২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০৯:৫৮

'লাদেন আমাদের হিরো ছিল'

অনলাইন ডেস্ক

'লাদেন আমাদের হিরো ছিল'

সন্ত্রাসের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিজেদের স্থায়ী আসনের দাবিতে যখন উঠে পড়ে লেগেছে দিল্লি, ঠিক সেই সময় অযাচিতভাবে একটি নতুন অস্ত্র হাতে এল সাউথ ব্লকের।

ভারত-বিরোধী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে ভারত-বিরোধী ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গিদলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং সমর্থন করেছে তার সরকার। মোশাররফের দাবি, ৮০-র দশকের শেষে কাশ্মীরে নির্মম গণহত্যা চালাচ্ছিল ভারতীয় সেনা। আর তাই কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছিল পাকিস্তান।

এমনকি তালিবান ও ওসামা বিন লাদেনকে যে পাকিস্তান সাহায্য-সহযোগিতা করত, সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক। মোশাররফ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের হাত ধরেই ধর্মীয় উগ্রপন্থার শুরু। তার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘আমরাই তালিবানকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম। তালিবান, হক্কানি, ওসামা বিন লাদেন, জাওয়াহিরি সে সময় আমাদের হিরো ছিল। পরে না-হয় তারা ভিলেন হয়ে যায়।’’

রবিবার পাকিস্তানের একটি নিউজ চ্যানেল মোশাররফের সাক্ষাৎকার নেয়। মোশাররফকে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সাইদ এবং জাকিউর রহমান লখভির বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। ভারতের চোখে সইদ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। কিন্তু সেই সাইদ পাকিস্তানের মাটিতে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে বলে অভিযোগ। লখভিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঠিকই। তবে চলতি বছরের শুরুতে জামিন পেয়ে যায় সে।

সাইদ-লখভি প্রসঙ্গে মুশারফ বলেন, ‘‘৯০-এর দশকে স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়েছিল কাশ্মীরে। সে সময়ই লস্কর-ই-তইবা-সহ ১১-১২টি সংগঠন গড়ে ওঠে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে লড়াই করছিল ওরা। তাই ওদের সাহায্য করেছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’’ মোশাররফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান তখন ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে সমর্থন করত। মোশাররফের আক্ষেপ, ‘‘ধর্মীয় উগ্রপন্থাই পরে সন্ত্রাসবাদে পরিণত হয়। যা অবশ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ এমনকি সংঘ পরিবার ও শিবসেনাকে হাফিজ সইদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করেন মুশারফ। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে যারা সইদদের বিচার চাইছে, তারা আদতে ভারতের সুরেই কথা বলছে। ভারত কি বাল ঠাকরে বা আরএসএস নেতাদের বিচার করছে? তা হলে পাকিস্তান কেন সাইদ-লকভির বিচার করবে?’’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোশাররফের বক্তব্যের কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু ঘরোয়াভাবে জানানো হচ্ছে, এক সময় ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে সেই ভূমিকার কথা স্বীকার করে নেন, তা হলে তা ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিতেই সিলমোহর লাগায়। মোশাররফের শাসনকালে ভারত বারবার পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সোচ্চার হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও তৎকালীন মনমোহন সরকার বারবার তুলেছে এই প্রসঙ্গ। কিন্তু সে সময় কৌশলগত বাধ্যবাধকতার কারণে আমেরিকা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।

কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে ওসামা বিন লাদেনের হত্যার পর। পাকিস্তান-আমেরিকার অক্ষ এবং সম্পর্কেও বদল এসেছে। কিন্তু আজও সীমান্তপারের সন্ত্রাস এবং ভারত-বিরোধী নাশকতা অব্যাহত। থমকে রয়েছে ভারত-পাক আলোচনার প্রক্রিয়া। এমতাবস্থায় মোশাররফের এই সাক্ষাৎকারকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইবে সাউথ ব্লক।

সাক্ষাৎকারে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ স্বীকার করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেছেন মোশাররফ। মুখ খুলেছেন দাদরি-হত্যাকাণ্ড নিয়েও। জানিয়েছেন, ভারতে এখন মুসলিম-বিরোধী প্রচার চলছে। মোদি-জমানায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। মোশাররফের কটাক্ষ, ‘‘মোদির মানসিক সমস্যা রয়েছে। শুনেছি, ১০ বছর বয়সে আরএসএস-এ যোগ দিয়েছিলেন উনি। ছোট থেকেই হিন্দুত্ববাদ ওর মজ্জাগত।’’


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা

 

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর