১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২০:৪৭
ছুটির দিনেও মুখরিত ক্যাম্পাস

ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব

দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও ডাকসু নিয়ে সরগরম ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদিনের মত ছাত্রনেতাদের আড্ডায় জমে উঠে ছাত্র রাজনীতির ‘রাজনীতির আতুড়ঘর’ খ্যাত মধুর ক্যান্টিন। এদিকে, ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’।

শুক্রবার সকাল থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা-কমীরা মধুর ক্যান্টিনে ভিড় জমান। ‘জয় বাংলা’র পাশাপাশি ‘১১ মার্চ জিতবে কারা, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা’ এমন স্লোগানও দিতে দেখা যায় তাদের। মধুর ক্যান্টিনে না আসলেও জুমার নামায আদায় করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আসেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী। পরে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে বেশকিছু কর্মীসহ আড্ডা দিতে দেখা যায় তাকে। শুধু মধুর ক্যান্টিনই নয়, ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল শিক্ষার্থীদের আলোচনার বিষয় ছিল ডাকসু নির্বাচন। বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ডাকসু ভবনে লাগানো হয়েছে নতুন নামফলক। ক্যাম্পাসের কোন কোন দেয়ালে চোখে পড়ছে নতুন কোন লেখা। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আমেজ লাগতে শুরু করেছে ক্যাম্পাসের সর্বত্র।

এদিকে, 'ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলে না একাডেমিক ভবনে করা হবে'- এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’। শুক্রবার সকালে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেয় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আদালতে রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান না থাকায় ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, এই প্রশ্ন এসেছে।  বিষয়টির মীমাংসা করতে প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণভোটের ব্যবস্থা করতে পারে। এটা তাদের জন্য খুব কঠিন হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মঞ্চের আহ্বায়ক মওদুদ মিষ্টি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডাকসুর সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ধারাবাহিক কর্মসূচির ঘোষণা করি আমরা। শুরুর দিকে শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২৫ জন শিক্ষার্থী আদালতে গিয়ে রিট করবেন। সেই রিটের সূত্র ধরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। তবে এখনো নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে নাকি আসন দেওয়ার নিয়ম-ই নেই। যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বয়ং তাদের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের খপ্পরে ঠেলে দিচ্ছে। ভোট নিয়েও যেন শঙ্কার শেষ নেই। আদতে ভোট হবে তো? নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে তো শিক্ষার্থীরা?

ডাকসুর সভাপতি উপাচার্যের হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করে মওদুদ মিষ্টি বলেন, তিনি চাইলে গঠনতন্ত্রের যে কোন অংশ স্থগিত করতে পারেন। নির্বাচন হওয়া না হওয়া তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। গঠনতন্ত্রে উপাচার্যের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রয়োজন বলেও লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ২০১২ সালে শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চে সক্রিয় থাকা নুর বাহাদুর, নুরে আলম দুর্জয় ও তোয়াহা ফারুক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সালে এই মঞ্চের সক্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ২৫ শিক্ষার্থীর করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সাত মাসেও নির্বাচনের কোনো আয়োজন দৃশ্যমান না হওয়ায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠান মনজিল মোরসেদ; জবাব না পেয়ে একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ভিসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগও আনেন। পরে মামলাটি যদিও আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর রবিবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রিয়াশীল’ ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সাথে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরই শুরু হয় ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড়। ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচনের।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর