শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুসলিম বিশ্বে নারী সৈন্য

মুসলিম বিশ্বে নারী সৈন্য

একটা সময় ছিল, যখন একটি মারণাস্ত্র নিয়ে নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল কল্পনাতীত। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে কোনো যুদ্ধে চরম মূল্য দিতে হয় সে দেশের অসহায় নারীদের। আজ বাস্তবতা পাল্টে গেছে। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানতালে লড়ছে নারী সৈন্য। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্বের নারী সৈন্যরা। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে তাদের অবদানকে স্মরণ করেছেন-  মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

 

মালয়েশিয়া

আধুনিক ও উদার মুসলিম দেশে চৌকস তারা

একটি আধুনিক এবং উদার মুসলিম সমাজের জন্য সুনাম রয়েছে মালয়েশিয়ার। এ দেশের সেনাবাহিনীতে প্রায় নব্বই হাজার নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি রয়েছে তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্য। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল আহামাদ হাসবুল্লাহ মোহাম্মদ নাওয়ায়ি বলেন, মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা ১৩%। অথচ মাত্র ১০% লক্ষ্যমাত্রা ধরে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ‘ওমেন ওয়ারিয়রস অব দ্য আর্মি’ বা সেনাবাহিনীতে নারী যোদ্ধা শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল তানশ্রী জুলকাইপ্লি কাশিম। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি ষাটের দশক থেকে অদ্যাবধি মালয়েশিয়ান সেনাবাহিনীতে নারীর সাহসী ভূমিকার ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্তি করে বলেন, সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন শুধু নারী সৈন্যদের নিয়ে একটি কমান্ডো ইউনিট গড়ে উঠবে। অথচ একটা সময় ছিল যখন শুধু দাফতরিক কাজ করার জন্য ক্লার্ক হিসেবে নারীদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হতো। অথচ আজ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে সক্ষমতা ও যোগ্যতার বিচারে সমানতালে এগিয়ে চলেছে মালয়েশিয়ার নারীরা। ২০১৭ সালের জুন মাসে মালয়েশিয়া বিমান বাহিনীর পাইলট (মেজর সমতুল্য) প্যাট্রিসিয়া ইয়াপ সু (উইন) সফলভাবে মিগ-২৯ উড়িয়ে এশিয়ার (কারও মতে বিশ্বের) প্রথম মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের পাইলট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তিনি পুরুষ বৈমানিকের সঙ্গে সমানতালে বিমান চালিয়ে এয়ার এরোবেটিক্স বা বিমান মহড়ায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দ্য রয়্যাল মালয়েশিয়ান নেভিতে সর্বপ্রথম ক্যাপ্টেনের র‌্যাংক পরিধান করেন ৫৪ বছর বয়সী মুসলিম নারী রোহানা জুপরি। তিনিই নৌবাহিনীতে নারীদের মধ্যে প্রথম কমান্ড লাভ করেন। অথচ বর্তমানে চার সন্তানের জননী এই নারী যখন ৩৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন, তখন নারী হয়ে এতদূর আসা অকল্পানীয়ই ছিল। নারীদের উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো আমরা (নারীরা) পুরুষদের মতো একই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি এবং একই রেশন খেয়েছি। এখন প্রয়োজন আমাদের (নারীর) যোগ্যতা প্রমাণ করা।

 

ইন্দোনেশিয়া

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে প্রশংসিত

বিশ্বের বুকে সর্বাধিক মুসলমানের বসবাস ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক অঞ্চলে। এশিয়া-প্যাসিফিক নামে অধিক পরিচিত এই অঞ্চলে বিশ্বের প্রায় ৬২% মুসলমানের বাস। এই অঞ্চলের অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ২৭ কোটি, যার ৮৭% মুসলমান। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৫% নারী। এই হিসাবে ইন্দোনেশিয়ায় মোট নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তেরো কোটি। যা পৃথিবীর এক বা একাধিক দেশের মোট জনসংখ্যারও বেশি। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর নিয়মিত বা অ্যাকটিভ সৈন্যসংখ্যা প্রায় চার লাখ হলেও ১৬ থেকে ৪৯ বছরের পুরুষদের মধ্যে প্রায় আট কোটি পুরুষ বাধ্যতামূলকভাবে কিংবা স্বেচ্ছায় মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে তালিকাভুক্ত। পুরুষের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া সে দেশের নারীদের জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি করে ১৯৯২ সালে। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীতে নারীদের যোগদানের নেপথ্যে রয়েছে ‘সান্তা ক্রুজ ম্যাসাকার’ নামে পরিচিত এক করুণ উপাখ্যান। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার সেনারা পার্শ্ববর্তী ইস্ট তিমুর দখল করে। ১৯৯১ সালের ১২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার দখলের বিরুদ্ধে রাজধানী দিলির একটি গির্জায় সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ। প্রথমদিকে উভয়পক্ষের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটলেও ক্রমেই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরই মধ্যে ইস্ট তিমুরের পতাকা নিয়ে একটি মেয়ে সৈন্যদের সামনে দাঁড়ালে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় ইন্দোনেশিয়ার সৈন্যরা। এতে প্রাণ হারায় ২৫০ জনেরও বেশি ইস্ট তিমুরবাসী। এই করুণ ঘটনার পরপরই ইন্দোনেশিয়ার নিজ ভূখণ্ডের আচেহ প্রদেশসহ বেশ কিছু স্থানে ইনসারজেন্সি বা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে সৈন্যসংখ্যা বাড়ানোসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারীর অন্তর্ভুক্তি। একদা ইন্দোনেশিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি অ্যাডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (আইএমইটি) আওতায় ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সে দেশে একে একে গড়ে ওঠে ওমেন্স আর্মি কোর, ওমেন্স নেভাল সার্ভিস এবং দ্য এয়ারফোর্স ওমেন্স সার্ভিস কোর। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় সে দেশের নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য গড়ে উঠেছে ওমেন্স আর্মি কোর ট্রেনিং স্কুল। প্রথম দিকে নারী সেনাদের দায়িত্ব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, ইংরেজি শিক্ষা প্রদান এবং সেনাসদস্য ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থান উন্নয়নের কৌশল শেখানোর মধ্যে সীমিত ছিল। ক্রমান্বয়ে তাদের এই দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। আজ তারা যে কেবল সেনানিবাসে কর্মরত তা নয়, আজ ইন্দোনেশিয়ার নারী সেনা কর্মকর্তারা বেসামরিক প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিপুণতার সঙ্গে কাজ করছে। অন্যদিকে তারা জাতিসংঘের অধীনে কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাতিসংঘের কম্বোডিয়া শান্তি মিশনে তাদের প্রথম উপস্থিতি দেখা যায়। পরবর্তীতে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সোমালিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশে তাদের কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হয়।

 

সৌদি আরব

পবিত্র শহর ও দেশরক্ষায় বিশ্বজুড়ে আলোচিত

ইসলামের পবিত্রতম দুটি নগরী মক্কা ও মদিনা নিয়ে গড়ে উঠেছে সৌদি আরব। ১৯৯০-৯১ সালে ইরাক কর্তৃক কুয়েত এবং সৌদি আরবের খাকজি এলাকা দখল হলে সৌদি অনুরোধে মার্কিন সেনাদের অধীনে গড়ে ওঠে বহুজাতিক বাহিনী। এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল অসংখ্য মার্কিন ও ব্রিটিশ নারী সৈন্য, যারা সরাসরি ইরাকিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আর পুরো যুদ্ধে সহায়তা করেছে পৃথিবীর বহু দেশের সৈন্য, যাদের অনেকেই ছিল নারী। রক্ষণশীল সৌদি সমাজ সেদিন নিজ ভূখণ্ডে  বিদেশি নারী সৈন্যদের অবস্থান ও অবদান মেনে নিলেও নিজ দেশের নারীদের কাজ করার খুব একটা সুযোগ ছিল না দেশটিতে। নারীদের মন্ত্রীর পদ লাভ এমনকি ভোটাধিকারও ছিল কল্পনার বাইরে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন সৌদি বাদশা আবদুল আজিজ দেশের পৌরসভা বা স্থানীয় নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ও ভোট প্রদানের সুযোগ করে দেন। রাজতন্ত্রের এ দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচন নিয়েই সৌদি নারীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বহুল আলোচিত সংস্কার পরিকল্পনা ‘ভিশন-২০৩০’ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হলেন বর্তমান বিশ্বের আলোড়ন সৃষ্টিকারী সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। যার সংক্ষিপ্ত বা ছদ্ম পরিচয় এমবিএস হিসেবে। বিনিয়োগ বাড়ানো, বিনোদন ও অবকাশ যাপনের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি তেলের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে আয় বাড়ানোসহ নারীর অধিকার রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পায় ভিশন-২০৩০ এ। এ ভিশনের আলোকে ২০১৭ সালের শুরুতে সৌদি আরবের সরকারি স্কুলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের শরীরচর্চা ক্লাস ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এর এক বছর পর সৌদি শূরা কাউন্সিলের নারী সদস্য ইকবাল দারান্দারি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রতিরক্ষা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে নারী ও পুরুষের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, প্রকৃতিগতভাবেই সৌদি নারীরা শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং সাহসী। এখন উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারা দেশ ও জাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। ইকবাল দারান্দারির এই আহ্বানের পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণের ঘোষণা আসে। এতে বলা হয়, ১২টি শর্ত পূরণ করলে সৌদি নারীরা সে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। হাইস্কুল ডিপ্লোমা পাসের পর ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের নারীরা সৌদি আরবের ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে সাতটি অঞ্চলে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অন্তর্র্ভুক্ত হতে পারবে বলে এ ঘোষণায় বলা হয়। এ সাতটি অঞ্চলের অন্যতম মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, আসির, আলবাহা ও ইস্টার্ন প্রভিন্স। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এ সাতটি অঞ্চলের রণকৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এসব অঞ্চলের সঙ্গে অন্য দেশের সীমান্ত ও সমুদ্র থাকায় সামরিক দিক থেকে এখানে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। একই বছর জুন মাসে সৌদি বর্ডার গার্ড বা সীমান্ত বাহিনীতে নারীদের নিরাপত্তা পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরিসংখ্যান অনুসারে সৌদি আরবে স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষিত জনসংখ্যার প্রায় ৫০% নারী। অথচ স্নাতক সম্পন্ন সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে মাত্র ২২% নারী, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারী অন্তর্র্ভুক্তির সাম্প্রতিক এই সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখবে বলে আশা করে দেশের প্রগতিশীল নারী সমাজ।

 

পাকিস্তান

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ রক্ষায় এগিয়ে

১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খান। স্বাধীনতা লাভের পরপরই উভয় দেশ জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্নে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুটি দেশই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অনুভব করে। লিয়াকত আলী খানের স্ত্রী বেগম রায়আনা তৎকালীন ফার্স্ট লেডি হিসেবে ১৯৪৭ সালেই সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানি নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি থেকে আগত জেনারেল ফ্র্যাংক মেজরভি, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেনারেল ফ্র্যাংক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন। কিন্তু ফার্স্ট লেডি বেগম রায়আনার অদম্য চেষ্টায় ১৯৪৭ সালেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে প্রথম নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে পাকিস্তান আর্মি ওমেন ন্যাশনাল গার্ড তৈরি করেন এবং নিজে সম্মানসূচক ব্রিগেডিয়ার পদবি ধারণ করে একজন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসিও) পদমর্যাদায় এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। ২০০২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে সর্বপ্রথম টুস্টার জেনারেল হন মেজর জেনারেল শাহীদা মালিক। আর ২০১৫ সালে একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টেরিটরি কেয়ার হাসপাতালের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নারীদের কমান্ড করার নজির তৈরি হয়। ১৯৭১ সালে পরাজয় বরণের পর থেকে পাকিস্তান তার সেনাবাহিনীর পরিসর বাড়াতে সচেষ্ট থাকে। এ সময় মেডিকেল কোরের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরেও নারীর অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ২০০৪ সাল থেকে যুদ্ধবিষয়ক প্রশিক্ষণে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। ২০১৩ সালের ১৪ জুলাই ২৪ জন নারী যোদ্ধা পাকিস্তানের প্যারাসুট ট্রেনিং স্কুলে প্যারাসুট ব্যবহার করে আকাশ থেকে সাফল্যের সঙ্গে মাটিতে নামেন। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারের সংখ্যা প্রায় ৪০০০ যার মধ্যে প্রায় ৩০০০ নারীই আর্মড ফোর্সেস নার্সিং সার্ভিসেসে (AFNS) কর্মরত। আর ডাক্তার হিসেবে কর্মরত প্রায় ৬০০ জন। ২০০৬ সাল থেকে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে মূলত সিগন্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন প্রদানের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরের বাইরে কর্মরত নারী সেনা অফিসারের সংখ্যা ৪০০ অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে ২০০৩ সাল থেকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অফিসার পদে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে নিয়মিত যোগ দিতে থাকে পাকিস্তানের নারীরা। প্রথম বছরেই ৭২ জন পুরুষের পাশাপাশি ৫৩ জন নারী পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর