২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১০:৫৬
খবর আনন্দবাজারের

দ্বীপ-রুট দিয়ে ঢুকতে পারে জঙ্গি, নজরে সুন্দরবনও! উদ্বেগে দিল্লি

অনলাইন ডেস্ক

দ্বীপ-রুট দিয়ে ঢুকতে পারে জঙ্গি, নজরে সুন্দরবনও! উদ্বেগে দিল্লি

নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে বা সাগর পাড়ি দিয়ে, আবার স্থল ও জলপথে ভারতে জঙ্গির অনুপ্রবেশ নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে ২৬/১১-র অভিজ্ঞতা মনে রেখে নানা সময়েই দেশটির নানা রাজ্যকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সূত্রেই বেজায় তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে আরবসাগর-বঙ্গোপসাগরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন ভারতীয় দ্বীপগুলির নিরাপত্তার প্রশ্ন। তার মধ্যে অন্যতম সুন্দরবনও।

সম্প্রতি সুন্দরবনসহ দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা মোট ১৩৮২টি দ্বীপের সুরক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। এগুলির অধিকাংশে মানুষের বসবাস নেই। নিরাপত্তা সে রকম পোক্ত নয়। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা— ভারতের মাটিতে নাশকতার লক্ষ্য নিয়ে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূলের এই দ্বীপ-রুট ধরে জঙ্গিরা বিলক্ষণ ঢুকে পড়তে পারে।

এরকম সম্ভাবনা রুখতেই তৎপর নয়াদিল্লি। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সুরক্ষা মজবুত করতে নৌ-বাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী (কোস্ট গার্ড) ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার মিলে একগুচ্ছ পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। যা বাস্তবায়নের ভিত্তি হবে মূলত প্রযুক্তি। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রেডার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিরন্তর নজরদারিই এখানে একমাত্র পথ। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে কোস্ট গার্ড যে ভাবে নজরদারি চালায়, এ ক্ষেত্রে তাকে ‘মডেল’ করার প্রাথমিক একটা ভাবনাও মজুত।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য মাস তিনেক আগে সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশ প্রধানদের ডেকেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উপকূলের বিপদ বোঝাতে গিয়ে কার্যত অরক্ষিত ওই ১৩৮২টি দ্বীপের প্রসঙ্গ সেখানেই ওঠে। রাজ্যের প্রতিনিধিদের হুঁশিয়ার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে কোনোভাবে অরক্ষিত দ্বীপে সুরক্ষা-জাল (স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট) বসাতে হবে।’’

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব উপকূলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সবচেয়ে বেশি সুন্দরবনে। অধিকাংশে জনবসতি নেই। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারও চিন্তিত। রাজনাথের বৈঠকের সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল-সুরক্ষা খতিয়ে দেখতে গত সপ্তাহে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর ‘আইএনএস নেতাজি সুভাষ’-এ অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী, রাজ্য পুলিশ ও বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কর্তারা ছিলেন। রাজ্যের উপকূল ও বসতিহীন দ্বীপের পরিস্থিতি তাঁরা খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। পর্যালোচনার সময়ে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের তরফে বিবিধ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গভীর সমুদ্রগামী মাছ-ধরা ট্রলার নিয়েই উদ্বেগটা বেশি। দুই বাহিনীর বক্তব্য: মুম্বই-কাণ্ড দেখিয়ে দিয়েছে, জঙ্গিদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ও হানাদারির বড় সহায় হয়ে উঠতে পারে এই ট্রলার। তাই মাঝ দরিয়ায় ঘুরে-বেড়ানো ট্রলারকে চিহ্নিত করা একান্ত জরুরি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের ট্রলারকে ঠিকঠাক চিহ্নিত করা যায় না। অভিযোগ, মৎসজীবীদের বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্রের কাজ তেমন এগোয়নি। পুলিশ-কোস্ট গার্ড সমন্বয়েও বিস্তর ফাঁক-ফোকর।

এমতাবস্থায় ঠিক হয়েছে, সমস্ত ট্রলারের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বর বরাদ্দ হবে। শনাক্তকরণের সুবিধার্থে ট্রলারকে রাঙানো হবে নির্দিষ্ট রঙে। পাশাপাশি নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষীদের পরিকল্পনা— সুন্দরবনের বেশ কিছু দ্বীপে রেডার বসবে। দূরের কিছু দ্বীপে জেটি বানিয়ে রাখাও অত্যন্ত প্রয়োজন, যাতে দরকারে সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি চালানো যায়। বস্তুত আন্দামানে এমন কিছু বন্দোবস্ত আগে থেকেই বহাল। নতুন পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে যা ‘মডেল’ হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হবে ওখানকার কিছু অভিজ্ঞতাও। 

মন্ত্রণালয়ের খবর, আন্দামানের পূর্বে নরকোন্ডাম দ্বীপে রেডার বসানোয় পরিবেশবিদেরা ঘোরতর আপত্তি তুলেছিলেন। যুক্তি— রেডারের বিকিরণ বিশেষ প্রজাতির সারসের প্রজনন ব্যাহত করবে। এ দিকে নরকোন্ডাম থেকে মায়ানমার সীমান্ত সাকুল্যে তিরিশ কিলোমিটার। ফলে নিরাপত্তার খাতিরে ওখানে রেডার বসানো জরুরি বলে সরকার দাবি করেছিল। বিতর্কের জল আদালতে গড়ায়। কোর্টের রায় যায় পরিবেশবিদদের পক্ষে। নরকোন্ডামের বদলে রেডার বসাতে হয় ইস্টার্ন দ্বীপে। এমন সব কিছু খেয়ালে রেখেই সুন্দরবনে রেডারের জায়গা বেছে নেয়া হবে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।


বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর