৩ মার্চ, ২০১৮ ১৪:৩২

আইএএস হয়েই 'জবাব' দিতে চান রূপান্তরকামী

অনলাইন ডেস্ক

আইএএস হয়েই 'জবাব' দিতে চান রূপান্তরকামী

ছোটবেলা থেকে লড়াই করছেন। লেখাপড়ায় ভালো হলেও স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে টিপ্পনী শুনতে হতো। তবে হাল ছেড়ে দেননি ভারতের হুগলির ত্রিবেণীর ক্যাম্পগেট এলাকার বাসিন্দা অত্রি কর। রূপান্তরকামী বলে গত বছর ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসতে মামলা পর্যন্ত যেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) পরীক্ষায় বসতে পারেননি। কারণ ওই পরীক্ষার তার সরাসরি বসার অধিকার ছিল না। কার ফর্মে কেবল 'মেল' আর 'ফিমেল' উল্লেখ ছিল।

তবে হতাশও হননি অত্রি কর। বরং সাহস সঞ্চয় করে এবার ওই পরীক্ষায় বসতে চেয়ে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন। কয়েকদিন আগে পেলেন ওই পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র।

অত্রি করের কথায়, ‘‘জীবনে কম লড়াই করতে হচ্ছে না! আমি চাই, সমাজ যাবতীয় অবজ্ঞা ঝেড়ে ফেলে আমার সম্মানটা অন্তত দিক। ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে, ‘আদার সেক্স’ (অন্য লিঙ্গ) হিসেবে ফর্ম ফিল-আপ করতে পারব। সংশ্লিষ্ট দফতরে রায়ের প্রতিলিপি পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

বাবা পরিমল কর গৃহশিক্ষকতা করেন। অত্রি তার ছোট সন্তান। স্কুলে অত্রি ‘ফার্স্ট’ হলেই পরিমলবাবু ছেলেকে ব্যাট-বল বা ক্যারাম কিনে দিতে চাইতেন। অত্রির হাত যেত পুতুলে। তার শরীর পুরুষের। কিন্তু মন যে নারীর! ছোট থেকেই ‘মেয়েলিপনা’র জন্য প্রিয়জন, বন্ধুদের কাছে কথা শুনতে হয়েছে তাকে। এমনকী, বাড়িতেও। 

অত্রির এখনও স্পষ্ট মনে আছে, ‘‘বউদির বাপের বাড়ির লোক এলে আমাকে ঘর থেকে বেরোতে দেওয়া হতো না।'' যদিও ধীরে ধীরে পাল্টেছে বাড়ির পরিবেশ। বড় হয়েছেন অত্রি। রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। পার্ট-১ পরীক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেন। চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। গুপ্তিপাড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান ২০১৪ সালে। তখনই লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই প্রক্রিয়া এখন শেষ পথে। বাড়ির লোকজন, পাড়া-পড়শিরাও মেনে নিতে শুরু করেন ‘মেয়ে অত্রি’কে।

এখন বউদি চুল বেঁধে দেন। মা শাড়ি পড়তে সাহায্য করেন। বাবা পরিমলবাবু বলেন, ‘‘ওর জন্য একসময় নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছি। কিন্তু ভেবে দেখেছি, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান নিজে যা ভাল মনে করবে, সেটাই করুক। তাই আপত্তি করি না।’’

কিন্তু আটপৌরে সংসারে বড় হওয়া অত্রির আইএএস হওয়ার স্বপ্ন কেন? আচমকা কঠিন হয়ে ওঠে অত্রির জবাব, ‘‘প্রতিশোধ স্পৃহা বলতে পারেন। সব হেনস্থার যোগ্য জবাব দিতে চাই।''

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/০৩ মার্চ, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর