১৯ মার্চ, ২০১৭ ১৫:৪২

দুর্নীতির মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর:

দুর্নীতির মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

দুর্নীতির মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. আব্দুল জলিল মিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ রবিবার দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয় বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক আকবর আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আজ দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল জলিল মিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে রংপুরের মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। 

অপর আসামিরা হলেন- বেরোবির উপ-রেজিস্ট্রার (সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার) শাহজাহান আলী মণ্ডল, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, সহকারী রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম রনি ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে আব্দুল জলিল মিয়া কানাডায় বসবাস করলেও অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল জলিল মিয়া তার দায়িত্বপালনকালে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামোর শর্তানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রশাসনিক ও আর্থিক অনুমোদন ছাড়াই এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞপ্তি বহির্ভূত অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ক্ষেত্রমতে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, মোর্শেদ উল আলম রনি, খন্দকার আশরাফুল ইসলামসহ অননুমোদিত ৩৪৯ জন জনবল নিয়োগ দেন। সরকার বাজেট বরাদ্দ না দেওয়া সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খাত থেকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। 

আসামি উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে থেকে জনবল নিয়োগসহ উপাচার্যের সকল অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেছেন। 

আসামি এ.টি.জি.এম গোলাম ফিরোজ, আগের বেসরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা দিয়ে উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়াকে প্ররোচিত করে   প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই পিএস টু পিডি পদে (৯ম গ্রেডে) এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করেন। পরে ২০দিন পর উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ৫ম গ্রেড পদে প্রয়োজনীয় ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও এডহক নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তীতে অপরাধজনক অসদাচরনের মাধ্যমে অবৈধভাবে নতুন কোনো যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ৫ম গ্রেডে উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগ পান। 

আসামি মোর্শেদ উল আলম রনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ হল- তিনি ২০০৭ সালের নভেম্বরে এমএসসি পাশ করেন। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এসোড নামে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ভুয়াভাবে ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে অবৈধভাবে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ৫ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাকে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

অপর আসামি খন্দকার আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- নুন্যতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা,কম্পিউটার পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা,বয়সসীমা অনুর্ধ ৩৫ বছর এবং স্নাতক(সম্মান) না থাকা সত্ত্বেও তিনি তথ্য গোপন করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে চাকরি নেন।   

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আকবর আলী জানান, মামলাটি তদন্ত করে এর অভিযোপত্র অনুমোদনের জন্য দুদকের রংপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে ঢাকায় দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়। গত আট মার্চ দুদক ঢাকার কার্যালয় অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য অনুমোদন দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দণ্ডবিধি ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান আকবর আলী।   

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদক সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল করিম বাদী হয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল মিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি ২০১৩ সালের ৪মে উপাচার্য আব্দুল জলিলকে তার পদ থেকে অব্যাহিত দেন। 

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ফিরে যান। পরে জলিল মিয়া গোপনে দেশত্যাগ করে কানাডায় চলে যান। 

বিডি প্রতিদিন/১৯ মার্চ ২০১৭/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর