শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশে দেশে রাষ্ট্রনায়ক হত্যাকাণ্ড

মেজর নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ (অব.)

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি জাতির জনক। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে এবং শেষে ১৯৭১ সালে সেই প্রতিবাদ মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী বিশ্বাসঘাতকের হাতে নিহত হন। সেদিন বঙ্গবন্ধুুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, পুত্র লে. শেখ জামাল, কনিষ্ঠ শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজনকে ঘাতকরা হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হওয়ার পর দেশে সামরিক শাসন জারি হয়। ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। এই দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি পালন করে। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বাংলাদেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংঘাতের দিকে টেনে নেয়। সেনা অভ্যুত্থানের নেতারা অল্প দিনের মধ্যেই উচ্ছেদ হয়ে যান এবং অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে সৃষ্টি হয় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়, সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। এই রায়ের মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে চলা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আইনি ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

 

মহাত্মা গান্ধী

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর ভারত এবং পাকিস্তান নামের দুটি দেশের জন্ম হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ মহাত্মা গান্ধী স্বাধীনতার জন্য নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, পেশা, সম্পদ এমনকি অন্ন-বস্ত্রও বিসর্জন দিয়েছিলেন। তবে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তান এবং ভারতের বিভক্তি না ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী দেশ গড়তে। তখন বিভক্তির পক্ষে সোচ্চার পাকিস্তানের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক ঘরোয়া বৈঠকে বলেছিলেন— ‘সবাই তো আর মহাত্মা নয়।’ এই বলে তিনি ঘরের জানালা খুলে গান্ধীকে বলেছিলেন, ‘বাইরে দেখুন।’ মূলত বাইরে তখন চলছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা আর ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নি-সন্ত্রাস। সবাই যে ‘মহাত্মা’ হতে পারে সে ইতিহাসই যেন মহাত্মা গান্ধীর করুণ মৃত্যু।

পুরো নাম মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী হলেও ভারতের জাতির পিতা হিসেবে সবার কাছে তিনি ছিল ‘বাপুজি’ অর্থাৎ বাবা। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে অসামান্য অবদান রেখে ১৯১৪ সালে প্রথম তিনি ‘মহাত্মা’ উপাধি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য সারা বিশ্বে তিনি ‘মহাত্মা’ বা পবিত্র আত্মা নামে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।

ভারতের গুজরাটে সাগরপাড়ের এক হিন্দু ব্যবসায়ী পরিবারে গান্ধীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। লন্ডনে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে তিনি পেশাগত কাজের আশায় পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকায়। বর্ণবাদের বিষবাষ্পের কারণে তিনি যখন কোণঠাসা, তখনই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নেমে পড়েন। তবে সেখানে বেশিদিন থাকা হয়নি তাঁর। ১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলেন ঔপনিবেশিক শাসনে থেকে দেশ ও জাতির কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। তাই শুরু করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, শুরুতেই তিনি কৃষকদের নিয়ে খাজনাবিরোধী আন্দোলন আর শহরের শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯২১ সালে তিনি ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর একে একে স্বরাজ আন্দোলন বা স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ‘ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন’, ‘স্বদেশী’ এবং ‘অহিংস’ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। স্বদেশী আন্দোলন করতে গিয়ে একদা ব্রিটেনের দামি স্যুট কোট পরা এই আইনজীবী সব বিদেশি পোশাক ছেড়ে গায়ে জড়ান তাঁতে বোনা দেশীয় খদ্দরের দু-টুকরা কাপড়। নিজের পানাহারেও তিনি ছিলেন অতিশয় মিতব্যয়ী। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসকদের অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মুখে তিনি ছিলেন ‘অহিংস’ কিন্তু অবিচল। অত্যাচার সহ্য করাই ছিল তার প্রতিবাদের ভাষা। তার অবিচল নেতৃত্বে সমগ্র ভারতবর্ষ এক কাতারে শামিল হলে ব্রিটিশদের পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। ফলে ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি দেশের জন্ম হয়। গান্ধী ভারত বিভাগের বিপক্ষে থাকলেও উগ্র ধর্মীয় হিন্দুদের নিয়ে ভারত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের নিয়ে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সর্বস্বত্যাগী এই নেতার প্রতি ধর্মান্ধ, উগ্র ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো সন্তুষ্ট ছিল না। এদেরই একটি অংশ হিন্দু সম্প্রদায়কে উসকে দেওয়ার জন্য গুজব ছড়ায় যে গান্ধী ভারত বিভাগের সময় মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এতেই তার প্রতি নাখোশ হয়ে ওঠে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়। এদেরই একজন নাথুরাম গডসে। স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ভোর ৫টা ১৭ মিনিটে এক প্রার্থনা সভায় যাওয়ার পথে নাথুরাম গডসে খুব কাছ থেকে ৯ মিলিমিটার ব্যারেটা এম ১৯৩৪ করটো সেমি অটোমেটিক পিস্তল দিয়ে গান্ধীজির বুকে তিনটি গুলি করেন। মুহূর্তেই মৃত্যুবরণ করেন ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয়।

 

অং সান

সাবেক বার্মা অর্থাৎ বর্তমান মিয়ানমারের জনক মেজর জেনারেল অন সান। তার অন্য পরিচয়, তিনি মিয়ানমারের বর্তমান প্রধান স্টেট কাউন্সিলর (প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা) এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে হালের বিতর্কিত নেতা অং সান সু চির পিতা। জেনারেল অং সানের জন্ম ১৯১৫ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের এক রাজনৈতিক পরিবারে। ১৯৩৩ সালে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়। তার ভূমিকার কারণে বৌদ্ধ ভিক্ষু সম্প্রদায় এবং ‘গরিব মানুষের দল’ একত্রে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। এরও আগে তিনি দেশবাসীকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, কোনো ঔপনিবেশিক শক্তি নয়, মিয়ানমারের আসল মালিক দেশের জনগণ। এতে তিনি ‘থাকিন’ অর্থাৎ মালিক বা প্রভু নামে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নেতৃত্বে ‘দোবামা এশিয়ান’ বা ‘আমরা বর্মি অ্যাসোসিয়েশন’ গড়ে ওঠে। ‘ফ্রিডম ব্লক’ নামেও তিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৩৯ সালে তার বলিষ্ঠ ভূমিকায় জন্ম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি অব বার্মা, তিনি ছিলেন এ দলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও পিপলস রেভ্যুলেশনারি পার্টি নামের একটি দলের প্রতিষ্ঠায় তার অসামান্য ভূমিকা ছিল।

মূলত এসব দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করা। এতে তিনি ব্রিটিশ শাসক ও তাদের দোসরদের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়েন। এক পর্যায়ে দেশে টিকতে না পেরে চীনের দিকে পাড়ি জমান। পথে জাপানি দখলদার সেনাবাহিনী তাকে থামিয়ে দেয়। তাদের সাহায্যে তিনি জাপান চলে যান এবং জাপানি সহায়তায় আবার দেশে ফিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জোরদার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি ও তার সমর্থনপুষ্ট বার্মা ন্যাশনাল আর্মি জাপান সেনাবাহিনীকে মিত্র শক্তি তথা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযানে সরাসরি সাহায্য করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা মিয়ানমারে ব্রিটিশ বার্মা যৌথ সরকার গঠন করে। এ সরকারে অং সান প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মিয়ানমারে ব্রিটিশ শাসন শিথিল হয়। বিভিন্ন উপজাতির কোন্দল মিটান এবং ঐক্যবদ্ধ বার্মা গড়ার পথে এগিয়ে যান। ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তার দল বা জোট ২১০টি আসনের মধ্যে ১৭৬টি আসনে জয়লাভ করে। এই দলই পরে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ছায়া সরকার গঠন করে।  এই ছায়া সরকারের মিটিং চলাকালে ১৯৪৭ সালের ১৯ জুলাই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউ স  (U saw)-এর মদদপুষ্ট একদল প্যারামিলিটারি সৈন্য (পুলিশ) সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে এবং অং সানসহ ছয় মন্ত্রীকে হত্যা করে, এতে তার ভাই বা উইন এবং মিয়ানমারের তৎকালীন প্রবাসী সরকারপ্রধান সেন উইলের বাবা নিহত হন। পরবর্তী সময়ে মদদদাতা হিসেবে ইউ সকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

 

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট

তৎকালীন মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্য বা আধুনিক গ্রিসের জাতির পিতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে গ্রিসের। অথচ এই দেশেই এক করুণ মৃত্যুর শিকার হন বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে পিলা নামক স্থানে জন্ম নেন এই গ্রেট। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ সালে তার পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ চতুর্থ স্ত্রীর গর্ভজাত কন্যা ক্লিওপেট্রার বিবাহ অনুষ্ঠানে নিজস্ব দেহরক্ষী প্রধান ক্যাপ্টেন পসানিয়াসের হাতে নিহত হন। ফলে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি পিতা রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের স্থলাভিষিক্ত হন এবং তৎকালীন ম্যাসিডোনের (গ্রিস) শাসনভার গ্রহণ করেন। তার রাজত্বের বেশিরভাগ সময় কাটে সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত গুরু অ্যারিস্টটল থেকে যে শিক্ষা লাভ করেন, তার পুরোটাই বাস্তবে প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন আলেকজান্ডার। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি তার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের তালিকা করেন। এই তালিকায় তার নিকটাত্মীয়, পরাক্রমশালী সেনানায়ক, উপদলীয় প্রধান, আঞ্চলিক প্রধানসহ অনেকের নাম উঠে আসে। বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি তাদের সমূলে নির্মূল করেন, এরপর তিনি এক শক্তিধর সাম্রাজ্য গড়ার নেশায় বিশ্বজয়ে ধাবিত হন। ২০ বছর বয়সেই অর্থাৎ  খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৫ সালে বলকান অঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার অভিযান। এরপর একে একে এশিয়া মাইনর এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু দেশ ও সাম্রাজ্য তার দখলে চলে আসে। ফলে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি হয়ে ওঠেন এক বিশ্বজয়ী পরাক্রমশালী সম্রাট।  খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালের ১০ কিংবা ১১ জুনে মৃত্যু ঘটে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের। তার মৃত্যু নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেলেও অধিকাংশের মতে তার একান্ত বন্ধু এবং সহযোদ্ধাদের নিয়ে আরেক বীরযোদ্ধা হেরা ক্যারসের সম্মানে আয়োজিত এক ভোজসভায় বিষমিশ্রিত মদ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন আলেকজান্ডার। চিকিৎসকদের ১১ দিন সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পাড়ি জমান অনন্ত অসীম আরেক বিশ্বে।

 

জন এফ কেনেডি

১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছিল মার্কিনিদের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডির। কেনেডি ১৯৬১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন এক রাজনৈতিক সফরে যান প্রেসিডেন্ট কেনেডি। তিনি যখন মোটরগাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, সে সময় এক আততায়ী গুলি চালায়। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কেনেডি আধা ঘণ্টা পরে হাসপাতালে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে স্কুল বুক ডিপোজিটোরির ছয়তলা ভবন থেকে তাকে গুলি করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার দিনই ভবনটির গুদামখানার কর্মচারী লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। যদিও অসওয়াল্ড হত্যার দায় স্বীকার করেননি, করাতেও পারেননি। ঠিক তার দুই দিন পর স্থানীয় এক নৈশক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর থেকে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ইতিহাসবিদরা এখনো লি হার্ভে অসওয়াল্ডের ব্যাপারে সন্দিহান। অনেক মার্কিনি বিশ্বাস করেন যে, কেনেডির হত্যার পেছনে কেবল এক ব্যক্তি জড়িত। আবার অনেকেই মনে করেন, কোনো মাফিয়া দল অথবা দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) কেনেডিকে হত্যা করেছে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও ছিল। ‘দে কিল্ড আওয়ার প্রেসিডেন্ট’ বই থেকে পাওয়া যায়, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় যেতে চেয়েছিলেন বলেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়। আবার কিউবার সঙ্গে বে অব পিগসের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সেনা কর্মকর্তা-আইন প্রণেতাদের লেনদেনের চক্রকে ভাঙতে চেয়েছিলেন বলেই।’

সর্বশেষ খবর