২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৯:১০

আপস করোনি কখনোই তুমি, বিদায় সৈয়দ শামসুল হক

অনলাইন ডেস্ক

আপস করোনি কখনোই তুমি, বিদায় সৈয়দ শামসুল হক

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক গতকাল বিকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার পর এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৈয়দ হক হিসেবে সুপরিচিত কবি সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে শোকগাঁথা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও পিছিয়ে নেই।  আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে তুলে দেয়া হলো তেমনই একটি লেখা।

আমারে দিয়াছো ব্যাধি নিরাময় অসম্ভব যার— সৈয়দ শামসুল হকেরই কবিতার পঙ‌্ক্তি। সেই ‘নিরাময় অসম্ভব ব্যাধিই’ তাঁকে নিয়ে গেল। এই যাওয়াটা শরীরের, তাঁর সৃষ্টির নয়। বাংলাদেশের ইতিহাস যিনি ধারণ করেছেন, যাঁর কলমে উঠে এসেছে বাঙালির দ্রোহ আর সাহস, তিনি থাকবেন। থাকবেন মিছিলের মুখ হয়ে তেরশো নদীর স্রোতধারায়। থাকবেন, কারণ তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলতে পেরেছেন—

আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?

যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;

তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-

চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

সৈয়দ শামসুল হক তাঁর সারাটা জীবন ছুঁয়ে থেকেছেন মানুষকেই। যে কারণে মানুষ আর মানুষের মিলিত উত্থান তাঁর কাছে প্রাণ পেয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর জনপদের গণনায়ক নূরলদীনের কণ্ঠকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন তাবত অন্ধকার, সামরিক শাসন আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। তিনি সে কারণেই নূরলদীনের সারাজীবনে লেখেন— ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবাই…..’। সেই আহ্বান ব্রহ্মপুত্র থেকে তিস্তায় সাড়া তোলে। সেই আহ্বানে কেঁপে ওঠে অন্ধকার অপশক্তির বুক। অন্য দিকে মানুষ যুথবদ্ধ হয় সেই আহ্বানে। হয় স্বপ্নের সমান। লন্ডনের ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর শরীরের চুড়ান্ত অবনতির কথা। তিনি ফিরে এসেছিলেন তাঁর দেশের মাটিতে- বাংলাদেশে। শেষ সময় পর্যন্ত দৃঢ় ছিলেন নিজের লেখা অক্ষরগুলোর মতোই। অসুখের কাছে আপোষ নয়, তাঁর লড়াইটাই জারি ছিল মৃত্যুর সময় পর্যন্ত।

সব্যসাচী লেখকের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে বাংলাদেশ। সমাজের প্রতিটি অংশেই তাঁর জন্য শুধুই হাহাকার। বিকেল ৫ টা ২৬ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর কথা জানার পর থেকেই সর্বত্র স্বজন হারানোর বেদনা। তাঁর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য লড়াই করে, সেই দেশের একজন লেখকের জন্য এমন সম্মানই উপযুক্ত। বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শহিদ মিনারে তাঁর মরদেহ থাকবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য। সেই শহিদ মিনার যেখানে হাজার হাজার বার উচ্চারিত হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের অক্ষরগুলো, যেখানে তিনি বার বার উচ্চারণ করেছেন সাহসের মন্ত্র, সেখানে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু বাংলা ভাষা যত দিন থাকবে তত দিন তাঁর লেখা অমরত্ব নিয়ে থাকবে শহিদ মিনারের মিনারগুলো ছুঁয়ে। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। তাঁর শেষকৃত্য হবে কুড়িগ্রামে। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন তিনি। আবারও সেই শিকড়েই ফিরে যাবেন বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিমান এই লেখক। যার হাতের কলমে সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। যাঁর লেখা আমাদের দিয়েছে অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস। যে সাহস থাকবে আরও শত শত বছর বাংলাদেশের হাত ধরে।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর