শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আগ্রহ বেড়েই চলেছে

সমরেশ মজুমদার

আগ্রহ বেড়েই চলেছে

আমাদের বাল্যকালে সংবাদপত্রের ভাষা ছিল অনেক গোঁড়ামিতে জড়ানো। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাতে খবর লেখার প্রবণতা তখন দেখা যেত না। সম্ভবত তারা মনে করতেন সেটা করলে খবরের গাম্ভীর্য চলে যাবে, মানুষ সমীহ করবে না। সে সময় ইংরেজিতে যা নিউজ পেপার তা বাংলা সংবাদপত্র, খবরের কাগজ নয়।

অভ্যাসটা সহজে চলে যায়নি। সম্ভবত অনেক প্রাচীনপন্থি মানুষকে বলতে শুনি, ‘আজকের নিউজ পেপার দেখেছেন! তাদের মুখে সহজে খবরের কাগজ আসে না, বাংলা বাক্যে ইংরেজি নিউজ পেপার’ বলতে তারা অভ্যস্ত। সাধু ভাষা থেকে যখন খবরের কাগজের ভাষা চলতি ভাষায় বদলে গেল তখনো তার বাক্য গঠনের মধ্যে সাধু ভাষার ছায়া জড়িয়ে ছিল। এই সেদিনও অনেক মানুষের ধারণা ছিল সাধু ভাষায় বাক্য না লিখলে অথবা গম্ভীর ওজনদার শব্দ কয়েকটি বাক্যে না থাকলে তা শিক্ষিত মানুষের রচনা বলে প্রমাণিত হতো না।

আমার চোখের সামনেই খবরের কাগজের ভাষা বদলে গেল। এক সময় বলা হতো, শিক্ষিত মানুষের ভাষায় সাহিত্য রচনা হবে, স্বল্প শিক্ষিতরা সেই সাহিত্য পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে। গত ষাট বছর ধরে একটু একটু করে এই ভাবনার পরিবর্তন শুরু হলো। সাধারণ মানুষ যে ভাষা বোঝে, যে ভাষায় কথা বলে, যা তার মায়ের ভাষা তাই খবরের কাগজের ভাষা হয়ে গেল। নিউজ পেপারের বাংলা আর সংবাদপত্র নয়, খবরের কাগজ বললে ঘরোয়া মনে হয়।

এক শহর থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি খবরের কাগজ সকালে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের নির্মাতারা উদ্যোগী হন। দেখা যায়, কোনো কাগজকে বেশি সংখ্যার পাঠক পছন্দ করছেন, কোনোটাকে মাঝামাঝি সংখ্যার পাঠক, কোনোটাকে নিতান্তই কম। দৃশ্যত, একই খবর থাকছে প্রতিটি খবরের কাগজের পাতায়। তাহলে পাঠকদের পছন্দের এই তারতম্য কেন? যে কয়েকটি কারণ এই পার্থক্যের পেছনে রয়েছে তা হলো, অসম্পূর্ণ খবর পরিবেশন না করা, যুক্তিহীন ব্যাখ্যা না দেওয়া, কোন খবরকে কতটা প্রাধান্য দেওয়া উচিত তা সঠিক হওয়া, খবর লেখার ভাষা পড়তে পাঠক যাতে হোঁচট না খায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।

‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ যখন একে একে বছর ডিঙিয়ে চলেছে তখনই লক্ষ্য করেছিলাম বাঙালির প্রিয় কাগজ হওয়ার যাবতীয় গুণ তার মধ্যে আছে। আজ এই কাগজ আট পেরিয়ে ন’য়ে পা দিয়েছে। এই নয় শব্দটি মনে করিয়ে দেয় নবগ্রহের কথা, যারা সূর্যের চারপাশে ক্রমাগত পাক খেয়ে চলেছে এবং এখন পর্যন্ত পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। তাই নবগ্রহের একমাত্র প্রাণবন্ত গ্রহ হলো পৃথিবী।

‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ যদি নবগ্রহের পৃথিবীর মতো গৌরবের অধিকারী হয় তাহলে এই কাগজের একজন সামান্য লেখক হিসেবে আমি গর্ববোধ করব। শুধু খবর পরিবেশনে আন্তরিক নয়, তামাম বাংলা সাহিত্যকে ধরা হয় তার সাপ্তাহিক পাতায়, ঈদসংখ্যাকে করে তোলেন সময় পার করা এক গর্বের সংকলনে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হোক।

 

লেখক : বাংলা ভাষার খ্যাতিমান সাহিত্যিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর