২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:২৮

রাবিতে মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছেই

মর্তুজা নুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবিতে মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছেই

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মাদকের ভয়াবহতা কমছে না। দিন দিন মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ছেলেদের পাশাপাশি মাদকের প্রতি মেয়েদের আসক্তিও বৃদ্ধি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গাকে মাদকের অলিখিত স্পট বানিয়ে ফেলেছে মাদকসেবীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও এসব জায়গায় এসে মাদক সেবন করছে। তবে সকল প্রকার মাদকসেবন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু জায়গা সন্ধ্যার পর পরিণত হয় মাদকদ্রব্য সেবনের আখড়ায়। এই জায়গাগুলোতে সন্ধ্যার পর নিয়মিত গাঁজা সেবনের আসর বসানো হচ্ছে। এছাড়াও আবাসিক হলগুলোর ছাঁদে ও বিভিন্ন কক্ষে রাতের বেলা বসানো হচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের আসর। বিভিন্ন উৎসবে ছাত্র হলগুলোতে চলে মদ পান। সব মিলিয়ে গোটা ক্যাম্পাস এখন পরিণত হয়েছে মাদকের রাজ্যে।

জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অন্তত ২০-২৫ জায়গায় প্রতিদিন বসে মাদক সেবনের আসর। সন্ধ্যার পর এসব স্থান দিয়ে গেলে হঠাৎ করেই নাকে পৌঁছবে একটি গন্ধ। পাশে তাকালেই দেখা মিলবে কয়েকজন গোল হয়ে বসে সিগারেটে পুরে সেবন করছেন গাঁজা। শুধু সন্ধ্যা বা রাতের বেলা নয় দিনের বেলাতেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে চলছে গাঁজা সেবন। 

শিক্ষার্থীদের মাদক সেবনের আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে ও তাদের স্থানও নির্ধারণ করা থাকে। কখনো সন্ধ্যার পর আবার কখনো রাতে মাদক সেবনের জন্য সবাই হাজির হন তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে, কৃষি প্রকল্পের গোডাউনের বারান্দায়, বিনোদপুর গেট সংলগ্ন আইবিএস ভবন যাওয়ার রাস্তায় সৈয়দ আমীর হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়, নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পার্শ্বের মাঠে, শাহ মখদুম হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের দুই পার্শ্বে, মাদার বখশ ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের মাঠে, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ সংলগ্ন মাঠগুলোর অন্তত তিনটি পয়েন্টে, তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে তুঁতবাগান এলাকায়, দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের ব্রীজে, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পেছনে চায়ের দোকানে, প্রথম বিজ্ঞান ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাঠে পানির ফোয়ারার নিচে, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ও রবীন্দ্র কলা ভবনের ছাদে, রোকেয়া হলের পশ্চিম দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাজার গেটে রাস্তার পার্শ্বের মাঠে, পুরাতন ফোকলোর মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে, জুবেরি মাঠের দক্ষিণ কোনায়, দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের পূর্ব কোনায়, বিএনসিসি মাঠসহ ক্যাম্পাসের একাধিক স্থানে নিয়মিত বসে গাঁজা সেবনের আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা এসব আসর বসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পরিচয়ে তারা মটরসাইকেলে করে এসব জায়গায় আসছে। আবার মাদক সেবন শেষ করে কোনো রকম জটঝামেলা ছাড়াই চলে যাচ্ছে। অনেক এসব বহিরাগতরাই মাদক সরবরাহ করে থাকে।

হেরোয়িন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও মদের আসক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকার্থীরা ছাত্র-ছাত্রীদের হলগুলোর সামনে কিংবা পাশে এবং ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর নিচে অহরহ পড়ে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের বোতল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রায় প্রতিটি হলেই এখন চলছে ইয়াবা সেবন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুধু ছাত্ররাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন। গত ১৬ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের ছাদে অভিযান চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। সেখান থেকে মাদক সেবনের সময় ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে তারা। এদের মধ্যে ৪ জন মেয়েও ছিল। যাদের মধ্যে একজন মেয়ের ব্যাগ থেকে ৩ পিস ইয়াবা, ৩ প্যাকেট গাঁজা ও সিগারেট উদ্ধার করে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাহিরে একাধিক স্থানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরণের মাদক। ক্যাম্পাসের স্টেশন বাজারে একাধিক দোকানে ও পাওয়া যায় গাঁজা ও ফেনসিডিল। ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাজলা ও কাটাখালির একাধিক ব্যক্তি ও দোকানে মেলে বিভিন্ন ধরণের মাদক। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মির্জাপুর এলাকায় একাধিক দোকানে বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। মদ পাওয়া যায় নগরীর সাহেব বাজারের একাধিক স্থানে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, মাদক ও সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চিহ্নিত জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রুত এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে।

বিডি-প্রতিদিন/২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর