১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৪:১২

পরিকল্পনা মাফিক এগুলে IELTS-06 তেমন দূরহ কিছু না

মোঃ মারুফ ফিরোজ

পরিকল্পনা মাফিক এগুলে IELTS-06 তেমন দূরহ কিছু না

২০১১ সালের কথা, বুয়েট থেকে পাশ করা বেশ কিছু স্টুডেন্ট ইউএসএ থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার পরিকল্পনা করছিল। আর সেজন্য প্রয়োজন ছিল  কমপক্ষে ৭, যা ইংরেজীতে তাদের ভাষাগত দক্ষতা প্রমান করবে। 

মজার ব্যপার হচ্ছে, বুয়েট কিংবা মেডিকেল হোক, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাহাঙ্গীরনগর হোক, আর ছাত্র কিংবা শিক্ষক যেই হন না কেন, বিশ্বের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজি ভাষার মান যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে আইইএলটিএস কে সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করে। 

যাইহোক, বুয়েটের সেই ছাত্রদের হাতে সময় ছিল মাত্র ২০ দিন। আমাকে এসে বললো, যে করেই হোক আমাদের ব্যান্ড সেভেন পেতেই হবে, না হলে স্কলারশিপটা মিস হয়ে যাবে। ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বের সাথেই নিলাম। ভাবলাম এ জাতীয় একটা কঠিন কাজ করতে পারলে আরো একধাপ এগিয়ে যাবো আর তাদেরও জীবনের নতুন আরেকটা জানালা খুলে যাবে। আসলে আমি এরকম একটা চ্যালেজ্ঞের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। 

প্রথম যে কাজটা করলাম সেটা হল তাদের সবারই ছোট একটা ইন্টারভিউ নেয়া এবং তাদের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের কারেন্ট লেভেল যাচাই করা। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম তাদের রাইটিং স্কিল, গ্রামাটিক্যাল নলেজ, ভোকাবুলারী স্ট্রেন্থ, স্পিকিং স্কিল, রিডিং স্পিড এবং আরো কিছু আনুসাঙ্গিক বিষয়। এতে একটা ব্যাপার পরিস্কার হয়ে গেল, যদিও তারা বুয়েটের ছাত্র, প্রাকটিসের অভাবে, সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছইু ভুলে গিয়েছে। 

তবে তার চেয়েও কঠিন কাজটা ছিল একেক জনের দূর্বলতা ও শক্তির জায়গাটা একেক রকম এবং এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রাধান্য দিলাম রিডিং স্পিড কিভাবে আরো দ্রুত করা যায়। আর সেজন্য প্রথম দশ দিন স্পিড রিডিং এর উপর গুরুত্ব দিলাম। আর পাশাপাশি গ্রুপ ডিস্কাশনের উপর জোড় দিলাম। এতে যেটা হলো তারা ইন্ট্যারাক্ট করা শুরু করলো। আর যারা রিডিং প্যাস্যাজ পড়ে শিখতো তার সামারী বা সারমর্ম লিখতে বলতাম, এতে রাইটিংয়ের ভুলগুলো বের হয়ে গেল। তারা ইংরেজী শেখাটাকে অনেক এনজয় করা শুরু করলো। পরবর্তী দশ দিন আমি আইইএলটিএস টেস্টিং স্কিল নিয়ে কাজ করলাম।

এরপর আরও অনেকগুলো মিনি টেস্ট সহ শেষে দুটো ফুল লেন্থ মক টেস্ট নিলাম। এরপর আসলো সেই মাহেন্দ্রখন, সাত দিনের মাথায় তারা সবাই আইইএলটিএস রিয়েল টেস্টে বসলো। ফলাফল শেষে দেখা গেল বুয়েটের মাত্র ১ জন সিক্স পেয়েছিল, বাকি সবাই ৭ এবং দু’জন ৭.৫ । ব্যাপারটি সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল।  

এরপর ২০১২, ১৩, ১৪ এবং ২০১৫ পর্যন্ত আরো অনেক সাকসেস স্টোরী পেলাম। আমরা CEFR অর্থাৎ কমোন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক রেফারেন্সেস সমন্বয় এবং অনুসরণ করা শুরু করলাম। সফলতার হার আরো বেড়ে গেল। এদিকে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি ও CEFR সমন্বয় করলো। ভেবে ভাল লাগলো যে আমরা তাদের থেকেও এগিয়ে ছিলাম। 

২০১৫ এর শেষের দিকে সাত দিনেই কিভাবে সিক্স পাওয়া যায় এর ওপর খসড়া তৈরী করলাম। সকাল সন্ধ্যা টানা ৭ দিন ছাত্রদের লাঞ্চ, টি, কফি সব এখানে। আমি আর আমার টিম সাত দিন আপ্রাণ চেষ্টা করলাম কিভাবে স্টুডেন্টদের ভাল একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায়। সাতদিনের কোর্স শেষে ১২ জন থেকে ১০ জন পরীক্ষায় বসলো এবং মাত্র ৪ জন ৬ এবং ৬.৫ পেল, আর বাকী ৬ জন ৫ এবং ৫.৫ পেল। খুবই মন খারাপ হলো, ভাবলাম পরবর্তীতে আর এটা চালু করবনা, এখানেই শেষ। 

এরপর মাস খানেকের মধ্যে একটা মিটিং করলাম, একটা জেদ চেপে বসলো, এটার একটা শেষ দেখতে চাই। পুরো কোর্স প্ল্যান, আউটলাইন ঢেলে সাজালাম। যাতে করে স্টুডেন্টদের গ্রাজুয়াল ডেভালপমেন্ট হয়। আমি সবসময় স্টেপ বাই স্টেপ লার্নিংএ বিশ্বাসি। এরপর আরেকটা পাইলট ব্যাচ রান করলাম ২০১৬ এর শুরুতে। সুপার ইন্টেনসিভ সেভেন ডেইজ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, চললো সকাল সন্ধ্যা টানা সাত দিন। ফলাফল ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই সিক্স এবং সিক্স প্লাস। 

মজার বিষয় এদের কেউই আহামরি ভালো স্টুডেন্ট ছিলনা। কিন্তু আমরা তাদেরকে অনুপ্রানিত করেছিলাম যে তারা সেটা পারবে এবং তারা সেটা করে দেখিয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পনের হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী আইইএলটিএস টেস্টের জন্য প্রস্তুতিমূলক কোর্সে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তারা বেশীরভাগই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছিল। সবাই ভাল কিছু শিখেছে। কমপক্ষে এটা শিখেছে যে কিভাবে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। 

৭ দিনে আইইএলটিএস ব্যান্ড-৬ পাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। আমি আগেও বলেছি, যদি আপনার ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের বেসিক নলেজ ভাল থাকে তাহলে ৭ দিনে শুধু ৬ না সেভেন পাওয়াও সম্ভব এবং তার অনেক রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। যদি আপনার হাতে ৭ দিন কিংবা এরকম একটা সময় থাকে, তাহলে পুরো সময়টাকে দুভাগে ভাগ করুন। 

প্রথমভাগে অবশ্যই বেসিক জ্ঞানটুক ঝালাই করুন। যেমন টানা ২ মিনিট ইংরেজীতে কথা বলতে পারেন কিনা যাচাই করুন। লিখতে গিয়ে কি ধরনের সমস্যা হচ্ছে জানার চেষ্টা করুন। গ্রামার নিয়ে একদম দুশ্চিন্তা করবেননা। বিভিন্ন ধরনের বাক্য গঠন বা সেন্টেন্স স্ট্রাকচার পড়ুন। বিশুদ্ধ বানান এবং ভিন্ন ভিন্ন বাক্য গঠন, সিম্পল, কম্পেলেক্স, কম্পাউন্ড ও স্ট্রাকচারগুলো বোঝা এবং জানার চেষ্টাসহ কিভাবে সিম্পল থেকে কমপাউন্ড করা যায়, আবার কমপাউন্ড থেকে কমপ্লেক্স করা যায় এসব বিস্তারিত জানতে হবে। 

আর্টিকেল, নাম্বার, টেন্স, প্রিপজেশন, স্পেলিং এর মত ছোট জিনিসগুলো এড়িয়ে যাবেননা। এই বিষয়গুলো প্রমান করে যে আপনি লেখায় বা রাইটিং এ কতটা স্কিলড। আরো দেখতে হবে ১৫০০ থেকে ২০০০ ওয়ার্ডের কোন ইংরেজি আর্টিকেল পড়তে কত সময় নিচ্ছেন এবং সেটা কতটুকু বুঝতে পারছেন, কিভাবে অপরিচিত বা লেস ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ার্ডগুলোকে ট্যাকল করছেন। আর বিবিসি, সিএনএন তো শুনতে হবেই আপনার লিসেনিং স্কিল ভাল করার জন্য। 

হাতে যদি ১৫ দিন থাকে, তার অর্ধেক সময়ই আপনার ইংলিশ নলেজ ব্রাশআপ করুন, আর পরবর্তি দিনগুলোতে আইইএলটিএস  টেস্টিং স্কিল নিয়ে কাজ করুন। যেমন, কিভাবে টাইম সেভ করবেন, কি ধরনের প্রশ্ন আসে, কোনটা আগে আর কোনটা পরে উত্তর করবেন এবং আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয়। এ বিষয়ে আর জানতে # ০১৬১৭৩০২০১০-১৫।  ভয় পাবার কিছু নেই, আপনিও পারবেন মাত্র ৭ দিনেই। নিজের উপর আস্থা রাখুন। 


লেখকঃ ব্রিটিশ আমেরিকা রিসোর্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী

www.facebook.com/hellobarc

বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর