২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:০১

কূটনীতির পথেই পাকিস্তানকে জবাব দিতে চায় ভারত

অনলাইন ডেস্ক

কূটনীতির পথেই পাকিস্তানকে জবাব দিতে চায় ভারত

ভারত শাসিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার পরেই দাঁতের বদলে চোয়াল খুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা রাম মাধব। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই নরেন্দ্র মোদি সরকার বুঝতে পারছে, পাকিস্তানকে এই মুহূর্তে সামরিক পথে জবাব দেওয়া কার্যত অসম্ভব। সেনা কর্মকর্তারা আজ মঙ্গলবার সরকারকে বুঝিয়েছেন, দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে কখনওই ‘নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ’ করা সম্ভব নয়। তা অচিরে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলও একে মেনে নেবে না। এমনকি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মিরে ঢুকে জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দিতে হলে তার ফলাফল কী হতে পারে, তাও ভেবে দেখা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে আপাতত কূটনৈতিক স্তরেই ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নয়াদিল্লি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

উরি'র পাল্টা রণনীতি সাজাতে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান, গোয়েন্দাকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ঠিক হয়েছে, হামলায় পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ সংযোগের প্রামাণ্য নথি তুলে ধরা হবে বিশ্বের সামনে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তার বক্তৃতায় উরি-সন্ত্রাসকে জোরালো ভাবে তুলে ধরবেন। পাকিস্তানের আর্থিক মদতদাতা এবং বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রগুলোর কাছে তথ্য ও নথি দিয়ে নয়াদিল্লি বলবে, সেখানে লগ্নি করার অর্থ হল সন্ত্রাসবাদের হাত শক্ত করা।

সন্ত্রাসে ইসলামাবাদের মদতের কথা তুলে ধরে জাতিসংঘের সাধারণ সভা থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ মঞ্চে পাকিস্তানকে একঘরে করার কৌশল নিচ্ছে ভারত। তবে একই সঙ্গে তার লক্ষ্য কাশ্মির সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ এড়িয়ে চলা। মোদি সরকার ঠিক করেছে, উরিতে উদ্ধার হওয়া পাকিস্তানের মার্কামারা যাবতীয় প্রমাণ দুনিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, উরি ঘাঁটিতে হামলাকারীদের থেকে চারটি একে-৪৭, চারটি আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার, ৩৯টি গ্রেনেড, ৫টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২টি রেডিও সেট, ২টি জিপিএস, ২টি মানচিত্র, বিপুল পরিমাণে খাবার, ওষুধপত্র উদ্ধার হয়েছে। সেগুলোতে পাকিস্তানের ছাপ রয়েছে। এ থেকেই স্পষ্ট, জঙ্গিরা এসেছিল পাকিস্তান থেকে। যে মানচিত্র পাওয়া গেছে, তার মধ্যে পশতু ভাষায় লেখা রয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ হিসেবে এগুলো তুলে ধরা হবে।

এই প্রচারে ফল ফলবে বলেই আশাবাদী দিল্লি। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এদিনই উরির হামলার নিন্দা করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং বেইজিং-ও মঙ্গলবার তাৎপর্যপূর্ণভাবে উরিকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়ে সন্ত্রাসবাদকে আটকানোর ডাক দিয়েছে।

তবে কাশ্মির নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সরব হতে পাকিস্তানের প্রস্তুতিও থেমে নেই। নওয়াজ শরিফ শনিবারই আমেরিকায় পৌঁছেছেন। কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে তিনি আগামীকাল জাতিসংঘে সরব হতে চাইছেন। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আজ বলা হয়েছে, কাশ্মিরের উত্তাল পরিস্থিতি থেকে দুনিয়ার নজর ঘোরাতেই উরির ঘটনার দায় নয়াদিল্লি তাদের উপর চাপাতে চাইছে। কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে চিঠিও লিখেছেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু উরির ঘটনার পরে জাতিসংঘে নওয়াজ শরিফের আক্রমণ ভোঁতা হয়ে যাবে বলেই মনে করছে দিল্লি।

পুরোপুরি যুদ্ধে যেতে না পারলেও মঙ্গলবারের বৈঠকে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শক্তি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে মোদি সরকার। পাকিস্তানের দিক থেকে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভাঙা বা অনুপ্রবেশে মদত দেওয়ার ঘটনা ঘটলেই, জোরালো ভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ মঙ্গলবার বলেন, আবেগতাড়িত হয়ে প্রত্যাঘাত করা হবে না। তার কথায়, ‘‘ঠাণ্ডা মাথায় অঙ্ক কষে জবাব দেওয়াটাই এখন জরুরি।’’

এদিকে, মঙ্গলবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফও সে দেশের সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। পরে ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাবতীয় হুমকির মোকাবিলা করতে তৈরি আছে পাকিস্তান।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর