২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:৫০

বগুড়ায় তীব্র দাবদাহে মরিচ চাষ নিয়ে বিপাকে কৃষক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় তীব্র দাবদাহে মরিচ চাষ নিয়ে বিপাকে কৃষক

বগুড়ায় টানা কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহে মরিচ চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার স্থানীয় কৃষকরা। প্রখর রোদে মরিচের গাছ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। চাষিরা বলছেন, এমন অবস্থা বিরাজ করলে মরিচের গাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেই সাথে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিস বলছে, বগুড়ায় মঙ্গলবার তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি হওয়ার ও তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সবমিলিয়ে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহ সহ্য করতে হবে বগুড়াসহ পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ ও প্রাণীকূলকে।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে মরিচ চাষে বগুড়া অন্যতম। বগুড়ার মরিচ দেশজুড়ে খ্যাত। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ মরিচ চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপকভাবে মরিচ চাষ করে থাকেন স্থানীয় কৃষকরা।

কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা তীব্র দাবদাহের কারণে মানুষের জীবনে যেমন প্রভাব পড়ছে, তেমনি প্রভাব পড়েছে ফসলি জমিতেও। প্রখর রোদ ও তাপের কারণে কৃষকরা মরিচ চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। শুধু মরিচ নয়, কচু, ভুট্টা, কলা, করলা, পটলসহ বিভিন্ন ফসল তীব্র তাপদাহের কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ রকম দাবদাহ চলতে থাকলে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। মরিচসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হলে এর প্রভাব কাঁচাবাজারেও পড়বে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষাবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বেশি চাষ হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলায় এবছর ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ, মুখী কচু ৩৫০ হেক্টর, ১০০ হেক্টর কলা ও ২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উপজেলার উথলী, অর্জুনপুর, বেড়াবালা, আকন্দ পাড়া, পাইকপাড়া, ধোন্দাকোলা এলাকায় উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেও কৃষকরা তাদের রোপণকৃত ফসল পরিচর্যায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার আকন্দ পাড়ার কৃষক ময়নুল হাসান জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে দেশি মাগুড়া জাতের মরিচ চাষ করেছেন। মরিচের গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু তীব্র দাবদাহে গাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি প্রখর রোদে ফুলগুলো লালছে বর্ণ ধারণ করে ঝড়ে পড়ছে। এ বছর মরিচ চাষে প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বগুড়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, এরকম গরম যদি অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে মরিচ গাছ মরে যাবে। সে কারণে রাতে ক্ষেতে সেচ দিতে হবে। দিনের বেলায় মাটি প্রচণ্ড গরম থাকে। দিনে জমিতে সেচ দিলে মরিচ গাছ মরে যেতে পারে ও ফুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কৃষি বিপ্লব শস্য ভাণ্ডার খ্যাত বগুড়া। এ অঞ্চলের মাটি খুব উর্বর। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কৃষকের ফসলের উপর প্রভাব পড়েছে। মরিচ, কলা, কচু, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষার জন্য ব্লক সুপারভাইজারসহ আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি। তবে এ আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি মরিচ গাছের ক্ষতি হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর