শিরোনাম
শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইউরোপের যত মুসলিম স্থাপত্য

ইউরোপের যত মুসলিম স্থাপত্য

দ্য আল হাম্বরা, স্পেন

মুসলিম শাসকরা তাদের সাম্রাজ্য গড়েছিলেন বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের নানা প্রান্তে তারা রেখে এসেছেন গৌরবময় স্মৃতি। ইউরোপজুড়ে মুসলিম স্থাপনা দেখতে এখনো প্রতিদিন ভিড় করেন লাখ লাখ পর্যটক। মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর আসল আকর্ষণ এর দৃষ্টিনন্দন নকশা ও ডিজাইন। এসব স্থাপনার মাঝে ফুটে উঠেছে মুসলমানদের শৌখিন রুচিবোধের প্রকাশ। প্রমাণ দিয়েছে মুসলিম সংস্কৃতি অতীতকাল থেকেই স্থাপনা সংস্কৃতিতে শৌখিন ছিল। শত শত বছর ধরে আপন গৌরবে টিকে আছে এই মুসলিম স্থাপনাগুলো। ইউরোপে যত মুসলিম স্থাপত্য সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিয়ে লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

দ্য আল হাম্বরা, স্পেন

এটি মূলত একটি প্রাসাদ। তবে একে এককথায় যৌগিক দুর্গও বলা হয়। স্পেনের আন্দালুসিয়ার গ্রানাডা নামক স্থানে এই প্রাসাদটি অবস্থিত। স্পেনের মুসলিম নাসরি রাজবংশের শাসনামল চলাকালীন ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। অসাধারণ অলঙ্করণ ও সৌন্দর্যময়তাই প্রাসাদটির মূল আকর্ষণ। যে কোনো দর্শনার্থীর নজর কাড়বে খুব সহজে। বাগান, ঝরনা ও চমৎকার শিল্পসম্মত বিভিন্ন অলঙ্করণ রয়েছে প্রাসাদটির ভিতরে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান নির্বাচন কমিটি ১৯৮৪ সালে ২ নভেম্বর আল হাম্বরাকে মানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

 

রোম মসজিদ, ইতালি

ইসলামিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইতালির রোম মসজিদ। এটি মস্কো দি রোমা নামেও পরিচিত। বিশাল এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ চলে ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। তিন লাখ বিশ হাজার বর্গফুটের মসজিদে একত্রে ১২ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। আফগানিস্তানের রাজপুত্র মুহাম্মদ হাসান ও তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের উদ্যোগে এবং সৌদি আরবের যুবরাজ ফয়সালের অর্থ সহায়তায় মসজিদটি নির্মাণ হয়। নির্মাণ ব্যয় হয় ৪০ মিলিয়ন ইউরো। ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে এটি বেশ আলোচিত হলেও এর স্থপতি দুজন কেউই মুসলমান নন।

 

সেন্ট্রাল মসজিদ, লন্ডন

লন্ডন সেন্ট্রাল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের পাশেই অবস্থিত। স্থপতি ছিলেন ফ্রেদেরিক জিববার্ড। মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। এর প্রধান আকর্ষণ হলো বিশালাকার সোনালি রঙের গম্বুজটি। মসজিদের প্রধান হলরুমে একসঙ্গে ৫ হাজার প্রার্থনাকারী অবস্থান নিতে পারবেন। এখানে নারীদের জন্যও সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের মেঝে মোড়ানো বৃহদাকার একটি কার্পেট দিয়ে। আছে যৎসামান্য কিছু ফার্নিচার। গম্বুজের ভিতরের দিকটি সাজানো হয়েছে ইসলামী ঐতিহ্যের কিছু উদাহরণ দিয়ে। মসজিদ কম্পাউন্ডে ছোট একটি বইয়ের দোকান ও একটি হালাল ক্যাফে আছে।

 

নীল মসজিদ, ইস্তাম্বুল

ভৌগোলিক অবস্থান বলে তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশের অন্তর্গত। তুরস্কের দক্ষিণ-ইউরোপীয় অংশে গোটা ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত। এই শহরের ঐতিহাসিক মসজিদ সুলতান আহমেদ মসজিদ। সুলতান আহমেদ মসজিদটি তুর্কি স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ। ১৯৩৪ সালে ‘হাজিয়া সুফিয়া’-কে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার পর ইস্তাম্বুলের প্রধান মসজিদে পরিণত হয় ব্লু মসজিদ। মসজিদের ভিতরে ঢুকলে মনে হবে সমুদ্র জলরাশির রঙে রাঙানো।

ভিতরের দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাইরে থেকে এই নীল রঙের ঝিলিক দেখে অনেকেই একে বলেন ‘ব্লু মস্ক’ বা নীল মসজিদ। এর মিনার ও গম্বুজগুলো সিসা দ্বারা আচ্ছাদিত এবং মিনারের ওপরে সোনার প্রলেপযুক্ত তামার তৈরি ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির স্থপতি ছিলেন মুহাম্মদ আগা। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদ্রাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত।

 

মেহমেদ পাশা ব্রিজ, বসনিয়া

ইতিহাস জড়ানো বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়ার মেহমেদ পাশা সকলোভিক ব্রিজ। স্থানীয়রা বলেন পাশা ব্রিজ। দক্ষিণ ইউরোপের নির্জন এই দেশের বলকান অঞ্চলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন এই ব্রিজটি। এই ব্রিজ তৈরি করা হয় ১৫৭৭ সালে। স্থাপত্যশৈলীতে তুরস্কের নকশাবিদদের ছোঁয়া পাওয়া যায়। ১১টি ধনুকের মতো বাঁকানো স্তম্ভের প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে নদীর ওপর। কখনো শান্ত, কখনো রুদ্র দ্রিনা নদীর ওপর এই ব্রিজটি এখনো মনে করিয়ে দেয় মুসলিম শাসকদের ঐশ্বর্য ও স্থাপত্যবিদ্যার গৌরবের কথা। ৫৮৯ ফুট দীর্ঘ ব্রিজটি বিখ্যাত স্থপতি মিমাম সিনারের মাস্টারপিস হিসেবে গণ্য হয়।

 

পেনা জাতীয় প্রাসাদ

পর্তুগালের সিন্ট্রা শহরের সাও পেদ্রো ডি পেনাফেরিমে অবস্থিত একটি রোমান্টিকটিস প্রাসাদ পেনা জাতীয় প্রাসাদ। এই স্থাপনায় অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে নব্য গোথিক, নব্য ম্যানুলাইন, নব্য ইসলামী এবং নব্য রেনেসাঁ কারুকাজের সমাবেশ। প্রায় পুরো প্রাসাদটি পাথরের ওপরে অবস্থিত। গঠনগত দিক থেকে প্রাসাদটি চারটি অংশে বিভক্ত। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এই প্রাসাদটি লিসবন এবং শহরের অন্যান্য স্থান থেকে সহজেই দেখা যায়। এটি একটি জাতীয় স্থাপনা এবং এটির মাধ্যমে ১৯ শতকের রোমান্টিসিজমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

 

তোপকাপি প্রাসাদ, তুরস্ক

তুরস্কের তোপকাপি প্রাসাদ ১৪৫০ দশকে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের নির্দেশে নির্মিত হয়। কয়েকটি দালানের সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্যটি প্রায় ৪০০ বছর ধরে ৩০ জন উসমানি সুলতানের প্রশাসনিক দফতর ও আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাসাদ থেকে মর্মর সাগর ও বসফরাস প্রণালির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রাসাদটি প্রথমে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও রাজকীয় বিনোদনস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্মরণচিহ্ন যেমন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আলখাল্লা এবং তরবারি।

সর্বশেষ খবর