শুক্রবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব

সাইফ ইমন

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রম নির্ধারণ করে নাম ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। এ তালিকাটি ৫০০ মুসলিম নামেও পরিচিত। আম্মানে অবস্থিত দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার এ তালিকা তৈরি করে।

 

ম্যান অব দ্য ইয়ার

মাহাথির মোহাম্মদ

বর্ষসেরা মুসলিম পুরুষ (দ্য মুসলিম ম্যান অব দ্য ইয়ার) নির্বাচিত হয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। দ্য মুসলিম ৫০০-এর ১০ম বার্ষিক সংস্করণে তাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়েছে। সেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হলেও বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম ব্যক্তির তালিকায় মাহাথিরের অবস্থান ৪৪ নম্বরে। রয়েল অল আল-বায়েত ইন্সটিটিউট ফর ইসলামিক থট এবং দ্য রয়েল ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার তাদের গবেষণায় প্রকাশিত রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। মাহাথির মোহাম্মদকে ‘লাখে একজন’ হিসেবে বর্ণনা করে মালয়েশিয়ার ১৪তম নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রশংসা করা হয়েছে। মাহাথির মোহাম্মদ আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবেও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। গত বছর দেশটির ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে ফের ক্ষমতার মসনদে আরোহন করেন তিনি। ফলে তাকে নিয়ে গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। মালয়েশিয়ার মানুষ এই মহান নেতার ওপর আস্থা রাখে যার প্রতিফলন ঘটে নির্বাচনে। ২২২টি সংসদীয় আসনের ১১৫টিতে জয় পেয়ে হারিয়েছেন তার শিষ্য নাজিব তুন রাজাককে।

 

ওম্যান অব দ্য ইয়ার

আহেদ তামিমি

২০১৮ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আহেদ তামিমিকে উইমেন অব দ্য ইয়ার নির্বাচন করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের গালে চড় মেরে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠেন এই ফিলিস্তিনের কিশোরী আহেদ তামিমি। আর তাই দ্য মুসলিম ৫০০-এর ২০১৯ সালের সংখ্যায় তাকে নির্বাচিত করা হয়। এটি প্রকাশ করে জর্দানভিত্তিক রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার। আহেদ তামিমি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলবিরোধী সাহসিকতার জন্য আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন । তাকে ইসরাইলের কারাগারে নেয়া হয়। মার্চে সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয় জরিমানাসহ আট মাসের কারাদণ্ড। এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিদের নিয়ে করা এই তালিকাটি ৫০০ জন মুসলিম নামেও পরিচিত। আম্মানে অবস্থিত দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠান এ তালিকা  তৈরি করে।

 

রিসেপ তায়িপ এরদোগান

 প্রেসিডেন্ট, তুরস্ক

রিসেপ তায়িপ এরদোগান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি। ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এরদোগান। তিনিই ২০০৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব। ২০০১ সালে তিনি জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। বিভিন্ন কারণে বিশ্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। তার দল তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে টানা ৪ বার সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়।

 

 

সালমান বিন আবদুুল আজিজ

 বাদশাহ, সৌদি আরব

বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ। তিনি ২০১১ সাল থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে¡ ছিলেন। তারও আগে ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। বাদসাহ সালমান ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি তার সৎভাই বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ২য় অবস্থানে রয়েছেন। সৌদি বাদশাহ হিসেবে তিনি পবিত্র কাবা শরিফেরও প্রধান। 

 

 

আবদুল্লাহ ইবনে আল হোসাইন

বাদশাহ, জর্ডান

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি। তিনিই জর্ডানের বর্তমান বাদশাহ। তার বাবা হুসাইন বিন তালাল মারা যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৩য় অবস্থানে রয়েছেন তিনি।

তার পূর্বপুরুষদের বলা হয় হাশিমি রাজপরিবার। এই পরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। এই পরিবারের সদস্যদের মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর বংশধর বলা হয়। বাদশাহ হুসাইন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুনা আল-হুসাইনের সন্তান বর্তমান এই জর্দানের বাদশাহ।  

 

আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী খামেনি

সর্বোচ্চ ধর্মীয়নেতা, ইরান

আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী হোসেনী খামেনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালের ১৭ জুলাই। তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ইরানের ৮ কোটি শিয়া মুসলমানের আধ্যাত্মিক নেতা।

তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৪র্থ অবস্থানে রয়েছেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৮১ থেকে ৩ আগস্ট ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি ইরানের ৩য় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফোর্বস সাময়িকীর ২০১২ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ২১ জনের তালিকায় তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন। খামেনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সমর্থক।

 

বাদশাহ মোহাম্মদ ষষ্ঠ

বাদশাহ, মরক্কো

কিং মোহাম্মদ ষষ্ঠ জন্মগ্রহণ করেন ১৩৬৩ সালের ২১ আগস্ট। তিনিই হলেন মরক্কোর বর্তমান বাদশাহ। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৫ম অবস্থানে রয়েছেন মরক্কোর এই বাদশাহ। তার পিতা মরক্কোর বাদশা ২য় হোসাইনের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মরক্কোর এই বাদশাহ মোহাম্মদ হলেন বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী লায়লা লতিফা হাম্মউয়ের প্রথম সন্তান। জন্মের দিনই মোহাম্মদ রাজ্যের উত্তরাধিকারী এবং রাজপুত্র ঘোষিত হন। তাকে শিশুকাল থেকেই ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়।

 

 

মুফতি মুহাম্মদ ত্বকী উসমানী

প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, পাকিস্তান

বিচারপতি মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ ত্বকী উসমানী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালে। পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি হাদিস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। এছাড়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরিয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

 

 

আলী আল সিস্তানি

শিয়া প্রধান, ইরাক

শিয়া মতবাদের অনুসারীদের একজন ধর্মীয় ইমামের অনুসারি হতে হয়। আরবিতে এ ধরনের পদ্ধতিকে বলা হয় ‘মারজা’। এই নিয়মেই শিয়াদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ ‘আয়াতুল্লাহ’ নির্বাচন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কুম শহরে দু’জন ‘আয়াতুল্লাহ’ ধর্মীয় অনুশাসনের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। নাজাফের হাজার বছরের পুরোনো শিয়া ইমামতন্ত্রের প্রধান হিসেবে রয়েছেন সিস্তানি। সে হিসেবে ইরাকের সব শিয়াদের ধর্মীয় নেতা তিনি। বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার ৭ম অবস্থানে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলী আল সিস্তানি।

 

 

ওমর বিন হাফিজ আলী

আধ্যাত্মিক নেতা, ইয়ামেন

শায়খ আল হাবিব ওমর বিন হাফিজ অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তিনি ইয়েমেনের তারিমে অবস্থিত ‘দারুল মুস্তাফা’ সংস্থার পরিচালক। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক বিভিন্ন রচনাকর্ম ও আয়োজনের কারণে তিনি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব তালিকায় এবারই প্রথম স্থান পেয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মিয় বিষয়ের ওপর বয়ান দিয়েও তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ইউটিউব থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে তার বয়ানের ভিডিও দেখছেন কোটি কোটি মানুষ। আর এ জন্য প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় তিনি অবস্থান করছেন।

সর্বশেষ খবর