১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৫:৪০

জঙ্গি টার্গেটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবি প্রতিনিধি

জঙ্গি টার্গেটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মুঠোফোনে কল অথবা উমড়া চিঠি দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ এক বছরে প্রায় ২৫ জন শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়েছে আনসার আল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি নিষদ্ধি জঙ্গি সংগঠন।

থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত হুমকি দাতা চক্রগুলোকে শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একের পর এক শিক্ষককে টার্গেট করে হত্যার হুমকিসহ চাঁদা দাবি করে চলেছে চক্রগুলো। এতে করে আতঙ্কের মধ্যে দিন গুনছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। আর রাবিতে শিক্ষক হত্যার সর্বশেষ উদাহরণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ড। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দিন দুপুরে নিজের বাড়ির সামনে হত্যা করা হয় এই শিক্ষককে। ওই দিন এই হত্যার দায় স্বীকার করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২। পরবর্তী তদনে্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে চার্জশিট দেয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু হত্যা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ এবং দায় স্বীকার পুরোটাই এখনো রহস্যের টোপে ঘেরা। এরপর ২০১৫ সালের শুর' থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের মুঠোফোন নম্বরে কল করে অথবা খুদে বার্তার মাধ্যমে একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনের নাম উলে্লখ করে দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, লাল বাহিনী, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, চরমপন্থী দল, সর্বহারা পার্টিসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চেৌধুরী সারওয়ার জাহান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাসসহ প্রায় ২৫ জন শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন পরিচয়ে মুঠোফোনে কল করা হয়। পরবর্তীতে থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন হুমকি প্রাপ্ত শিক্ষকরা। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এবং কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে হত্যার হুমকি দিয়ে উপাচার্য দপ্তরে আনসার আল ইসলাম (আল-কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ) নামের সংগঠনটির প্যাডে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ‌'রাজশাহী অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম শুরু এবং আল্লাহ ও রাসূলের দ্বীন প্রতিষ্ঠায় তাদের হত্যা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।'

এ হুমকি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, 'গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে মুঠোফোনে হুমকি পাওয়া বিষয়ে প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগগুলো লিখিতভাবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ হুমকির বিষয়গুলো তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হুমকিদাতাকে ধরতে পারেনি।'
 
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা নম্বরগুলো ট্র্যাক করার চষ্টো করেছি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনিবন্ধিত সিম থেকে হুমকি দেওয়া হয়। তাই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য জঙ্গিগোষ্ঠী নাকি অন্য কোনো চক্র এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা এখনো স্পষ্ট না।'

শিক্ষকদের হত্যার হুমকির বিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'জঙ্গি গোষ্ঠী এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি শিক্ষক সমাজকে আতঙ্কিত করতে এই ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা চাইছে সমাজে ভয় তৈরি করতে। আমরা আশা করছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে।'

 

বিডি-প্রতিদিন/১৬ জানুয়ারি ২০১৬/শরীফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর