২৫ জুন, ২০১৬ ১০:২৪

ব্রেক্সিটের কোপে ধস বিশ্ব বাজারে, তলানিতে টাকা

অনলাইন ডেস্ক

ব্রেক্সিটের কোপে ধস বিশ্ব বাজারে, তলানিতে টাকা

শেষ পর্যন্ত ‘ব্রেক্সিট’-এর পক্ষেই রায় দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ব্রিটেনের সিংহভাগ মানুষ। আর তা নিয়েই শুক্রবার দিনভর বিশ্বজুড়ে কেঁপে উঠল শেয়ার বাজার। ৩১ বছরের তলানি স্পর্শ করলো পাউন্ড।

দালাল স্ট্রিটে সকালেই সেনসেক্স পড়েছে ১০৯০ পয়েন্ট, নিফ্‌টি ৩৪৩ পয়েন্ট। ৩১ বছরের তলানি ছুঁয়েছে পাউন্ড, ডলারে টাকা এক ঝটকায় নেমেছে ৯৬ পয়সা। তবে কিছুটা অপ্রত্যাশিত প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাজারের ঘুরে দাঁড়াতে খুব দেরি হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বস্তুত, এ দিনই পরের দিকে ভারতের শেয়ার বাজার এবং টাকা তার হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করে। সেনসেক্সের ১০৯০ পয়েন্টের পতন লেনদেন বন্ধের সময়ে কমে দাঁড়ায় ৬০৪.৫১ পয়েন্টে। যার ফলে  বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স থিতু হয় ২৬,৩৯৭.৭১অঙ্কে। অন্য দিকে নিফ্‌টি আগের দিনের থেকে ১৮১.৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৮০৮৮.৬০ অঙ্কে। ডলারে টাকাও কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। বাজারে ডলার ছেড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের পাশাপাশি শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে টাকার দাম কিছুটা বাড়ে। বাজার বন্ধের সময়ে টাকার পতন কমে দাঁড়ায় ৭১ পয়সা। এক ডলারের দাম ছিল ৬৭.৯৬ টাকা। তবে গত ৪ মাসের মধ্যে টাকা এতটা নিচে নামেনি।

শুক্রবার বাজার খোলার শুরু থেকেই গণভোটের ফলাফল দেখে হতাশ লগ্নিকারীরা শেয়ার বেচতে শুরু করেন।  দ্রুতগতিতে পড়তে থাকে শেয়ারের দাম। তার সঙ্গে তাল রেখে নেমে আসে সূচকের পারা। পতনের ফলে সকালেই শেয়ার বাজার থেকে লগ্নিকারীদের ৪ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ মুছে যায়।  নামতে থাকে ব্রিটেনে লেনদের রয়েছে এমন সব ভারতীয় সংস্থার শেয়ার দর। জাগুয়াল-ল্যান্ড রোভারের কর্ণধার টাটা মোটরসের দর সকালেই নেমে যায় প্রায় ১৩ শতাংশ। পরে অবশ্য কিছুটা সামাল দিয়ে তা দাঁড়ায় ৭.৯৯ শতাংশ।

এ দিন পতনের আঁচ এসে পড়ে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে। লন্ডন ভিত্তিক এফটিএসই সূচক এক সময়ে পড়ে যায় ৯ শতাংশ। জাপানের নিক্কেই ৯ শতাংশ, হংকং-এর হ্যাং সেং প্রায় ৩ শতাংশ। খোলার পরে পড়তে থাকে মার্কিন বাজারও। বিদেশি মুদ্রার বাজারে পাউন্ড নেমে যায় ১.৩২ ডলারে, যা ১৯৮৫ সালের পরে এত নীচে নামেনি।

ব্রেক্সিট পরবর্তী অধ্যায়ে বিশ্বের দেশগুলি যাতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়নের জন্য প্রতিযোগিতায় না-নামে তার জন্য আর্জি জানিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘ভারতে ডলার ও টাকার জোগানে ভারসাম্য বজায় রাখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা নেবে।’’

এদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে তেমন কোনও চিন্তার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার দেশের অর্থনীতিকে যে-ভাবে অগ্নিবলয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে, তাতে ব্রেক্সিটের স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবলা করতে অসুবিধা হবে না।’’

ব্রিটেন ই ইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ব অর্থনীতি কতটা প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই অবশ্য মত, এখনই কিছু বলা কঠিন।

ভারতের বাজারে ‘ব্রেক্সিট’-এর  প্রতিক্রিয়া খুব খারাপভাবে পড়বে না বলেই মনে করছেন মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞরা। ইউটিআই মিউচুয়াল ফান্ডের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট সূরজ কালে বলেন, ‘‘ব্রিটেনের বিভিন্ন সমীক্ষা দেখে  আমাদের আশা ছিল, ব্রিটেন ই ইউতে থাকার পক্ষেই রায় দেবে। কিন্তু যেটা হল, সেটা অপ্রত্যাশিত। তাই তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বাজারে ধস নেমেছে। তবে আমার ধারণা, বিশেষ করে ভারতের বাজার মাঝারি পাল্লায় বাজার দ্রুত ওঠানামা করলেও দীর্ঘ মেয়াদে সূচকের উত্থান হবে বলেই মনে করি।’’

সূরজ কালের মতো একই মত, প্রবীণ শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দের। তিনি বলেন, ‘‘এই পতন যে-সাময়িক তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এ দিনই সেনসেক্স যে-তলানিতে চলে গিয়েছিল, দিনের শেষে তার থেকে ৪০০ পয়েন্ট উপরে চলে এসেছে। ব্রেক্সিটের প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে বড় মাপের কোনও আঘাত হানতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস। বরং উল্টে ভারত এর থেকে কিছু লাভ করতে পারে। এ দিনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। যা ভারতের পক্ষে ভাল।’’

ব্রেক্সিট বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতের অনুকূলে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। যেমন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্য মনে করেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী পর্যায়ে ভারতের সামনে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়বে।

অরুন্ধতীর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখ। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটেন ই ইউ থেকে বেরিয়ে আসার ফলে ইউরোপে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাতে ভারতের শেয়ার বাজার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’’ এই পরিপ্রেক্ষিতে অজিত দের মন্তব্য, ‘‘ভাল শেয়ার তুলনায় কম দামে কেনার সুযোগ সামনে এসেছে। এই সুযোগ তাঁরা কাজে লাগালে ভবিষ্যতে ভাল মুনাফা করা সম্ভব হবে।’’


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জুন, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর