১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:৫৪

'আচ্ছে দিন'ই এখন মোদির গলার কাঁটা, বলছেন সতীর্থরা

অনলাইন ডেস্ক

'আচ্ছে দিন'ই এখন মোদির গলার কাঁটা, বলছেন সতীর্থরা

১৬ মে, ২০১৪। লোকসভা নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফল স্পষ্ট হতেই নরেন্দ্র মোদির সেই বিখ্যাত টুইট। তার পর থেকে দু’বছর পেরিয়ে গেছে। মোদির মুখ থেকে এই ‘অাচ্ছে দিন’ বা সুদিনের কথা আর শোনাই যায় না। কেন শোনা যায় না, তার বিস্ফোরক ব্যাখ্যাটিই এবারে করে বসলেন মন্ত্রিসভায় মোদির সতীর্থ। তা-ও আবার খোদ নরেন্দ্র মোদিকে উদ্ধৃত করে।

লোকসভা নির্বাচনের সময় এত জনপ্রিয় হওয়া ‘সুদিন আসবে’ স্লোগানটি না কি এখন খোদ নরেন্দ্র মোদির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ মোদিই সে কথা বলেছেন তাঁর সতীর্থদের। আর একঘর মানুষের সামনে সে কথা জানালেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ‘অচ্ছে দিন’-এর এই কাঁটা গলা থেকে নামাতে এখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে সরকারপক্ষ। এই শব্দটি না কি তারই মুখ থেকে নিসৃত। আর মনমোহনের থেকেই নাকি কথাটি ধার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

এক প্রশ্নের উত্তরে গডকড়ী বলেন, ‘‘অাচ্ছে দিন শব্দটি আমাদের গলায় বিঁধে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদিই আমাদের বলেছেন, এখন যে কেউ চিৎকার করে প্রশ্ন করেন, ‘অাচ্ছে দিন’ কবে আসবে? কিন্তু ‘অাচ্ছে দিন’ কখনও আসে না। আমাদের দেশে অতৃপ্ত আত্মার মহাসাগর। যার কাছে সাইকেল আছে, তার স্কুটার চাই। যার স্কুটার আছে, তার গাড়ি চাই। এমনকি যাদের বাংলো, ঘোড়া আছে, তারাও অতৃপ্ত।’’

এরপরে মোদিকেই উদ্ধৃত করে গডকড়ী জানান, ‘‘একসময় দিল্লিতে অনাবাসী ভারতীয় সম্মেলনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘অাচ্ছে দিন’ কবে আসবে? তার জবাবে মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আসবে অাচ্ছে দিন। তখন থেকেই মোদিজি এই শব্দটি বলতে শুরু করেছেন। আর আমাদের গলায় লটকে রয়েছে।’’ তবে এই বিষয়টি নিয়ে যাতে পাছে বিতর্ক না হয়, তারজন্য গডকড়ী সতর্ক হয়ে বলেন, ‘‘তা-ও আমি মানি, অচ্ছে দিন মানে মানুষের প্রত্যাশা আছে। সংবাদমাধ্যম যেন এর ভুল ব্যাখ্যা না করে।’’

এর আগে ভোটের সময় বলা অনেক কথাই ‘ভোট-অলঙ্কার’ বলে পরে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। ভোটের পর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া নিছক ‘মামুলি’ মন্তব্য বলে লঘু করেছেন। কিন্তু যে ‘অচ্ছে দিন’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন, সরকারের আড়াই বছরের মাথায় তা থেকেই পিছু হঠে আসা কী কোনও কৌশল? না কি ঘরোয়া আলোচনায় মোদির মন্তব্যকে প্রকাশ্যে এনে বেফাঁস বললেন গডকড়ী?

বিজেপি সূত্র অবশ্য বলছে, গডকড়ী একটি বাস্তব পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, মানুষের পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা থাকে। আর সেই প্রত্যাশা কখনওই মেটার নয়। মানুষ যা পায়, তাতে কোনও দিনও সন্তুষ্ট থাকেন না। কিছু পেলেও তাদের আরও চাই। প্রধানমন্ত্রী যতই কাজ করুন না কেন। ফলে ‘সুদিন’ এসেছে, এটি একটি মানসিক অবস্থা। কিন্তু যেভাবে ঘরোয়া কথা ভরা হাটে বলে ফেলেছেন গডকড়ী, তাতে দলেরই অনেকে অভিসন্ধির গন্ধ পাচ্ছেন। অনেকের বোঝার চেষ্টা করছেন, আরএসএসের ঘনিষ্ঠ গডকড়ী মোদিকে বিপাকে ফেলার জন্যই এমন মন্তব্য তো করেননি?

কিন্তু উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এমন একটি মওকা পেয়ে বিরোধীরা হাতছাড়া করবে কেন? কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ তাই এই নিয়েই সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘‘১২৫ কোটি মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার দলের নেতা কবুল করে দিলেন, সুদিন আর আনতে পারবে না এই সরকার। সরকার সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। এবারে সেই ব্যর্থতাই স্বীকার করল।’’ 

বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘নিতিন গডকড়ী কখনোই বলেননি, সরকার পিছিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নিরন্তর সাধারণ মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করছেন।’’ তবে বাস্তব ঘটনা হল, মোদী নিজেও সুদিন আনার কথা আর বলছেন না। সরকারের এক বছর পূর্তিতে তিনি বলেছিলেন ‘দুর্দিন ঘুচেছে’। আর দ্বিতীয় বছরে বলেছিলেন, ‘দেশ বদলাচ্ছে।’ মুখ ফুটে তবুও বলতে পারেননি, সুদিন এসেছে বা আসবে।


সূত্র: আনন্দবাজার বাজার।


বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর