২৩ জুলাই, ২০১৮ ১৩:৪৭

৮ বছরেও নিজস্ব ভবন পায়নি জাবির আইন অনুষদ

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

৮ বছরেও নিজস্ব ভবন পায়নি জাবির আইন অনুষদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদের বর্তমান বেহাল অবস্থার কথা বলতে গেলে প্রথমেই যার কথা মনে পড়ে তিনি হচ্ছেন লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার বিখ্যাত একটি কবিতাটির শেষে বলা হয়েছে- 'তেত্রিশ বছর কাটলো। কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না।' আর জাবির আইন অনুষদের ক্ষেত্রে এই লাইনগুলো হবে- '৮ বছর কাটলো। কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না।'

জাবির বর্তমান ১০টি অনুষদের অন্যতম একটি হচ্ছে আইন অনুষদ। যার একমাত্র বিভাগের নাম ‘আইন ও বিচার বিভাগ’। সম্প্রতি বিভাগটির শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মুটকোর্ট প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৮ বছর পেরোতে চললেও এখনো পর্যন্ত পূর্ণতা পায়নি এই অনুষদটি। পায়নি স্থায়ী কোনো ঠিকানা।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ তম আবর্তনকে দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আইন অনুষদের। আগামী ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পেরোতে চললেও নিজস্ব ভবন তো দূরের কথা স্থায়ী কোনো অফিস কিংবা শ্রেণিকক্ষও নেই এই অনুষদটির। এরই মধ্যে এসেছে ৭টি ব্যাচ। যার মধ্যে বিভাগটির প্রথম ব্যাচ (৪১ তম আবর্তন) চুকিয়ে ফেলেছে তাদের পড়াশোনার পাঠ। তাছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় এই অনুষদে ভর্তির অপেক্ষায় আছে হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।

বর্তমানে আইন অনুষদে অধ্যয়নরত আছে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো সেমিনার রুম, লাইব্রেরি, ছাত্র-ছাত্রীদের বসবার মতো কোনো স্থান, বা দাঁড়াবার মতো কোনো করিডোর। রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৮ জন। এখনো পর্যন্ত শিক্ষকরাও পায়নি স্থায়ী কোনো অফিস কক্ষ।

২০১১ সালে যাত্রা শুরু কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলার ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একটি কক্ষকে শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করে আসলেও সম্প্রতি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ কক্ষটিকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। অবশ্য এখন চতুর্থ তলায় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের একটি শ্রেণীকক্ষকে আইন অনুষদ ব্যবহার করছে। এই কক্ষটিতেও রয়েছে পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল এবং পাখার অভাব। এছাড়া নিজস্ব ভবন বা শ্রেণীকক্ষ না থাকায় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনের দুটি ল্যাব রুমকে শ্রেণীকক্ষ হিসেবে তাদেরকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।

বিভাগটির সভাপতি সহকারি অধ্যাপক কে এম সাজ্জাদ মহাসীন হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রেণীকক্ষ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকট মোকাবেলা করে বিভাগটিকে চালাতে হচ্ছে। বিভাগের পূর্ববর্তী সকল চেয়ারম্যান এবং আমিও প্রশাসনের কাছে সম্ভাব্য সকল উপায়ে এসব সংকট মেটানোর অনুরোধ জানিয়ে এসেছি। এখন বাকিটা প্রশাসনের হাতে।

বিভাগটির শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেও তারাও অত্যন্ত হতাশা এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রশাসনের নিকট অবিলম্বে বিভাগের জন্য নিজস্ব এবং স্থায়ী ভবন নির্মাণের দাবী জানিয়ে তারা বলেন, স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় নিজেদের অনেকটা ভাসমান কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতোই মনে হয়। যাদের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। অনেক সময় অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাঁকা কথাও শুনতে হয়। আর ভোগান্তির কথা তো বলে শেষ করা যাবে না।

সদ্য এই অনুষদের ডীন হিসেবে নির্বাচিত হওয়া সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ বলেন, আমি মাত্রই এই অনুষদের দায়িত্ব পেয়েছি। যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছি। নিজস্ব ভবন এবং শ্রেণীকক্ষের সংকট আপাতত কোনোভাবে পূরণ করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বর্তমান প্রশাসন একটি বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ হলে অনুষদটির জন্য স্থায়ী কোনো একটা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ভবন না পাওয়ার কারণ হিসেবে প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন অনুষদটির শিক্ষার্থীরা। বিভাগটির ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী খান মুনতাসির আরমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিজস্ব শ্রেণীক্ষবিহীন একটি বিভাগের শিক্ষার্থী হয়ে কি পরিমাণ ভোগান্তি যে প্রতিদিন পোহাচ্ছি তা বলে শেষ করা যাবে না। এটি প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তারা অনুষদের জন্য শ্রেণীকক্ষ যা কিনা আমাদের মৌলিক চাহিদা তার কিছুই পূরণ করতে পারেনি। এটি তাদের ব্যর্থতা নয় বরঞ্চ উদাসীনতা। কেননা একই সময়ে আমাদের সাথে যে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তাদেরকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে নিজস্ব ভবন আদায় করতে হয়েছে। আফসোসের বিষয় এই যে, আমাদের অনুষদ প্রতিষ্ঠার অনেক পরে বিশালাকার এবং ব্যায়বহুল প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য বাজেট পাওয়া গেলেও আমাদের শ্রেণীকক্ষের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না।

এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর