শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রকাশকের প্রত্যাশা

অমর একুশে বইমেলায় প্রতিবছর নতুন নতুন বই প্রকাশ হয়। পাঠকদের হাতে প্রিয় লেখকের বই তুলে দেন প্রকাশক। এবারের বইমেলা নিয়ে কয়েকজন প্রকাশকের প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশার দিকগুলো তুলে ধরা হলো।

 

ওসমান গনি

স্বত্বাধিকারী, আগামী প্রকাশনী

অমর একুশে বইমেলায় এ বছর আগামী প্রকাশনী ৭৫টি বই প্রকাশ করছে। প্রথম দিনে হাসনাত আবদুল হাই, এম আবদুল আলীমসহ একাধিক লেখকের নতুন বই পাওয়া যাবে। মেলায় যারা গাড়ি নিয়ে আসে তাদের জন্য একটু সমস্যা আছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বদিকের গেট খুলে দেওয়া হলে ভালো হতো। এবার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সম্ভব হয়নি। আশা করি, আগামীতে উদ্যানের পূর্বদিকের গেট খুলে দেওয়া হবে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশনা শিল্প বিকশিত হয়েছে। তবে ভুঁইফোড় প্রকাশকও জন্মেছে প্রচুর। তাদের কারণে পেশাদার প্রকাশকদের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পেশাদার প্রকাশক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সবার নজর দিতে হবে। আমরা আশা করছি, অন্য বারের চেয়ে এ বছর সুন্দর একটি বইমেলা হবে।

 

আহমেদ মাহমুদুল হক

স্বত্বাধিকারী, মাওলা ব্রাদার্স

মাওলা ব্রাদার্স এ বছর ৮০টি বই প্রকাশ করছে। বেশির ভাগ বই ছাপা সম্পন্ন হয়েছে। পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আমরা বছরজুড়ে বই প্রকাশ করি। পাঠক বইমেলায় এসে টাকা খরচ করে যেন তার পছন্দের বইটি কিনতে পারেন। বই কিনে পাঠকের আনন্দ ও জ্ঞান দুটোই যেন প্রাপ্তি হয়। বেসরকারি উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলা আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। আরও উন্নতির জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। সরকার দেশব্যাপী লাইব্রেরি উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে প্রকাশনা শিল্প আরও ভালো করবে। বইমেলায় প্রচুর মানহীন বই প্রকাশিত হয়। সম্পাদনায় ত্র“টি থাকে। এক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। তবে বাংলাদেশের বইয়ের ছাপা, বাইন্ডিং, প্রচ্ছদ দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বইমেলা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

 

মাজহারুল ইসলাম

স্বত্বাধিকারী, অন্যপ্রকাশ

অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় উৎসব। বইমেলায় নতুন নতুন বই প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীলতার প্রকাশ পায়। জ্ঞানপিপাসু পাঠক বছরের এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। তারা বইমেলায় এসে পছন্দের লেখকের বই কেনেন। হুমায়ূন আহমেদ বইমেলার নতুন একটি মাত্রা দিয়েছিলেন। পাঠকরা লাইন ধরে তাঁর বই কিনত। তার প্রয়াণের পরও আমরা তাঁকে বিশেষভাবে মনে করি। আমরা ৭০টি নতুন বই প্রকাশ করছি। এ বছর স্টল বিন্যাস ভালো হয়েছে। তবে কিছু কিছু অপ্রকাশক মেলায় স্টল পেয়েছে। বাংলাদেশে প্রকাশিত বই এখন আন্তর্জাতিক বইমেলায় যাচ্ছে। আমাদের প্রকাশিত বই প্রশংসিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রকাশকদের আরও আন্তরিক হতে হবে। আশা করছি, এবার খুব ভালো একটি বইমেলা হবে।

 

সাঈদ বারী

স্বত্বাধিকারী, সূচীপত্র

সূচীপত্র এ বছর ৬০টি নতুন বই প্রকাশ করছে। তবে বইমেলার স্টল বিন্যাস ভালো হয়নি। আমার স্টলের সামনে তিনটি গাছ পড়েছে। পাঠকদের স্টলে এসে বই দেখতে ও কিনতে অসুবিধা হবে। এবার শুনেছি স্থপতি এনামুল কবির নির্ঝর মেলা কমিটিতে কাজ করেছেন। তারপরও নতুনত্ব বলে তেমন কিছুই নেই। মানুষের মেলায় প্রবেশ করতে অসুবিধা হবে। কলকাতা বইমেলায় ৯টি প্রবেশ পথ থাকে। আমাদের মেলায় প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা দরকার ছিল। মেলার ব্যাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। বইমেলা নিয়ে আরও আগে থেকে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ বইমেলার মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীল চিন্তার একটা প্রতিফলন হয়। সুতরাং বইমেলাকে নান্দনিকভাবে সাজানো জরুরি। যাতে পাঠক স্বাচ্ছন্দ্যে তার বই কিনতে পারেন।

 

মো. শাহাদাত হোসেন

স্বত্বাধিকারী, অন্বেষা প্রকাশন

অন্য বারের তুলনায় এবারের অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি ভালো। এ বছর অন্বেষা প্রকাশন ৬০টি বই প্রকাশ করবে। প্রথম দিনেই পাওয়া যাবে অনেক নতুন বই। মেলার প্রথম দিন পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই নতুন বই। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। এজন্য বইমেলা নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠা নেই। পাঠকরা স্বাচ্ছন্দ্যে বইমেলায় এসে বই কিনতে পারবেন। মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবেন। স্টল বিন্যাস নিয়ে আমরা খুশি। মেলায় শিশু-কিশোর থেকে বয়স্ক মানুষও আসেন। পাঠকের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দরকার। এবার জায়গা বাড়ানো হয়েছে। শিশু-কিশোর থেকে সব ধরনের পাঠক মেলায় এসে পছন্দের বই কিনতে পারবেন। আশা করি জমজমাট একটি বইমেলা হবে। সুন্দর একটি মেলা হবে।

 

তারিকুল ইসলাম রনি

স্বত্বাধিকারী, তাম্রলিপি

অমর একুশে বইমেলায় তাম্রলিপি থেকে ৭০টি বই প্রকাশিত হবে। মেলার প্রথম দিনেই পাওয়া যাবে বেশকিছু নতুন বই। আমরা দেশের খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি নতুনদের বইও প্রকাশ করি। আসলে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এবার বইমেলার পরিসর বেড়েছে। ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মৌসুমি প্রকাশক। যারা গুণগত মানের বই প্রকাশ করে না তাদের থেকে পাঠক এমনিতেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। অন্যদিকে যারা গুণগত মানের বই প্রকাশ করে তারা সব সময় পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়। এ বছর একটি পরিকল্পিত বইমেলা হতে যাচ্ছে। শিশুদের জন্য চমৎকার জায়গা রাখা হয়েছে। পাঠক এসে তাদের পছন্দের বই কিনতে পারবেন। মেলায় ঘুরেও আনন্দ পাবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর