১২ এপ্রিল, ২০১৮ ১৪:১৯

ইবির ২২ শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করল ছাত্রলীগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

ইবির ২২ শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করল ছাত্রলীগ

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট দিচ্ছেন ওই শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২২ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। 

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক লালন শাহ হল থেকে তাঁদের বের করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনের নির্দেশে তাঁদেরকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

একইসাথে আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে দলীয় কর্মীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, কোটা প্রথা সংস্কার চেয়ে দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। যৌক্তিক আন্দোলনে দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অসংখ্য ছাত্রলীগ কর্মী অংশ গ্রহণ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চিহ্নিত করে দুই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্তত ৩৫ জন কর্মীকে সকাল ১০টার মধ্যে মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ সভাপতির আস্থাভাজন কর্মী সালাউদ্দিন আহমেদ সজল। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হাবিব, আশরাফুল, মেহেদী, লিমন, ফয়সাল, শাকিল, মেহেদী হাসান, নাইম, শিমুল, একই শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিল্লাল হোসাইন, রাসেল মুরাদ, আশিকুর রহমান, আশিক, রহমান, রাশেদ, রবিউল, আশিক, আশানুর মোল্লা, মেহেদী হাসান, রাব্বুল, গোলাম রাব্বী। একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আশিক ও নিশাত। আরবী ভাষা সাহিত্য বিভাগের আব্দুর রশিদ। এর মধ্যে বিল্লাল হোসাইন এবং আশানুর মোল্লা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ছাত্রলীগ কর্মী সালাউদ্দিন আহমেদ সজল, মেহেদী, আশরাফুল ইসলাম ও হাবীবসহ ১০-১২ জন কর্মীকে তাঁর কক্ষে (৩৩৫) ডেকে নেন। এসময় তাঁদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। একপর্যায়ে (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয় সজল। এসময় আবুল খায়ের মোল্লাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তাঁরা। 

আবুল খায়ের মোল্লা তাদেরকে বলেন, তোমরা যে অপরাধ করছো এটি তো ক্ষমার যোগ্য নয়। ঠিক আছে তোমাদের যেটি বলা হয়েছে সকাল ১০ টার মধ্যে হল ছেড়ে চলে যাবে। আর না গেলে ছেলেরা তোমাদেরকে হল থেকে নামিয়ে দিবে। এসময় তাদের সহপাঠি শিপনকে বলা হয়। তোমার বন্ধুরা যাতে যাতে চলে যায় সেটি দেখার দায়িত্ব তোর। এর আগে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান শহিন হলে এসে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

তবে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে চলে গেলেও তাদেরকে হাসি মুখে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এবিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিল্লাল হোসাইন বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি ছাত্রলীগ করি। আমি ছাত্রলীগকে ভালবাসি। যৌক্তিক আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলন করেছি। দেশরত্নের ঘোষণায় আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। হল ছেড়ে চলে যেতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি স্যালুট করি বঙ্গবন্ধুকে। আমি স্যালুট করি আমার ছাত্রলীগ নেতাদেরকে।’ 

জানা যায়, ছাত্রলীগ কর্মীরা হল থেকে একই সাথে বের হয়ে যান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্যালুট জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা ছাড়াও আরো অনেক কর্মী আন্দোলনে ছিল। কিন্তু কেবল আমদের কয়জনকেই হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে দুঃখ নেই। দলকে ভালবাসি তাই কখনও দল ছাড়ব না। আর আমি একজন ছাত্র এজন্য কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। এটা আমার অপরাধ নয়।’

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাঁরা হল থেকে চলে গিয়েছিল। পরে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, হল থেকে বের করার বা মারধর করার কোন রকম সিদ্ধান্ত কেন্দ্র কমিটি নেয়নি। কোটা আন্দোলনের বিষয়ে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের সমর্থন ছিল।

এদিকে হল ছাড়া হওয়া সেই ২২ শিক্ষার্থী একটি বিবৃতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, আমারা নিজেদের ভিতরে ভুল-বোঝাবুঝির কারনে সকালে কিছু ছাত্রলীগ কর্মী হল ত্যাগ করি। কিন্তু পরবর্তীতে আমার নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করে হলের বড় ভাইদের সাথে কথা বলে হলে চলে আসি। এই ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে যে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে তার কোন ভিত্তি নেই। আমার ছাত্রলীগের সাথে আছি, কারণ তারা আমাদের সাথে ছিল, আছে এবং থাকবে। তাই বিভ্রান্তিকর আলোচনা করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহবান জানচ্ছি।
তবে বিবৃতিতে ২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর রয়েছে। স্বাক্ষরকারীরা হলেন, মেহেদী হাসান, আব্দুর রশিদ, কাজী বিল্লাল ও রাশেদ আহমেদ।

বিডিপ্রতিদিন/ ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর