১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৫:৪৭

ইবিতে 'গলা কাটা' ভর্তি ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

ইকবাল হোসাইন রুদ্র, ইবি:

ইবিতে 'গলা কাটা' ভর্তি ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্স (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নামে বেনামে বিভিন্ন খাত তৈরি করে এ ভর্তি ফি বৃদ্ধি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিষয়টি এখনো একাডেমিক কাউন্সিল অথবা সিন্ডিকেট সভায় পাশ না হলেও অতিরিক্ত ফি নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি। এদিকে বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে তারা মানববন্ধন, র‌্যালি, অবস্থান ধর্মঘট, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। নবম দিনের মত রবিবার বেলা ১২ টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে তারা।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধর্মতত্ত্ব, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং আইন ও শরীয়াহ অনুষদভূক্ত বিভাগগুলোতে ভর্তি সম্পন্ন হতে ৩ হাজার ৫শত টাকা থেকে ৩ হাজার ৮ শত ২৯ টাকা লাগত। সেখানে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ওই অনুষদ গুলোতে ভর্তি ফি সর্বমোট ১১ হাজার ৮১৫ টাকা। ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত বিভাগগুলোতে সর্বমোট ভর্তি ফি ছিল ৪ হাজার ৮ শত টকা থেকে ৫ হাজার ২৩৭ টাকা। এবছর সেখানে ভর্তি সম্পন্ন করতে লাগছে ১৩ হাজার ৩১৫ টাকা। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভূক্ত বিভাগগুলোতে ভর্তি ফি ছিল সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৮৪৫ টাকা। এবার ফি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৪১৫ টাকা করা হয়েছে।
 
এবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে নামে বেনামে বিভিন্ন খাত তৈরি করেছে প্রশাসন। বিগত বছরগুলোতে ভর্তি সক্রান্ত ১৯ টি খাত থাকলেও এবার বাড়িয়ে ৩২ টি খাত তৈরি করা হয়েছে। এবছর প্রক্টরিয়াল সার্ভিস ফি বাবদ ১০০ টাকা, ইন্টারনেট ফি ২০০ টাকা, ইন্টারনেট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ১০০ টাকা, কাউন্সিলিং ফি ১০০ টাকা, জাতীয় দিবসসমূহ পালন ফি ১০০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন ফি ১০০ টাকা, ওরিয়েন্টেশন ফি ১০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া হল উন্নয়ন ফি, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন ফি, শিক্ষা উন্নয়ন ফি, বৈদ্যুতিক ফি-সহ বিভিন্ন খাতে ১০০ টাকা করে নিচ্ছে প্রশাসন। এমন ১৪ টি নতুন খাত তৈরি করেছে প্রশাসন। যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে নতুন নতুন খাত সৃষ্টির পাশাপাশি অন্যান্য খাতগুলোতেও টাকা বাড়ানো হয়েছে। পরিবহন ফি বছর প্রতি ৭৭০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। নতুন করে পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ হাজার টাকা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভাগ উন্নয়নের ফি বাড়িয়ে ৩ হাজার এবং হল ফি বাড়িয়ে ৯১৫ টাকা করা হয়েছে। শিক্ষাদান ফি ১৯২ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা, পুনঃভর্তি ফি ১০০ টাকার পরিবর্তে  ৮০০ টাকা করাসহ সকল খাতে ফি বাড়িয়েছে প্রশাসন।  

একাডেমিক কাউন্সিল অথবা সিন্ডিকেট সভায় পাশ না করে শুধু অর্থ কমিটির সভায় পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ভর্তি কার্যক্রক শুরু করেছে প্রশাসন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে করছেন শিক্ষকরা। এবিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘এটা কোনভাবে সমর্থন যোগ্য নয়। হঠাৎ বৃদ্ধি না করে ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি করলে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ পড়তো না। ভর্তি ফি এক বছরে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বাড়ালে সেটা সহনীয় হতো।’ 

এদিকে বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দেলন অব্যহত রয়েছে। আন্দোলনের নবম দিন বেলা ১২ টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন লিটন রায়, শাহদাত তিমির, আব্দুর রউফ, শামিমুল ইসলাম সুমন, আরিফসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ‘বর্ধিত ভর্তি ফি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে। পরবর্তীতে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করবো।’

এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, “ভর্তি ফি উন্নয়ন কমিটির সুপারিশে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তি ফি নির্ধারন করা হয়েছে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে ভর্তি ফি বৃদ্ধি ন্যায় সংগত এবং যৌক্তিক।” 


বিডি প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর