বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বৈরী জলবায়ুতে আমাদের কৃষি প্রস্তুতি

শাইখ সিরাজ

বৈরী জলবায়ুতে আমাদের কৃষি প্রস্তুতি

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের গ্রামে গ্রামে আমন মৌসুমের ধান কাটা ও ফলন বিষয়ে কাজ করে বেড়াচ্ছি। দুপুরে তীব্র গরমে রীতিমতো নাভিশ্বাস আমাদের। এরই মধ্যে মাঠে মাঠে কৃষক ধান কাটছেন। গরমে ঘেমে নেয়ে ওঠা কৃষকের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হলো। হেমন্ত ঋতু বা কার্তিকে এমন গরম আগে ছিল না। এখন ক্রমেই আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠছে। বেশ ক্ষুধার্ত আমরা। আশপাশে রেস্তোরাঁ খুঁজে না পেয়ে গাড়ি টেনে চলে গেলাম ধল্লার ভূমদক্ষিণে। সড়ক সংলগ্ন সেতু পেরিয়ে কয়েকটি দোকান। এর মধ্যেই কোনো রকম ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি আর দুটি টেবিল পাতা একটি রেস্তোরাঁ। খাওয়া পাওয়া যাবে কিনা খোঁজ নিতেই কয়েকজন এসে জানালেন, এলাকায় এই হোটেলই সেরা। খুব ভালো খাবার। দেখলাম, জীর্ণকায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী হোটেলটি চালায়। মহিলাটিই নিজের হাতযশ আর খাদ্য তৈরির দক্ষতা দিয়ে সামান্য হোটেলটিকে পরিচিত করে তুলেছে। হোটেলের কোনো নাম লেখা নেই কোথাও। তারপরও সবাই জানে মুন্নির মা’র হোটেল হিসেবে। দেখলাম মুন্নির মা সত্যিই যত্ন করে খাবার পরিবেশন করেন। রান্নার স্বাদও ভালো। কথায় কথায় জানলাম, তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জে নয়, সাতক্ষীরা উপকূলে ছিল তাদের বাড়ি। লবণপানিতে জমি জিরাত সবকিছু গ্রাস করার কারণে তারা এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে এখানে। একেই বলে জলবায়ু উদ্বাস্তু। একটি দুটি পরিবার নয়, এমন শত শত পরিবার প্রতিদিন জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে। উপকূলের বিপর্যস্ত জীবন ছেড়ে তারা পাড়ি জমাচ্ছে অন্যত্র। পৃথিবীর দেশে দেশে এই জলবায়ু উদ্বাস্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক দেশ থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। যুদ্ধ ও সংঘাত যেমন যুগ যুগ ধরে টিকে থাকা জনপদ থেকে বিতাড়িত করছে, একইভাবে তাড়া করছে বৈরী জলবায়ুর প্রভাবও। আমার গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি এবং গ্রামীণ জীবন নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা প্রায় চল্লিশ বছর হলো। চোখের সামনে কৃষির বহুমুখী পরিবর্তন ও কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর নানারকম জীবন যন্ত্রণা দেখলাম। এর মধ্যে আগামীর কৃষি কোনদিকে এগোচ্ছে তা নিজের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়েই  আঁচ করতে পারি। আগামীর কৃষির প্রশ্নে প্রধান চ্যালেঞ্জ জলবায়ুর পরিবর্তন।

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে জলবায়ু পরিবর্তন নানা রকম জটিল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ স্থলভাগ তলিয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে ব্যাপক পরিমাণে চাষযোগ্য জমি যেমন ধ্বংস হবে, তেমনি সাড়ে তিন কোটির মতো মানুষ হবে ঘরহারা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর, মুন্সীগঞ্জ, খুলনার বটিয়াঘাটা, কয়রা, দাকোপ, বাগেরহাটের শরণখোলাসহ আশপাশের উপকূলীয় জনপদে গত দুই দশকে বহুবার গেছি। একেক এলাকার একেক চিত্র। এসব এলাকা লবণ পানির আগ্রাসনে যতটা বিপর্যস্ত হচ্ছে, সে তুলনায় এখানে কৃষি ও ফসলি সমাধানের জোগানটি অপ্রতুল। এ কারণেই দেশের অন্যান্য এলাকা কৃষি বৈচিত্র্যে যেভাবে এগিয়ে চলেছে উপকূলীয় এলাকা সে তুলনায় কোনো পরিবর্তনই চোখে দেখছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় সরকারি বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণাক্ত এলাকার উপযোগী কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু ক্রমেই বেড়ে যাওয়া লবণের তীব্রতার কাছে সেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে টিকতে পারছে না। আমি দেখেছি শ্যামনগরের হায়বাতপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম আরও কয়েকজন কৃষককে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় কিছু লবণ সহনশীল ধানের জাত সংগ্রহ করছেন। তারা বলছেন, বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত জাতগুলো স্থানীয় জাতের সমানও টিকে থাকতে পারছে না।

বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ সহজ করার জন্য জাতীয় প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন নীতি ও কৌশলগুলোর আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এক্ষেত্রে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও পরামর্শ রয়েছে তাদের। ২০১৩ সালের একটি জাতীয় গবেষণা অনুসারে, বিশ্বে জলবায়ুগত ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রায় নিয়মিতই দেশটি বর্ষা মৌসুমে বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের মুখে পড়ছে। এছাড়া সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্থিতির পরিবর্তন তো আছেই। এ ধরনের বেশি ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলোর জনগোষ্ঠীকে স্থানীয় পর্যায়েই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হতে হবে। বর্তমানে থাকা কৌশল ও নীতিমালার সঙ্গে অভিনব ও উদ্ভূত অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।

সিডর আইলার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। একের পর এক অর্থায়ন হয়েছে। কিন্তু উপকূলীয় দুর্গম এলাকাগুলোর চেহারা দেখলে পুনর্বাসন ও উন্নয়নের তেমন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। স্থানীয়রা বলে থাকেন, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে এ পর্যন্ত যত টাকা ব্যয় হয়েছে, সে পরিমাণ টাকার কয়েন বা নোট দিয়েই উপকূলে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া যায়। যদিও এটি কথার কথা। তারপরও এ বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না যে, উপকূলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সরকারি-বেসরকারি সাহায্য ও দানের ওপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, তাদের একটি অংশ কাজ করার উদ্যমই হারিয়ে ফেলেছে। এই মানুষগুলোকে কাজে ফেরার মতো রসদ ও সহায়তা যেমন আমরা দিতে পারছি না, একইভাবে পারছি না তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার মতো কোনো উদ্যোগ নিতে। একই সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লবণ পানিনির্ভর জীবন ব্যবস্থা গুছিয়ে দেওয়ার মতো বিজ্ঞানসম্মত কোনো উদ্যোগও সরকারি-বেসরকারিভাবে গ্রহণ না করার কারণে তারা এক সময় জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। অথচ এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সারা পৃথিবীর অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের হাতে। অনেক চিন্তা, গবেষণা ও উদ্যোগ আমরা দেখি। এগুলো আমাদের দেশের জন্য আমরা ব্যবহার করি না, কাজে লাগাই না।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় কৃষি, মত্স্য, প্রাণিসম্পদ তথা গোটা খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। এমনিতেই আবহাওয়া দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা। এতে কৃষিজমি ও শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে একই সঙ্গে জনগণের স্বাস্থ্য এবং দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১০ সালের হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ এবং শ্রমশক্তির ৬৫ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। এই খাতের কর্মক্ষমতার ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ট্রেড ব্যালেন্স, এমনকি সরকারের বাজেট অবস্থানও অনেকাংশে নির্ভর করে।

জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় সাফল্য অর্জনের পর এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার প্রধান একটি অংশ হচ্ছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। কিন্তু তার জন্য যে উপযুক্ত জলবায়ু দরকার সেটাই পাল্টে যাচ্ছে। পাশাপাশি সীমিত সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং কৃষিভূমি ও কৃষি মৌসুমে পানির অভাবও কৃষিখাতে চাপ সৃষ্টি করছে।

দেশে কৃষিজমি ব্যাপক হারে কমছে। রাজধানী ঢাকার চারদিকে একটু দৃষ্টি দিলেই উত্তরা, পূর্বাচল, ঢাকার দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ, দোহার থেকে শুরু করে সবদিকে তিন ফসলি জমিতে আবাসন গড়ার এক উৎসব চলছে। সবুজ কৃষিজমিগুলো ছেয়ে গেছে অসংখ্য সিটির বিলবোর্ডে। প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন নতুন শহর গড়ে উঠছে। এই পরিবর্তন ঢাকার পাশে নয় শুধু সারা দেশেই লক্ষণীয়। আমি গত দশ বছর এ বিষয়টি নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করছি। জেলা-উপজেলা শহরেও এখন ব্যাপক হারে নগরায়ণ হচ্ছে। ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ইট-কংক্রিটের একের পর এক বিল্ডিং। মানুষের প্রয়োজনেই গড়ে উঠছে রাস্তা। কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার এই তৎপরতা দেখে সহজেই বোঝা যায় আমাদের আগামী কোনদিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা ‘ভার্টিকাল এক্সপানশন’ বা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ভাবনা ভাবছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তারও একটি সীমা আছে। অল্প জমিতে বেশি ফসলের স্বপ্ন কতদিন বা কতটা পূরণ করা যাবে? এই মুহূর্তে যদি ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দূরদর্শী পরিকল্পনার আলোকে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা না যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ এক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিশ্বায়নের যুগে নগরায়ণ ছাড়া টিকে থাকা যাবে না এটি যেমন সত্য, একইভাবে কৃষি ছাড়া সভ্যতা বাঁচবে না এই সত্যও আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। দূরদর্শী ও সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ছাড়া উন্নয়ন তৎপরতা দেশের খাদ্য-নিরাপত্তার ওপর অনেক বড় আঘাত হানতে পারে। খাদ্য সংকট দেখা দিলে তার কুফল সবচেয়ে বেশি ভোগ করতে হবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, যাদের উপার্জনের সবচেয়ে বড় অংশটিই ব্যয় হয় খাবারের পেছনে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাস-বন্যা ও সামুদ্রিক ঝড় বেড়ে যাওয়ার ফলে দ্রুতগতিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলো থেকে ভিতরের অঞ্চলগুলোর মাটিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে। কয়েক বছর আগে বিএডিসির গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত এক জরিপে আমরা দেখতে পাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যেভাবে বাড়ছে তাতে অচীরেই দেশের মধ্যাঞ্চলে লবণ পানি ঢুকে পড়বে। ইতিমধ্যে মাগুরার শালিখা পর্যন্ত লবণ পানি এসে গেছে। মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে তার উর্বরতা কমে যায়, শস্যের ফলন ব্যাহত হয়। সেখানে বাংলাদেশের কৃষিজমির ৩০ শতাংশই উপকূল এলাকায়। বাড়তে থাকা লবণাক্ততার কারণে উচ্চ ফলনশীল ধানের ফলন ১৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে একটি গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। শুকনো মৌসুমে সেচের মাধ্যমে খেতে পানি দেওয়াও তখন কষ্টকর হয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির স্তর ৫০ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচু। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলবাসী অনেক বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপর্যয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে এতদূর এসেছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করাই আপাতত সবচেয়ে বড় সমাধান বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯’ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষতা বৃদ্ধির দশ বছরমেয়াদি এই প্রকল্পে খুবই দরকারি কর্মসূচি ও পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এতে সময়ের চাহিদা অনুসারে আরও নতুন নতুন কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন জলবায়ুবিষয়ক গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে আরও উন্নত শস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ, মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ হ্রাসের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ আসে, মানুষ দক্ষতা, সহনশীলতা ও মনোবল দিয়ে তা মোকাবিলা করে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষ দুর্যোগে তার নিজস্ব শক্তি, সাহস আর অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। পরে বিজ্ঞান এসে অনেক বিষয়ে মানুষের কাছে নতুন নতুন ধারণা পৌঁছে দিতে পেরেছে। বিশ্বব্যাপী ষাটের দশকে যখন সবুজ বিপ্লব সূচিত হয়, তখনকার জন্য তা ছিল অপরিহার্য এক উদ্যোগ। তার ফলশ্রুতিতেই সারা পৃথিবীর একাংশের মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় এক স্বস্তির সন্ধান পায়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকাংশেই খাদ্যের জোগান পায়। টানা প্রায় ষাট বছর ওই সাফল্যই এখনো পৃথিবীবাসীর জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে আছে। ব্যতিক্রমও নেই তা নয়। শুরুতে যে বিষয়ের অবতারণা করেছিলাম, অনুন্নত দেশগুলোতে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়ছে। আফ্রিকার মরু অঞ্চলে তীব্র খরায় মানুষ ও পশুপাখি মারা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সোমালিয়া পরিস্থিতি যেমন আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। ইতিমধ্যেই সেখানে খরায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খরা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও টানা চার বছর বৃষ্টির দেখা নেই। এগুলো সারা পৃথিবীর জন্যই এক ধরনের সতর্ক সংকেত। আমাদের দেশ বন্যা, লবণাক্ততার মতো জলবায়ুর বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। একই সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব তো রয়েছেই। এই পরিবর্তনগুলো মাথায় রেখে বর্তমান ও আগামীর প্রশ্নে নতুন করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও কৌশলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যতই দুর্যোগ ও জলবায়ুগত পরিবর্তন আসুক না কেন, তা মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে। দুর্যোগে টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কৃতিত্ব রয়েছে। এই সহনশীলতা ধরে রাখার জন্যই প্রয়োজন সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞান ও কৌশলের ব্যবহার।

 

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর