২১ জুলাই, ২০১৭ ১৭:৪৪

রাবি শিক্ষক সমিতি মানছে না অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি


রাবি শিক্ষক সমিতি মানছে না অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতি

ফাইল ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে তা গ্রহণ করছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭ টা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এক সাধারণ সভায় শিক্ষক সমিতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।

জানা যায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে অভিন্ন এক নীতিমালার উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৯৩ সালে। ২০০২ এবং ২০০৪ সালে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়। পরে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও একবার এই উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মাঝখানে চার, পাঁচ বছর পর পর কখনো নতুন শিক্ষামন্ত্রী অথবা ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেন। কমিটি করেন নতুন নতুন প্রস্তাব আসে। কিন্তু  শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেলে শিক্ষককের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতার পর প্রধানমন্ত্রী তা সমাধান করতে অভিন্ন নীতিমালা করার কথা বলেন। 

এরপর ইউজিসি এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নেয়। অভিন্ন নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১১ বছরেই অধ্যাপক হয়ে যায়। কোথাও প্রভাষক পদে যোগ দিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি বাধ্যতামূলক। আবার কোথাও যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি থাকলেই চলে। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বড় ও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সবচাইতে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। এই অভিন্ন নীতিমালা হলে তা বন্ধ হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বেতন স্কেলে বৈষম্যের প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের  বৈঠকে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বৈষম্যের বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। তখনই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটি মানসম্মত অভিন্ন নীতিমালা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে এ দায়িত্ব দেয়। 

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী মোল্লাকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. শাহ নওয়াজ আলি, প্রফেসর ড. দিল আফরোজা খানম ও প্রফেসর ড. মো. আখতার  হোসেন এবং ইউজিসি সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদ। এ কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের পরিচালক খন্দকার হামিদুর রহমান।

নীতিমালা কমিটি কয়েকটি সভায় বসে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। প্রণীত এ খসড়ায় বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষকের পিএইচডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রি থাকবে, তারা প্রভাষক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং স্বীকৃত জার্নালে ১৪টি প্রকাশনা থাকলে চাকরির ১৬ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে ১৮ বছরে একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। পদ থাকলে সরাসরি ১৬ বছরে নিয়োগ পাবেন অধ্যাপক হিসেবে। আর পদশূন্য না থাকলে পদোন্নয়নের মাধ্যমে ১৮ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। 

নতুন খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে তিন বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। একইভাবে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে সাত বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে সাত বছরে, আর না থাকলে চাকরির নয় বছরে একজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। এরপর পরবর্তী পদোন্নতি অর্থাৎ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে আরো আট বছর চাকরি করতে হবে।

তবে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে  পরিচালিত হবে- সে সিদ্ধান্ত আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ গ্রহণ করব। তাই শিক্ষক ফেডারেশনের ওই সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাক্ষণ করছি।

 


বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জুলাই, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৫

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর