৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৭:৪৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন চলছেই

ইকবাল হোসাইন রুদ্র:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন চলছেই

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত শিক্ষার্থীদের উপর র‌্যাগিং এর নামে একের পর এক নির্যাতন চলছেই। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ঘটনার সাথে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এমনকি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, নির্যাতিতদের অভিযোগ করতেও বারণ করা হচ্ছে। এতে নবাগতরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিরুপ মনোভাব ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ পড়ালেখা বাদ দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগের কথা ভাবছেন বলে চাউর রয়েছে।

সূত্রমতে, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিং এর নামে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। নির্যাতিত ওই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে জানান, অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা ফোন রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে ‘বড় ভাই’ পরিচয় দিয়ে সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে আসতে বলেন। ছাত্রী এতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আবারও হুমকি দেয়। এসময় বান্ধবীদের সাথে আনতে চাইলে আমাকে একা আসতে বলে। আমি হলের সামনে আসলে আমার বিভাগের ৪-৫ জন বড় ভাই আমাকে ঘিরে ধরে। এরপর তারা আমাকে বলে তুইতো খুবই ফেমাস হয়ে গেছিস। তুই তো একটা ...।

এছাড়াও বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে আমার ছবি তোলার চেষ্টা করে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টার দিক বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনে র‌্যাগের নামে এ ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রী পরিচিত দুই বড় ভাই গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হলে পৌঁছে দেয়। তারা জানান ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের রিসালাত হাসান মেরিন (২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ) ও জাকির হোসেন প্রামানিক (১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ)সহ কয়েক ছাত্র ওই ছাত্রীকে র‌্যাগিং এর নামে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করে।

গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আল আমিন নামের এক নবীন শিক্ষার্থীর উপর মধ্যরাত পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। আল আমিন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি এক ভাইয়ের সহযোগীতায় কুষ্টিয়ায় অবস্থিত শাহীন ম্যানশন মেসে উঠি। রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মেসের দায়িত্বে থাকা এক কামরুজ্জামান নামের এক ভাই সবার সাথে পরিচিত হতে বলেন। পরিচয় হওয়ার জন্য প্রথমে এক কক্ষে প্রবেশ করলে ওই কক্ষের রড় ভাইরা আমাকে চেয়ার না দিয়ে চেয়ারে বসার মতো করে ১২-১৫ মিনিট বসিয়ে রাখে।

এছাড়া দুই কান ধরিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাখে ১৫-২০ মিনিটের মতো। এরপর অন্য একটি কক্ষে পরিচয় হতে গিলে তারা আমাকে কোল বালিশ দিয়ে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করতে বলে। এছাড়া তিনতলা ভবনে কয়টি সিঁড়ি আছে গুনে আসতে আদেশ দেয়। অন্য আরেকটি রুমের ভাইরা আমাকে ম্যাচের কাঠি দিয়ে দরজার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপে ক্ষেত্রফল বের করার নির্দেশ দেয়।

পরের দিন তৃতীয় তলার ভাইদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ারও নির্দেশ দেয় বড় ভাইরা। রাতে শরীরে জ্বর চলে আসে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নাসে এসে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে দিতে কান্নায় ভেঙে পড়ে আল আমিন।

এদিকে একের পর এক র‌্যাগিং এর নামে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যাবস্থা নিতে দেখা যায়নি। র‌্যাগিংএ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগ কারীদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায় নি। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘র‌্যাগিং এর নামে নির্যাতন আমরা কোন ভাবেই সহ্য করব না। ইতিমধ্যে প্রশাসন শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। যদি কেউ এমন নির্যাতনের শিকার হয় তবে আমাদের জানানোর অনুরোধ করছি। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, অপরাধীরা কোন ছাড় পাবে না।'
র‌্যাগিং ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক। র‌্যাগিং এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। এছাড়া র‌্যাগিং এর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিডি প্রতিদিন/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর