১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ২১:৫৫

উপাচার্য পদ নিয়ে জাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে ভাঙন!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

উপাচার্য পদ নিয়ে জাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে ভাঙন!

সফলভাবে নিজের প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব শেষ করার পর পুনরায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য মনোনীত হয়েছেন দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। আজ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(১) ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক তাকে লিখিতভাবে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়। 

এদিকে, অধ্যাপক ফারাজানা ইসলামকে অপসারণের মাধ্যমে নতুন করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর ব্যানারে এই শিক্ষকদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর। 

‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নামক আওয়ামীপন্থী দলটিতে এতদিন কোনো বিভাজন দেখা না গেলেও উপাচার্য নিয়োগের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলটি দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামপন্থী এবং অন্যটি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীরপন্থী।

এই দুই পক্ষ থেকেই দাবি করা হচ্ছে অন্যপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(১) ধারাটির অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উপাচার্যের পদ লাভ করে ক্ষমতা দখল করতে চাইছেন। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(১) ধারায় বলা হয়েছে- The Vice-Chancellor shall be appointed by the Chancellor for a period of four years from a panel of three persons to be nominated by the senate on such terms and conditions as may be determined by the Chancellor and shall be eligible for re-appointment for a further period of four years.   

চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুইটি দাবিকে সামনে রেখে শরীফ এনামুল কবীর পন্থী শিক্ষকরা আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয় ভবন অবরোধ করবেন বলে গত বৃহস্পতিবার এক লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। দাবি দুটি হচ্ছে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সিনেট সদস্যদের তলবি সভা আহ্বান। 
‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক’ সমাজের ব্যানার ব্যবহার করে লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১১(১) ধারার অপব্যাখ্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিটিতে আরো বলা হয়, ক্ষমতার দম্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মানহানিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্য উপাচার্য ও তার মদদপুষ্ট শিক্ষকদের চরম মূল্য দিতে।

এদিকে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক’ নামক একই ব্যানার ব্যবহার করে রবিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ফারজানা ইসলামপন্থী শিক্ষকরা। শরীফ এনামুল কবীরপন্থী শিক্ষকদের আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিরুদ্ধ ও ব্যক্তিগত ক্ষমতা লিপ্সা সংক্রান্ত কার্যক্রম দাবি করে তাতে একাত্মতা প্রকাশ না করায় তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। 

রবিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনটিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো নূরুল আলম। লিখিত বক্তব্যে দুই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো আবুল হোসেন (শিক্ষা) ও আমির হোসেনের (প্রশাসন) বিরুদ্ধে সংগঠনটির ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং উপ-উপাচার্যের পদসহ একাধিক পদ নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ করা হয়। জানা যায়, দুই উপ-উপাচার্যই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরের অনুসারী। এদের মধ্যে অধ্যাপক আমির হোসেন সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একজন ব্যক্তি প্রেষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির দায়িত্বে থেকেও একাধারে অনুষদের ডীন, মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক ও গ্রুপের সম্পাদক হিসেবে কিভাবে থাকেন সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

এছাড়া বর্তমান উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুই উপ-উপাচার্যের আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন অনৈতিক অবস্থান নেয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়।” সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, “ওই শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অপব্যাখ্যা করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে অনৈতিকভাবে আন্দোলন করছেন। কেননা রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে পুনরায় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা আখতার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম, আইন ও বিচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস প্রমুখ।

বিডি-প্রতিদিন/১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর