১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৫:৪২

ইবিতে অপেক্ষামান তালিকায় ভর্তিতে সক্রিয় জালিয়াতি চক্র

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

ইবিতে অপেক্ষামান তালিকায় ভর্তিতে সক্রিয় জালিয়াতি চক্র

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের অনার্স (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির অপেক্ষামান তালিকার সাক্ষাৎকার ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের অধীনে ৮ টি ইউনিট ভুক্ত ২৫ টি বিভাগে মোট ১৬৯৫ টি আসনের বিপরীতে মেধা তালিকা থেকে ভর্তি হয়েছে ১২৪৬ জন শিক্ষার্থী। আসন শূন্য রয়েছে ৪৪৯টি। 

এদিকে শূন্য আসনে অপেক্ষামান তালিকার মেধাক্রম অনুসরণ না করে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করতে সক্রিয় রয়েছে জালিয়াতি চক্র। আর এই জালিয়াতি চক্র অপেক্ষামান তালিকায় শেষের দিকে স্থান পাওয়া ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আশ্বাস দিয়ে তাদের অবিভাবকদের কাছ থেকে মোট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থীকে ভর্তি করতে অনেক ভর্তিচ্ছুকে অপহরণ করার অভিযোগও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপেক্ষামান তালিকা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে গড়ে উঠেছে জালিয়াতি চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি, চাকরি প্রত্যাশি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এবং ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক ভাবে এই সিন্ডিকেট চক্র তৈরি করেছে। তারা অপেক্ষামান তালিকায় শেষের দিকে স্থান পাওয়া ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আশ্বাস দিয়ে অবিভাবকদের কাছ থেকে মোট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। 

ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষামান তালিকার স্থান পাওয়া ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে দেখা গেছে চক্রের সদস্যদের। তারা ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে কাগজপত্র কেড়ে নিয়েও মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। পছন্দের প্রার্থীর জন্য ইউনিট সমন্নয়কারী শিক্ষকদেরও বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া পছন্দের প্রার্থীকে ভর্তি করতে মেধা তালিকায় তার আগে থাকা শিক্ষার্থীকে অপহরণও করে তারা। তবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে ছাত্রলীগসহ ভর্তি জালিয়াতি সিন্ডিকেট সুবিধা করতে না পারায় অপেক্ষামান তালিকার ভর্তিতে জালিয়াতি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। মেধা তলিকা থেকে ভর্তি শেষে কোন বিভাগে কতটি আসন শূন্য রয়েছে তার হিসেবও তারা সংগ্রহ করেছে। 

বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, অপেক্ষামান তালিকার ভর্তিতে বিভিন্নভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করাতে সক্রিয় থাকে এই সিন্ডিকেট চক্র। গত ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে অপেক্ষামান তালিকা থেকে ভর্তির সময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিশির ইসলাম বাবু ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। পরে ব্যবস্থাপনা বিভাগে সভাপতির হস্তক্ষেপে সেই শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। একই শিক্ষাবর্ষে চাকরি প্রত্যাশী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইলিয়াস জোয়াদ্দার ‘এইচ’ ইউনিটে পছন্দের প্রার্থীকে ভর্তি করাতে এক ভর্তিচ্ছুকে অপহরণ করে। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে ওই শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আইন বিভাগে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী রুমের মধ্যে আটকে রাখে ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তারা ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তির সাক্ষাৎকার দিতে দেয়নি। পরে ইউনিট সমন্বয়কারী শিক্ষকরা বিষয়টি জানতে পেয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়। এছাড়া বিভিন্ন কলাকৌশলে তারা ভর্তি জালিয়াতি করে থাকে। যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়।

আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে অপেক্ষামান তালিকা থেকে ভর্তি শুরু হওয়ায় মেধা তালিকায় দূরে স্থান পাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকরা কাগজপত্র এবং অর্থ নিয়ে গোপনে এই জালিয়াতি চক্রের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তারাও সন্তানদের পাকলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করতে কুন্ঠাবোধ করছে না। আবার ইউনিট সমন্বয়কারীরা বিভিন্ন সময়ে জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের সাথে আঁতাত করে ভর্তির নোটিশ না দিয়ে ভর্তি করিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, যে সব শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয় পরবর্তীতে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে। তাদের স্বার্থের জন্য তারা বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর, বাস ভাংচুর, মেইন গেটে তালাসহ বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাস অচল করে দেয়। 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড.মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রশাসন যেভাবে কঠোর নজরদারি রেখেছিল, ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যহত থাকবে। তবে যে কারোর বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ উঠলে প্রমাণ সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

বিডি প্রতিদিন/১৩ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর