৫ জুলাই, ২০১৭ ১১:৫৪

ভেবেছিলাম পুলিশের সাহায্য পাব, কিন্তু...

অনলাইন ডেস্ক

ভেবেছিলাম পুলিশের সাহায্য পাব, কিন্তু...

ফাইল ছবি

চিকিৎসা সেবা কিংবা ব্যবয়ায়িক প্রয়োজন অনেক বাংলাদেশিরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় যাওয়া আসা আছে। তবে রাতে কলকাতার রাস্তায় বের হওয়ার আগে একটু ভাবতে হবে। অন্যথায় বিপদ ডেকে আনতে পারেন আপনি। রুম্পা দাস নামের এক কলকাতার সাংবাদিকের রাতে পুলিশি বিড়ম্বনার লেখায় তেমন চিত্রই উঠে এসেছে। অনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

বর্ধমান (পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা) থেকে এক আত্মীয়ের পরিবার ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। থাকবেন আমার বাড়িতেই। মাঝরাতে হঠাৎই একজনের প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওষুধ শেষ। পাড়ার কোনো ওষুধের দোকান তখন খোলা নেই। অগত্যা গুগল ঘেঁটে নম্বর বার করে ফোন করতেই জানা গেল শ্যামবাজারে (কলকাতার একটি বাজার এলাকা) একটি দোকান খোলা রয়েছে।

আমি আর পিসতুতো দিদি কুমোরটুলির বাড়ি থেকে হেঁটেই শ্যামবাজার রওনা হলাম। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দেখি, হাতিবাগানের দিকে মুখ করে কলকাতা পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। ভিতরে কয়েক জন পুলিশকর্মী। দেখে সাহস বাড়ল। ভেবেছিলাম, দু’টি মেয়ে বৃষ্টির মধ্যে কেন এভাবে বেরিয়েছি তা জানতে এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে পুলিশ। কিন্তু ওঁরা কেউ এলেন না।  

আধ ঘণ্টা হেঁটে দোকানে পৌঁছে দোকানদারকে ঘুম থেকে তুললাম। তারপর ওষুধ বোঝাতে আরও মিনিট ১৫। শেষ পর্যন্ত যখন ওষুধ কিনে ফিরছি, ঘড়ির কাঁটায় পৌনে তিনটা। বৃষ্টিও ধরে এসেছে।

দেখলাম ভ্যানটা সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে বর্ষাতি (রেইনকোট)গায়ে চারজন পুলিশ কর্মী। তাঁদের মধ্যে একজন বাঁশি বাজালেন। তখনও ভাবিনি, বাঁশিটা আমাদের জন্য। পা চালিয়ে হাঁটছি। মণীন্দ্র কলেজের কাছাকাছি এসেছি, পিছন থেকে একটা বাইক এসে দাঁড়াল। পুলিশের। ভাবলাম বুঝি আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন ওঁরা। কিন্তু কোথায় কী! আমাদের জেরা শুরু করলেন ওঁরা। ওষুধের প্যাকেট দেখিয়ে যতবার বোঝাতে চাই, নতুন প্রশ্ন ভেসে আসে। সঙ্গের দিদিটিকে, কেন এসেছেন, কত দিন থাকবেন... ইত্যাদি ইত্যাদি। এত প্রশ্ন কেন? জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘‘আপনাদের দেখে সন্দেহ হচ্ছে তাই।’’

আমরা তো স্তম্ভিত! বুঝে গেলাম ওরা সাহায্য করতে আসেননি মোটেই। নাম, ধাম, ফোন নম্বর জানানোর পরে বলতে বাধ্য হলাম, আমি একটা খবরের কাগজে কাজ করি। আপনি ছাড়লে বাড়ি ফিরতে পারি। যে রোগী অসুস্থ, তাঁকে ওষুধটা এখনই দিতে হবে যে!
খবরের কাগজে কাজ করি শুনেই পুলিশ কর্মীটি পেন বন্ধ করে, খাতা গুটিয়ে বললেন, ‘‘ঠিক আছে, যান।’’

দশ-বারো পা এগিয়েছি। তাঁরা এসে হাজির আবার। এবার আবদারের সুর। ‘‘দিদিভাই, আমার নম্বরটা রেখে দিন।’’ বললাম, আপনার নম্বর আমার দরকার নেই। পুলিশ কর্মীটি নাছোড়, ‘‘জানি সেটা। তবু একবার যদি বাড়ি ফিরে আমায় ফোন করে দেন, নিশ্চিন্ত হই। এটা তো আমার কর্তব্য।’’

এতক্ষণ তাঁর এই কর্তব্যবোধ কোথায় ছিল, ভাবতে ভাবতেই বাড়ি পৌঁছলাম। আমি যদি পেশার কথা না-বলতাম, তা হলে কি সন্দেহের বশে থানায় যেতে হতো আমাদের? এই প্রশ্নটা তাড়া করছে।

ঠিক করি, আমার এই রাতের কথা কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার এবং ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকারকে জানাব। দু’জনের ই-মেলে আমার সেই অভিজ্ঞতা আমি লিখে পাঠিয়েছি। জবাব আসেনি এখনও।

বিডি-প্রতিদিন/০৫ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর