১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২০:০৯
পরিবেশ পরিষদের সভা

ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকার খসড়া অক্টোবরে, নির্বাচন মার্চে

ক্যাম্পাসে সহ-অবস্থান আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি ছাত্র সংগঠনের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকার খসড়া অক্টোবরে, নির্বাচন মার্চে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আজ রবিবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাবি উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন পুরাতন সিনেট কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানায় সকল ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। অন্যদিকে আগামী বছরের মার্চ মাসে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে অক্টোবরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়। 

সভায় ঢাবি প্রশাসন ও শিক্ষক নেতাদের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও ঢাবি শাখার সাধারণ আবুল বাশার, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী সহ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেকটি ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাদের উপিস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল সংগঠনের নেতারাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সংসদীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ করে শিক্ষার্থীরা আলোচনা করেন। তাদের আলোচিত বিষয়গুলো আমাদের প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডি লিখে রেখেছেন। এটা নিয়ে পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

কবে নাগাদ ডাকসু নির্বাচন দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, "প্রভোস্ট কমিটি, শৃঙখলা পরিষদ ও সিন্ডিকেট থেকে একটি নির্দেশনা তো আগেই দেয়া আছে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য কাজের যে লোড, যে কর্মপরিধি তা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এই কমিটিগুলো একটা নির্দেশনা ইতোমধ্যেই দিয়েছে, সেটা হলো মার্চ, ২০১৯। এই নিরিখে এখন পর্যন্ত আমাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। আশাকরি অক্টোবরের মধ্যে খসড়া যে ভোটার তালিকা সেটি প্রণয়ন করবো। এই ভোটার তালিকা প্রণয়ন একটি জটিল কাজ। সেটি করতে পারলে অনেক এগিয়ে যাবো।

ডাকসু নির্বাচন দেয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সব দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করা নিয়ে ছাত্রদের দাবি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, হলগুলোতে অবস্থানের জন্য প্রভোস্টবৃন্দ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মধুর ক্যান্টিন কেন্দ্রিক যে রাজনৈতিক চর্চা সেটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের যে কার্যক্রম চালাবে তাতে কারো জন্য প্রশাসন থেকে কোন বাধা নেই।

অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ১৯৯১ সালে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও নির্বাচন হয়নি। সে রকম পরিবেশ পরিস্থিতি যাতে না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা আলোচনা করেছি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের এই উদ্যোগেকে স্বাগত জানায়। ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের দাবির মধ্যে ছিলো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করার যে স্বাভাবিক পরিবেশ তা নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। হলগুলোর ভিতিহীন পরিবেশ দূর করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টন করতে হবে। নির্বাচন করবে ছাত্র সংগঠনগুলো। যখন বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে যখনই সহাবস্থান নিশ্চিত থাকবে তখনই ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ হবে বলে আমরা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের কাছে আমরা একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ও তফসিল ঘোষণার কথা বলেছি। এর আগে সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা বলেছি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কেননা এটি স্বতন্ত্র। তাই জাতীয় নির্বাচনের দিকে না তাকিয়ে শুধু ডাকসু নির্বাচনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনের সময় ডাকসু নির্বাচন হতে পারলে এখন কেন তা সম্ভব নয়? এর আগেও ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন হয়নি। প্রশাসনের কাছে দাবি রেখেছি যাতে এবারও এরকম কিছু না হয়। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে সুস্পষ্ট তারিখ চেয়েছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি ইমরান হাবীব রুমন বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি আগামী অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করে নভেম্বরের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন দেওয়া উচিত। জাতীয় নির্বাচনের মারপ্যাঁচে আগের মতো এবারও উদ্যোগটা যেন ঝিমিয়ে না পড়ে। আমরা মনে করি এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনটা হোক।

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ সব ধরণের সহযোগিতা করবে। নির্বাচনের মাধ্যমেই ছাত্র সংগঠনগুলোর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার সুযোগ আসবে। 

ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, প্রত্যেকটি হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংখ্যা গড়ে ৩০ শতাংশ। এর বাইরে যারা আছেন তারা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত। আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছি এখানে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বলতে কিছু নেই। আমরা সবাই ভ্রাতৃসম ছাত্র সংগঠন। সহাবস্থানের জন্য যে ‘ক্রাইটেরিয়া’ রয়েছে সেটা পূরণ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় তখন প্রথম ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কারণে একদিনও ক্যাম্পাস বন্ধ হয়নি। যারা নিয়মিত ছাত্র আছেন তারা আসুন, প্রশাসনের সাথে কথা বলুন- আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। 


বিডি-প্রতিদিন/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর