১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০৯:০৯

আইএস না আল কায়দা, জোড়া আতঙ্কে ভারত

অনলাইন ডেস্ক

আইএস না আল কায়দা, জোড়া আতঙ্কে ভারত

শুধু জঙ্গি সংগঠন আল কায়দায় রক্ষা নেই, এবার ইসলামিক স্টেটও (আইএস) ‘দোসর’! এক দিকে, প্যারিসের পরে ভারতেও আইএসের হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, আইএসের উত্থানে কোণঠাসা আল কায়দাও ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে হামলার ছক কষতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ভারতে আইএসের হামলার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দেশের ১২টি রাজ্যে আইএসের প্রভাব রয়েছে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্র। এই সব রাজ্যকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এক দফা সতর্ক করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সেনা গোয়েন্দা সূত্রের খবর, লস্কর-ই-তইয়েবার মতো আল কায়দার মদদপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মাস কয়েক আগে পাঞ্জাবের গুরদাসপুর ও জম্মু-সংলগ্ন উধমপুরে হামলা হয়েছিল। এবার আরও বড় হামলার ছক কষা হচ্ছে। কারণ লস্কর-প্রধান হাফিজ সাঈদ নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দু’দিন আগেই তিনি ইসলামাবাদে বসে ভারতের ‘আগ্রাসী মনোভাব’ নিয়ে সম্মেলন করেছেন। পাল্টা হামলার জন্য উস্কানি দিচ্ছেন।

কেন দু’দিক থেকে হামলার আশঙ্কা? আইএস চাইছে, ভারতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে। উল্টো দিকে, আল কায়দাও চাইছে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে।

এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরের কিছু অংশে আইএসের পতাকা ছাড়া ভারতের মাটিতে আইএসের বিশেষ সক্রিয়তা দেখা যায়নি। তবে তাদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্ম-রাজ্য গঠনের লড়াইয়ে যোগ দিতে প্রায় দু’ডজন যুবক ভারত ছেড়েছেন। দলে আরও জেহাদি টানতে এবার ভারতে নাশকতা ঘটিয়ে আইএস নিজের আধিপত্য কায়েম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।

উল্টো দিকে, আল কায়দার সামনে এখন অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। এতদিন ভারতে সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি লস্কর-ই-তইয়েবা, জইশ-ই-মুহম্মদ কিংবা এ দেশের যুবকদের নিয়ে তৈরি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে আল কায়দাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের পতনের পরে শুধু প্রাণশক্তি নয়, অর্থের অভাবও দেখা দিয়েছে আল কায়দার সংগঠনে। টিঁকে ছিল শুধু পুরনো আনুগত্য। এখন সেখানেও ধস নামছে। যারা আগে আল কায়দার মদতপুষ্ট ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য ছিল, তারাই এখন সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসের হয়ে লড়াই করছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে।

আইএস বা আল কায়দার মধ্যে মতাদর্শগত কোন বিরোধ নেই। প্রথমে আইএস আল কায়দারই অনুগত ছিল। কিন্তু শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি আল কায়দার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরিকেই ‘অমান্য’ করতে শুরু করেন। আল কায়দা চেয়েছিল, আইএস সিরিয়ায় জেহাদের দায়িত্ব তাদের শাখা সংগঠন আল নুসরার উপর ছেড়ে দিয়ে ইরাকে মন দিক। উল্টে সিরিয়ায় আল নুসরাকেই মেরে সরিয়ে দেয় আইএস। ধর্ম-রাজ্য তৈরির ডাক দিয়ে আল কায়দার থেকেও কট্টরপন্থী অবস্থান নেন বাগদাদি। বিশ্ব জুড়ে সমস্ত মুসলমানকে আনুগত্যের ডাক দেন। মগজ ধোলাই করে জেহাদি বানানোর ক্ষেত্রেও সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইটে আইএস অনেক বেশি কার্যকর। তেলের খনি দখলে থাকায় অর্থ ও অস্ত্রের রসদও তাদের বেশি। আফগান ও পাকিস্তান অঞ্চলে কর্তৃত্বের প্রশ্নেও আইএস এখন আল কায়দাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বিক্রম রাজাকুমারের মতে, ‘‘জেহাদিদের মধ্যে আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির ধর্ম-রাজ্য গঠনের ডাক অনেক বেশি সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন আল কায়দার বর্তমান প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি।’’

জাওয়াহিরি তাই এখন নতুন করে তালিবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে তিনি গত বছর সেপ্টেম্বরে ‘আল কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন‌্‌টিনেন্ট’ নামে নতুন শাখা সংগঠন তৈরি করেছিলেন। এই ছাতার তলায় জইশ-ই-মুহম্মদ, হিজবুল, হুজি, জামাত-উল-মুজাহিদিনের মতো ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জাওয়াহিরি। গুজরাত-অসম-কাশ্মীরের মতো রাজ্যে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশে অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দরের মতো যুক্তিবাদী, মুক্তমনা ব্লগারদের খুন করা ছাড়া উপমহাদেশে আর কোন নাশকতা ঘটাতে পারেনি আল কায়দার এই শাখা সংগঠনটি।।

কাশ্মীরে আইএসের পতাকা উড়েছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, এশিয়ার মধ্যে ভারতেই আইএস সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলো সব থেকে বেশি বার খোলা হয়। এমন কী, এই সব ওয়েবসাইট আমেরিকাতেও এত বার দেখা হয় না। এ দেশের সোশ্যাল মিডিয়াতেও আইএস ও তাদের মতাদর্শ সম্পর্কে আগ্রহ তুঙ্গে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সামনে তাই এখন দু’মুখো চ্যালেঞ্জ। আইএসকে ঠেকাতে গত মাসেই রাশিয়ার থেকে সাহায্য চেয়েছে ভারত। গত মাসে রুশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির কলোকল্টসেভ এক দিনের জন্য দিল্লিতে এসে রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনই রাশিয়াকে আইএসের বিষয়ে নিয়মিত তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আইএস যা-ই করুক, লস্করের মতো আল কায়দার মদতপুষ্ট জঙ্গিরাও সহজে নিজেদের জমি ছেড়ে দেবে না বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। ফলে দু’দিক থেকেই নাশকতার আশঙ্কায় ভুগছে ভারত।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/১৮ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর