৮ জুন, ২০১৮ ১৮:৩৬
ইবিতে শিক্ষক নিয়োগ

পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশল লিখিত পরীক্ষা!

ইবি প্রতিনিধি:

পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশল লিখিত পরীক্ষা!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নয়, পছন্দের প্রার্থীদের বাছাইয়ের কৌশল হিসেবে ভূমিকা পালন করছে লিখিত পরীক্ষা। যোগ্যপ্রার্থী বাছাই এ লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলেও তা এখন পছন্দের প্রার্থীদের বাছাইয়ের কৌশলে পরিণত হয়েছে। 

মেধাবী, ভালো রেজাল্টধারী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিলে সমালোচনায় পড়তে হয়। সেজন্য মৌখিক পরীক্ষার আগে লিখিত থেকে মেধাবীদের বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় গোল্ড মেডেলিস্ট কিংবা ১ম শ্রেনীতে ১ম, ২য় মেধাধারীদের কৌশলে লিখিত পরীক্ষায় ফেল দেখানো হচ্ছে। 

লিখিত পরীক্ষার ফলে নম্বর প্রকাশ না ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তারা জানান, ভালো পরীক্ষা দিয়ে কিভাবে তারা ফেল কওে সেটাই তাদের প্রশ্ন। বিগত কয়েকটি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় গোল্ড মেডেলিস্ট কিংবা ১ম শ্রেনীতে ১ম, ২য় মেধাধারীদেরও ফেল করানো হয়েছে। 

গত ৩ জুন তারিখে ফার্মেসি বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চারটি পদের বিপরীতে আবেদন করেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী। এদের মধ্যে ৩১ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য অনুমদোন দেওয়া হয় । গত রোববার অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৩১জনের মধ্যে ২৫জন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ১৫ জনকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তির্ণ দেখানো হয়। বাকী ১০ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়। তবে কে কত মার্ক পেয়েছে? বরাবরের মতই তা প্রকাশ  করেনি নিয়োগ বোর্ড। 

অভিযোগ রয়েছে, তড়িঘড়ি করে এর আগে চারটি বিভাগেই একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের উদ্দ্যেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বমোট ১০০ নম্বর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪২, মৌখিক ৪০ এবং একাডেমিক রেজাল্টের জন্য ১৮ নম্বর নির্ধারণ করা হয়।

পরীক্ষার পাশকৃত প্রার্থী এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকরীদের তালিকা বিশ্লেষন করে দেখা যায়, যে দশ জনকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে তদের মধ্যে অনেকেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড মেডেলিস্ট মো: সরোয়ার হোসেন। জীবনের সকল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। পাশাপাশি পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন জাপানের ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা থেকে। এছাড়া ২৩ টি আন্তজার্তিক প্রকাশনার পাশাপাশি বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের চলতি নিয়োগ বোর্ডে ফার্মেসি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে লিখিত পরীক্ষায় তাকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা জীবনে অন্য সকল প্রার্থীদের চেয়ে আমি এগিয়ে ছিলাম। আমার লিখিত পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছিলো। কিন্তু কি হলো বুঝলাম না। আমার কাছে মনে হয়েছে লিখিত পরীক্ষা একটি আইওয়াশের মতো।’   

এছাড়া, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে শিমুল সুলতানা নামের এক প্রার্থী যার রেজাল্টে যিনি ইবির ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এছাড়া বুয়েট এ পিএইচডি ডিগ্রীতে অধ্যাযনরত। তিনিও লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন তবে যদিও অনেক কম রেজাল্টধারীরা সুযোগ পেয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি ২ পদের বিপরীতে পরিসংখ্যান বিভাগ, ৪ ফেব্রুয়ারি ৪ পদের বিপরীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ৩ পদের বিপরীতে মার্কেটিং এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ৪ পদের বিপরীতে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনি বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডের পূর্বে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকলেই মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তখনই সকল প্রার্থী কিভাবে মৌখিক পরীক্ষায় সুযোগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠে।  

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্নদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ দেওয়া হয়। এই বিভাগ গুলোর নিয়োগ মেধার থেকে রাজনৈতিক বা আত্মীয়তার সম্পর্কই দেখা হচ্ছে বেশি। 

এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা সুপারিশধারী প্রার্থীদেরকেও লিখিত পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ উঠেছে। সুপারিশকারীকে সহজে জবাব দিতে এই কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক দু:খ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেধাবীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হোক সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মেধাবীরা নিয়োগ পেলে তারা মূল ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত না থেকে গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রমে বেশি যুক্ত থাকবে। যেটা রাজনৈতিক বিবেচনার প্রার্থীরা করবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের যাচাই করে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সকল নিয়োগে মেধাবীদের অগ্রাদিকার দেওয়া হচ্ছে।’

 

বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর