১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ১৪:০২

মোদি বিরোধী সুর আরও চড়া মমতার, পাশে কেজরিওয়াল

অনলাইন ডেস্ক

মোদি বিরোধী সুর আরও চড়া মমতার, পাশে কেজরিওয়াল

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সরব। এ নিয়ে বিজেপি বিরোধিতাকে দেশের অন্যত্রও পৌঁছে দিতে আগামীদিনে আরও বড় আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তারই ভূমিকা হিসেবে তৃণমূলসহ আরও কয়েকটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তি থেকে পদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতিভবনে গিয়ে প্রণব মুখার্জির কাছে স্মারকলিপি দেন মমতা। তার দাবি, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে স্থগিত করে দেশে-বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করুক কেন্দ্র। আর সেই পরিকল্পনায় সামিল করা হোক রাজ্যগুলিকেও।

রাষ্ট্রপতি ভবনে তৃণমূল নেত্রীর এই যাত্রার শরিক কে হবেন এবং কে হবেন না, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল কাল রাত থেকেই। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের অন্যতম শরিক শিবসেনা গতকালই জানিয়েছিল, তারা মমতার সঙ্গে থাকবে। শিবসেনা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কাল সরে থাকার কথা বললেও আজ কিন্তু মমতার মিছিলে ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। যোগ দেয় জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সও। পটেল নবনির্মান সেনার নেতা অখিলেশ কাটারিয়াও এ দিন মমতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন। নোট বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে রাজধানীর বুকে আরও চড়া সুরে বাঁধতে আগামীকাল পশ্চিম দিল্লির আজাদপুর সব্জিমান্ডিতে কেজরিওয়ালের সঙ্গে যৌথ জনসভাও করবেন মমতা।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মমতার দেওয়া প্রস্তাবগুলি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলবেন রাষ্ট্রপতি। গতকালই তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু জানিয়েছিলেন, পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সরকার এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় প্রস্তুত। সেই মতো আজ গোটাদিনই রাজ্যসভায় বসে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দলের সদস্যদের মতামত শুনেছেন বেঙ্কাইয়া। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় বসতে চাইলে কেন্দ্র প্রস্তুত— ঘরোয়া ভাবে এই বার্তাও দেওয়া হয় মমতাকে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী যে বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো আপসে যেতে চান না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে যে ছ’টি দাবি মমতা করেছেন, তার প্রথমেই রয়েছে নোট বাতিলের ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ এবং ‘দানবিক’ পদক্ষেপ অবিলম্বে স্থগিত করার কথা। তার অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে কালো টাকা, জাল টাকা এবং সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে পরিকল্পিত কৌশল রচনা, বিভিন্ন অঙ্কের নোট অবিলম্বে সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে ছাড়া, সাধারণ মানুষের উপর চাপানো বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে তাদের স্বস্তি দেওয়া, রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কালো টাকা পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা তৈরির মতো বিষয়গুলি। রাষ্ট্রপতিভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষের দুর্দশার কথা আমরা জানিয়েছি রাষ্ট্রপতিকে। তিনি সংবিধানের অভিভাবক। তাকে আমরা অনুরোধ করেছি, এই সাংবিধানিক সঙ্কট এবং অর্থনৈতিক নৈরাজ্য রুখতে সাধারণ মানুষের হেনস্থার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলুন।’’ মমতার কথায়, ‘‘যদি স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত না ফেরে, তা হলে মৃত্যু, অনাহার এবং সার্বিক বিপর্যয়ের ঘটনা আরও বাড়বে।’’ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘এটিএম (ব্যাঙ্কের পরিভাষায়, অটোমেটেড টেলার মেশিন) মানে এখন আর এনি টাইম মানি নয়, আয়েগা তো মিলেগা!’’

পরিকল্পনা মতোই এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জমায়েত হন মমতার দলের কুড়ি জন সাংসদ। শিবসেনা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত কাল রাতে আপ না থাকার কথা বলার পর থেকেই তৃণমূলের তরফে কেজরিওয়ালকে বোঝানোর চেষ্টা চলছিল। তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, এটা কোনও রাজনৈতিক জোট বা মতাদর্শগত সাধারণ মঞ্চ নয়। সাধারণ মানুষের হেনস্থার কারণেই এক সঙ্গে স্বর তোলার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত আজ সকালে মমতার মিছিলে যোগ দেন আপ নেতা ভগবন্ত মান। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিজেপিকে চাপে ফেলতে শিবসেনা নেতা আনন্দরাও আদসুলসহ পাঁচ সাংসদও এই মিছিলে হেঁটেছেন। ছিলেন এনসি'র ওমর আবদুল্লা। শিবসেনার নেতা আনন্দরাও আদসুলের কথায়, ‘‘আমরা একটি আঞ্চলিক দল হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এই মিছিলে যোগ দিয়েছি। মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ কার্যত পথে বসেছেন। তাই সরকারের ভিতরে থেকেও আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ শিবসেনার পক্ষ থেকে পরে বলা হয়, তারা নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা বলছেন না। সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে ওই নোট ব্যবহারের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।
মমতার এ দিনের আক্রমণাত্মক কেন্দ্র-বিরোধী ভূমিকায় স্পষ্ট, আগামী দিনে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিজেদের বড় ভূমিকায় দেখতে চাইছে তৃণমূল। নোট-কাণ্ড ঘিরে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলিকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়াস এ বারের মতো ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়তে চাইছেন না মমতা। রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য দু’দিন আগেই নোটিস দিয়েছিল তৃণমূল। আজ ১৬৮ ধারায় ভোটাভুটির জন্য আরও একটি নোটিস রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। চেয়ারম্যান মেনে নিলে এই নিয়ে ভোটাভুটি হবে। পাশাপাশি সরকারের তৈরি ‘আর্থিক অচলাবস্থার’ বিরুদ্ধে আগামিকাল লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছেন সুদীপ ব্যানার্জি।


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ-০১

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর