২০ জুলাই, ২০১৬ ১১:৩৬

অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিপাকে ইমরান খান

অনলাইন ডেস্ক

অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিপাকে ইমরান খান

সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিতর্কে জড়ালেন পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ এর প্রধান ইমরান খান। গত রবিবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে এক জনসভায় তিনি মন্তব্য করেন, পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান (ক্যু) হলে, সেখানে সকলে মিষ্টি বিতরণ করবে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।

বক্তৃতার এক পর্যায়ে ইমরান খান তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে নষ্ট করে দিচ্ছে নওয়াজের স্বৈরতন্ত্র।’’ পরে জনগণের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘এখানে যদি সেনা অভ্যুত্থান হয়, তাহলে আপনারা কী করবেন?’’ তারপর নিজেই উত্তর দেন, ‘‘আপনারা তো মিষ্টি বিতরণ করবেন!’’

ইমরান খান আরও বলেন, "এরদোগান (তুর্কি প্রেসিডেন্ট) তার দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন, দেশের ঋণ শোধ করেছেন এবং নির্মাণ করেছেন হাসপাতাল। সেজন্য মানুষ তাকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটলেও লাহোর বা ইসলামাবাদ সরকারের পক্ষে কোনো সমর্থন মানুষ দেখাবে না।


এদিকে, ভারতীয় দৈনিক এবেলার খবর, আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসাবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে রাহিল শরিফের। সম্প্রতি পাকিস্তানের ১৩টি শহরে অসংখ্য পোস্টার পড়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, সেনাপ্রধান হিসাবে রাহিল যেন অবসর না নেন। ওই পদে বহাল থেকে তিনিই যেন পাকিস্তানকে ‘রক্ষা’ করেন।

এখন ইমরানের মন্তব্যের পর নওয়াজ-অনুগামীরা বলতে শুরু করেছেন, নির্বাচনে জিততে না-পেরে তিনি এখন সেনার সাহায্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছেন। সেনাপ্রধানের সমর্থনে পোস্টারগুলো কারা দিয়েছে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। ইসলামাবাদ পুলিশ ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছে।

পাকিস্তানের অনেকেই অবশ্য এই সব ঘটনার মধ্যে সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছেন। ইমরান এর আগেও বেশ কয়েকটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শরিফের অসুস্থতার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, শরিফ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না। টুইট করেছেন, ‘শরিফের জন্য পাকিস্তানের গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের উচিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা।'

তবে সেখানকার রাজনীতিকেরা মনে করছেন, গণতন্ত্র ফেরানো বলতে ইমরান সেনার হাতে ক্ষমতা দেওয়ার কথাই বলতে চেয়েছেন। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সম্প্রতি একটি মিছিলে তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সেনা গণতন্ত্রকে নষ্ট করেনি। কিন্তু নওয়াজ করছেন।’’

ওই মন্তব্যের জন্য পাকিস্তান জাস্টিস পার্টি’র (পিজেপি) তরফে লাহোর থানায় ইমরানের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন, এমন কোন মামলা করা হয়নি।

পাকিস্তানের রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারণে সেনা এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ নওয়াজের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন। প্রথমত, ভারতের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ক ‘মসৃণ’ করার চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, নওয়াজ সম্প্রতি যাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেছেন, তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, সেনার হস্তক্ষেপ মানবেন না। তৃতীয়ত, নওয়াজের নিজের অসুস্থতা। রাজনীতিকেরা মনে করছেন, এই সবের সুযোগ নিয়ে সেনাকে ঢাল করে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন ইমরান খান।

বিডি-প্রতিদিন/২০ জুলাই, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর