তমান তুরস্কের কুনিয়া শহরে তার সমাধি বিশ্বের আল্লাহ প্রেমিকদের জিয়ারতগাহ। হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, নাসারা, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ মাওলানা রুমির কিতাব নিজস্ব আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য পাঠ করে থাকেন।

 

 

 

কাব্য ও দর্শন

ফারসি সাহিত্যাঙ্গনে যার আলোকচ্ছটায় বিশ্বসাহিত্যে গৌরবান্বিত তিনি জালালউদ্দিন রুমি তাদের অন্যতম। শাম্স-ই তাবরেজের সান্নিধ্য তাকে আধ্যাত্মিকতার পথ পরিভ্রমণে অনুপ্রাণিত করে। কালের আবর্তনে জালালউদ্দিন রুমিই হয়ে ওঠেন ফারসি সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সুফিকবি। আলোড়িত করেন কালের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের মননকে। রুমি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পশ্চিম তুরস্কের কুনিয়ায় অতিবাহিত করেন। ১২৩০ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুতে স্বীয় ওস্তাদ সাইয়্যেদ বুরহানউদ্দিনের সংস্পর্শে এসে আধ্যাত্মিকতার পথে ধাবিত হতে থাকেন।

জালালউদ্দিন রুমির কাব্যপ্রতিভা বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী দুজন খ্যাতিমান কবি হাকিম সানায়ি ও ফরিদউদ্দিন আত্তারের প্রভাব অপরিসীম। ফারসি সাহিত্যে সুফিদর্শনের বিকাশে সানায়ি ও আত্তারের ধারা অনুসরণ করেই রুমি কাব্যচর্চা ও সুফিদর্শন পূর্ণতাদানে ভূমিকা রাখেন। স্বীয় জীবনে তাদের প্রভাব সম্পর্কে রুমি বলেন, ‘আত্তার ছিল প্রাণ এবং সানায়ি তার দুটি চক্ষু; আমরা আত্তার ও সানায়ির পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসেছি।’ অধ্যাপক নিকলসনের মতে, ছয় খণ্ডের পূর্ণাঙ্গ মসনবিতে সর্বমোট ২৫,৬৩২টি পঙিক্ত রয়েছে।

 

সুফি নৃত্য

সুফিবাদ মানুষের হৃদয়কে মহাজাগতিক সম্পর্কের দিকে ধাবিত করে।  ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা অনেক বড় বড় শহরের গঠন, স্থাপত্যিক নকশা এমনকি সংগীতের মৌলিক ধারা— এসব কিছুর সঙ্গে মহাবিশ্বের বিন্যাসের রয়েছে গভীর যোগসূত্র। অনেকের দাবি অনুযায়ী সুফি নৃত্যের সঙ্গে রয়েছে মহাজাগতিক বিন্যাসের অদ্ভুত সম্পর্ক। বিখ্যাত ফারসি কবি এবং দার্শনিক রুমির জীবনাচরণ জানতে শুরু করলেই আপনার সুফি নৃত্যের প্রতি কৌতূহল, বিস্ময় আর ভালোলাগা তৈরি হবে। অনেকে মনে করেন রুমি বিশ্বাস করতেন— সংগীত, কবিতা এবং নাচ পরম করুণাময়ের কাছে পৌঁছানোর একেকটি পন্থা। তার এই বিশ্বাসের পথ ধরেই কালক্রমে সুফি নৃত্য অনুশীলন থেকে অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। সুফি নৃত্যের সূচনা করেন রুমি ভক্তরা যারা মেভলভি নামে পরিচিত। এটি নিজস্ব ভঙ্গিতে পরিচালিত হয় সুফি নৃত্যশৈলী। শুরুতেই একজন দরবেশ অন্য একজন দরবেশের সামনে এসে চোখে চোখ রেখে সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর একজন গুরু মনোনীত করা হয়, যাকে অনুসরণ করে অন্যরা নিজেদের পথ খুঁজে পাবে। এভাবেই এগিয়ে চলে সুফি নৃত্য।

সর্বশেষ খবর