শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বখ্যাত মুসলিম স্থাপত্য

বিশ্বখ্যাত মুসলিম স্থাপত্য

মুসলিম শাসকরা তাদের সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিলেন গোটা বিশ্বে। তাই ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে রয়েছে মসজিদ, রওজা, রাজপ্রাসাদ, দুর্গ, সেতুসহ বিভিন্ন ধরনের দালান। পারস্য অঞ্চলের পাশাপাশি ইসলামিক স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছিল ইউরোপ থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত। অটোমান  সাম্রাজ্যের বিস্তার ইসলামিক স্থাপনাকে নিয়ে গিয়েছিল অন্যমাত্রায়। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি ইসলামিক স্থাপনাগুলো সভ্যতা ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শত, সহস্র ইসলামিক স্থাপনার মধ্য থেকে কয়েকটি নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

মেহমেদ পাশা ব্রিজ  [বসনিয়া]

ইতিহাস জড়ানো মেহমেদ পাশা সকলোভিক ব্রিজ। স্থানীয়রা বলেন, পাশা ব্রিজ। দক্ষিণ ইউরোপের নির্জন এক দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া। বলকান অঞ্চলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের সঙ্গে ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন এই সেতুটি। অটোমান সাম্রাজ্যের গৌরব মাখানো ব্রিজ এটি। এই ব্রিজটি তৈরি করা হয় ১৫৭৭ সালে। স্থাপত্যশৈলীতে তুরস্কের নকশাবিদদের ছোঁয়া পাওয়া যায়। ১১টি ধনুকের মতো বাঁকানো স্তম্ভের প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে নদীর ওপর। কখনো শান্ত, কখনো রুদ্র দ্রিনা নদীর ওপর এই ব্রিজটি এখনো মনে করিয়ে দেয় মুসলিম শাসকদের ঐশ্বর্য ও স্থাপত্যবিদ্যার গৌরবের কথা। ৫৮৯ ফুট দীর্ঘ ব্রিজটি বিখ্যাত স্থপতি মিমাম সিনারের মাস্টারপিস হিসেবে গণ্য।

 

রোম মসজিদ [ইতালি]

খ্রিস্টানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ রোমেই রয়েছে ইসলামিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন রোম মসজিদ। বিশাল এই মসজিদটিকে ডাকা হয় মস্কো দি রোমা নামে। বিশাল এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে শুরু হয়ে ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তিন লাখ বিশ হাজার বর্গফুটের এই মসজিদটি একত্রে ১২ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। আফগানিস্তানের রাজপুত্র মুহাম্মদ হাসান ও তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের উদ্যোগের পাশাপাশি সৌদি আরবের যুবরাজ ফয়সাল এই মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা করেন। ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে এটি বেশ আলোচিত হলেও এর স্থপতি দুজন কেউই মুসলমান নন।

 

 

আল হাম্বরা [স্পেন]

স্পেনের আন্দালুসিয়ার গ্রানাডা শহর। শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের আসসাবিকা পাহাড়ের ওপর রয়েছে এক দুর্গ। প্রাসাদও রয়েছে দুর্গের ভিতর। পুরো জায়গাটিকে বলা হয় আল হাম্বরা। ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে আন্দালুসিয়া গ্রানাডা আমিরাতের মরিশ শাসকরা নির্মাণ করেন। আল হাম্বরা প্রাসাদটি নাসরি রাজবংশের শাসনকালে তৈরি করা হয়েছিল। তখন এটি রাজার বাসস্থান এবং রাজসভা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১২৩৮ সালে, মুহাম্মদ ইবনে নাসর গ্রানাডা দখলের জন্য এলভিয়ার দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন এবং তিনি এর নাম দেন আল-হামার যার অর্থ লাল, কারণ তার দাড়ির রং ছিল লাল। এত বিশাল প্রাসাদ ও দুর্গ নির্মাণের জন্য কোনো নকশাবিদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। তাই এটির অবিন্যস্ত গঠন দেখে অনেকেই বিস্মিত হন।

 

নীল মসজিদ [ইস্তাম্বুল]

তুরস্কের দক্ষিণ-ইউরোপীয় অংশে গোটা ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত। এই শহরের ঐতিহাসিক মসজিদ সুলতান আহমেদ মসজিদ। ১৯৩৪ সালে ‘হাজিয়া সুফিয়া’-কে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার পর ইস্তাম্বুলের প্রধান মসজিদে পরিণত হয় ব্ল– মসজিদ। মসজিদের ভিতরে ঢুকলে মনে হবে সমুদ্র জলরাশির রঙে রাঙানো।

ভিতরের দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাইরে থেকে এই নীল রঙের ঝিলিক দেখে অনেকেই একে বলেন ‘ব্লু মস্ক’ বা নীল মসজিদ। এর মিনার ও গম্বুজগুলো সিসা দ্বারা আচ্ছাদিত এবং মিনারের ওপরে সোনার প্রলেপযুক্ত তামার তৈরি ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির স্থপতি ছিলেন মুহাম্মদ আগা। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদ্রাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত।

 

 

 

 

 

পেনা জাতীয় প্রাসাদ [পর্তুগাল]

পর্তুগালের সিন্ট্রা শহরের সাও পেদ্রো ডি পেনাফেরিমে অবস্থিত একটি রোমান্টিকটিস প্রাসাদ পেনা জাতীয় প্রাসাদ। এই স্থাপনায় অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে নব্য গোথিক, নব্য ম্যানুলাইন, নব্য ইসলামী এবং নব্য রেনেসাঁ কারুকাজের সমাবেশ।

প্রায় পুরো প্রাসাদটি পাথরের ওপরে অবস্থিত। গঠনগত দিক থেকে প্রাসাদটি চারটি অংশে বিভক্ত। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এই প্রাসাদটি লিসবন এবং শহরের অন্যান্য স্থান থেকে সহজেই দেখা যায়। এটি একটি জাতীয় স্থাপনা এবং এটির মাধ্যমে ১৯ শতকের রোমান্টিসিজমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

 

 

তোপকাপি প্রাসাদ [তুরস্ক]

তুরস্কের তোপকাপি প্রাসাদ ১৪৫০ দশকে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের নির্দেশে নির্মিত হয়। কয়েকটি দালানের সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্যটি প্রায় ৪০০ বছর ধরে ৩০ জন উসমানি সুলতানের প্রশাসনিক দফতর ও আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাসাদ থেকে মর্মর সাগর ও বসফরাস প্রণালির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রাসাদটি প্রথমে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও রাজকীয় বিনোদনস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্মরণচিহ্ন যেমন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আলখাল্লা এবং তরবারি।

 

 

সেন্ট্রাল মসজিদ [লন্ডন]

লন্ডন সেন্ট্রাল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের পাশেই অবস্থিত। স্থপতি ছিলেন ফ্রেদেরিক জিববার্ড। মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। এর প্রধান আকর্ষণ হলো বিশালাকার সোনালি রঙের গম্বুজটি। মসজিদের প্রধান হলরুমে একসঙ্গে ৫ হাজার প্রার্থনাকারী অবস্থান নিতে পারবেন। এখানে নারীদের জন্যও সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের মেঝে মোড়ানো বৃহদাকার একটি কার্পেট দিয়ে। আছে যৎসামান্য কিছু ফার্নিচার। গম্বুজের ভিতরের দিকটি সাজানো হয়েছে ইসলামী ঐতিহ্যের কিছু উদাহরণ দিয়ে। মসজিদ কম্পাউন্ডে ছোট একটি বইয়ের দোকান ও একটি হালাল ক্যাফে আছে।

সর্বশেষ খবর