২৮ মে, ২০১৭ ১৯:৩৬

জাবির ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

জাবির ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্র নিহতের পর বিক্ষোভ-ভাংচুরসহ সার্বিক ঘটনার বিবেচনা করার জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অধ্যাপক অসিত বরণ পালকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তবাদী শিক্ষক ফোরাম তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেছে। বিবৃতিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে। 

এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্র নিহতের পর বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দশ ছাত্রীসহ ৪২ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে আদালত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রবিববার তাদের আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান সবার জামিন মঞ্জুর করেন।

শিক্ষার্থীদের আইনজীবী সানাউল ইসলাম টিপু জানান, এ মামলায় হামলা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি গুরুতর জখম ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিকে শান্ত করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা বহাল রেখেছে প্রশাসন। হল ত্যাগের নির্দেশে রবিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে শুরু করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।  

শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। শাখা ছাত্রলীগ এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সকাল সাড়ে এগারোটায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি প্রশাসন। তবে কিছু দিনের মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে বলে ছাত্রলীগকে আশ্বাস দিয়েছে উপাচার্য।  

গত ২৬ মে ভোর ৫টায় জাবি সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় কিছু দিন পর পর এই রাস্তায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটছে। ওই দিন দুপুর ২টায় পাঁচ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। কিন্তু প্রশাসনের আশ্বাসে এবং শাখা ছাত্রলীগের বাঁধায় ১০ মিনিটের মধ্যে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।  

দাবিগুলো হল- নিহতদের লাশ জানাযার জন্য ক্যাম্পাসে কেনো ঢুকতে দেয়া হয়নি প্রশাসনকে তার জবাবদিহিতা করতে হবে, নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং নিহত আরাফাতের দুলাভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিতে হবে, যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে চিহ্নিত করে চালকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সিএন্ডবি থেকে বিশমাইল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় স্পীডব্রেকার, জয় বাংলা গেটে ফুটওভার ব্রিজ এবং একাধিক পুলিশ বক্স দিতে হবে এবং এই এলাকায় গাড়ির গতিসীমা সর্বোচ্চ ৩০ কি মি এর মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।  

পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে আবারো একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করার পরপরই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদেরকে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে আন্দোলন করার অনুরোধ জানান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে অবরোধকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এরপর বেলা ১টার দিকে উপাচার্য শিক্ষার্থীদেরকে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবিসমূহ পূরণের দাবিতে অবরোধ অব্যাহত রাখে। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কাছে মারধরকারীদের বিচার দাবি করে।  

এদিকে টানা পাঁচ ঘন্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। প্রশাসনের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর রাস্তা থেকে সরে না দাঁড়ানোয় বিকেল ৫টার দিকে এ্যাকশনে যায় আশুলিয়া ও সাভার মডেল থানার দুই শতাধিক পুলিশের দুটি টিম। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। 
পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে জাগো নিউজের জাবি প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান, জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনসহ আরো ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের সবাইকে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

এদিকে রাস্তা থেকে হটিয়ে দিলে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসায় ভাঙচুর চালায়। এ সময় শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাবস্তাধ্বস্তিতে সাত শিক্ষক আহত হয়। রাত বারোটার দিকে জরুরী সিন্ডিকেটের সভা বসে। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আন্দোলনকারী আটক শিক্ষার্থীদের নামে সন্ত্রাসী মামলা দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।

বিডি প্রতিদিন/ ২৮ মে, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর