১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ১৯:৪৮

বেরোবিতে শিক্ষক সংকটে অসহনীয় সেশনজট

সৌম্য সরকার, বেরোবি প্রতিনিধি:

বেরোবিতে শিক্ষক সংকটে অসহনীয় সেশনজট

ফাইল ছবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২১টি বিভাগে রয়েছেন মাত্র ১৪৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ২৪ জন শিক্ষক বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।

দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ২০০৮ সালের ১২ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষক সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার নয় বছর পরেও অভিজ্ঞ শিক্ষক তো দূরের কথা শিক্ষক সংকটই মেটাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। 

ইউজিসির সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:৪, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:৮, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:১৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:১৫,এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:২৮ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যিালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত-১:৬২, যা দেশের সব সরকারি বিশ্বদ্যিালয়ের তুলনায় অপ্রতুল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৪৪ জন। এর মধ্যে ২৪ জন শিক্ষক রয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১২০ জনের অনেকেই বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত।

বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ছুটিতে থাকা শীর্ষ বিভাগগুলো হলো ইংরেজি বিভাগের ৭জন শিক্ষকের ৩জন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৭জন শিক্ষকের ২জন, রসায়ন বিভাগের ৮জন শিক্ষকের ২জন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৯জন শিক্ষকের ৩জন আছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। এছাড়াও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২জন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ১জন, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ১জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১জন, গণিত বিভাগের ১জন, পরিসংখ্যান বিভাগের ১জন, ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন্স বিভাগের ১জন,  দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের ৩জন, ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগের ১জন, মার্কেটিং বিভাগের ২জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু থাকায় এসব বিভাগের একজন শিক্ষককেই নিতে হচ্ছে ১০-১২টি কোর্স। ফলে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম তেমনি শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬টি ব্যাচের প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থীর বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন। এরমধ্যে একজন আছেন শিক্ষা ছুটিতে। বাকি তিনজন শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬টি ব্যাচের পাঠদান।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং  গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, “প্রত্যেক বিভাগে অপর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় সেশনজটের অন্যতম কারণ। শিক্ষকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও সেশনজট কমাতে হিমশিম খাচ্ছে। এজন্য প্রতিটি বিবাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে অনেকটা নিরসন সম্ভব। আশা করি বর্তমান প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।” 

অপরদিকে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সাতটি ব্যাচের ৪৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে, মাত্র চারজন শিক্ষক দিয়েই চলছে সাতটি ব্যাচের পাঠদান। এতে একজন শিক্ষককেই নিতে হচ্ছে ১০-১২ টি কোর্স।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের মূল কারণ শিক্ষক স্বল্পতা। শ্রীঘ্রই প্রত্যেকটি বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ না দিলে সেশনজট কমানো সম্ভব হবে না।” 

এদিকে, গত নয় বছরে যে পরিমাণে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে সেই অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ৬ মাস থেকে আড়াই বছরের সেশনজটের বোঝা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। আর সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীরা বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) সহ অন্যান্য চাকুরীর নিয়োগের পরীক্ষায় সময়মত অংশ নিতে পারছে না। অন্যদিকে দেরীতে অনার্স শেষ হওয়ার কারণে সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

তবে জটের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশী পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ, রাসায়ন, বাংলা, ইংরেজী, ইতিহাস, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি সেমিস্টার নির্ধারিত ৬ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একটি সেমিস্টার শেষ হতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ মাস। সেমিস্টারের নিয়ম অনুযায়ী সময়মতো ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবং বিলম্বে ফল প্রকাশ করায় সেশনজটের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদেরকে সেশনজট মুক্ত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৫ অক্টোবর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর