রংপুর অঞ্চলে আগাম ধানে কৃষকের মনে খুশির বান লেগেছে। মরা কার্তিক এখন ভরা কার্তিকে পরিণত হয়েছে। চিরাচরিতভাবে এ দেশে অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব পালন হলেও এ অঞ্চলে কার্তিক মাসেই শুরু হয়ে গেছে নবান্ন উৎসব।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আমনে স্বল্পমেয়াদি জাতের উদ্ভাবন ও দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে কার্তিক মাসেই কৃষকের ঘরে উঠছে সোনালি ধান। স্বল্প মেয়াদি ধান চাষের ফলে সঠিক সময়ে গম, আলু বা সরিষা আবাদ করতে পারছেন কৃষকরা। গত আট বছরে রংপুর অঞ্চলে আগাম ধানের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় বিনা-৭ ব্রি -৩৩,৩৯,৫৬,৫৭ও ৬২, ৭১.৭৫,৮৭, ১০৩ সহ হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। আট বছরে আবাদের পরিমাণ বেড়েছে ৬০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। বিনা -৭ ও -১৭ ধানও হচ্ছে এই সময়ে। ১২০ দিনের মধ্যে এসব ধান ধরে তোলা যায়।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরের গড়ে প্রায় ৪ মেট্রিক টন। এই অঞ্চলের ৫ জেলায় সোয়া ৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম ধান রয়েছে একলাখ হেক্টরের ওপরে। বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে দামও বেশ ভালো থাকায় কৃষকরা রয়েছে বেশ চাঙ্গা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে নিত্যনতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এজন্য জলবায়ু সহনশীল জাতগুলো চাষের প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু বিনাধান-১৭ স্বল্প মেয়াদি হওয়ার এ ধান কেটে এ অঞ্চলের কৃষকরা সহজেই গম-সরিষা বা আলু আবাদে যেতে পারবেন। বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল এবং জীবনকাল কম হওয়ায় শস্যেও নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। অন্য জাতের তুলনায় এ জাত চাষে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ কম সার ও সেচ লাগে।
কাউনয়া উপজেলার কৃষক জিল্লুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আজিজুর রহমান, আফজাল হোসেনসহ অনেকেই জানালেন তারা আগাম ধান চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও আগাম জাতের
ধান চাষের কথা চিন্তা করা যেত না।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, আগাম জাতের ধান এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছে। প্রতিবছরই এই ধান চাষ বাড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা