জুলাই বিপ্লবের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমানে বহাল সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর সদস্যরা ফ্যাদিবাদের দালাল অভিযোগ করে তাদের পদত্যাগ ও নতুন সিন্ডিকেট গঠনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন করেন তারা। এরপর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয় তাদের প্রতিনিধি দল।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যাসিবাদের/আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও- গুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে নিজেদের দাবি জানান।
আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক মাসুদ ইরফান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে পুরো সিস্টেমের সংস্কার চাই। শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার্থীরা যে বিপ্লব করেছিল সেটা স্থায়ী হয়নি কারণ তারা ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারলেও সিস্টেমের পরিবর্তন করতে পারেনি।”
তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের সময় শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিয়ে আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। যদি সে সময় আমাদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া হতো তাহলে যে পরিমানে মানুষ শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে সে পরিমানে হতো না। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে যে সিন্ডিকেট ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়েছে সেই সিন্ডিকেট আমরা মানি না। এই সিন্ডিকেট অনতিবিলম্বে ভেঙে দিয়ে নতুন সিন্ডিকেট ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব এবং আন্দোলনন চলমান থাকবে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হচ্ছে সিন্ডিকেট। কিন্তু গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে ফ্যাসিবাদের দালালদের বসানো হয়েছে। ১৫ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টোকাই দিয়ে হামলা করা হয়েছিল, আমাদের বোনদের রক্তাক্ত করা হয়েছিল তখন এই সিন্ডিকেট কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই সিন্ডিকেরটের কথা ছিল শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা। যখন আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করছিল তখন এই সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সকল দিক থেকেই এই সিন্ডিকেট ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই সিন্ডিকেট এই স্বাধীন দেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ বলেন, “আজকে আমরা এক স্বাধীন দেশে অবস্থান করছি। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে রক্ত ঝরেছে তা লেগে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের হাতে। অনতিবিলম্বে এই কলঙ্কিত সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নতুন করে শিক্ষার্থী বান্ধব একটি সিন্ডিকেট গঠন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোছাদ্দেক ইবনে আলী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে শিক্ষার্থীবান্ধব সিন্ডিকেট গঠন করা, সিন্ডিকেটের প্রথম বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে যৌক্তিক সমাধান করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে যেসব শিক্ষার্থী বাহিরে অবস্থান করতে পারবে না তাদের হলে সিট দেওয়া অথবা বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
বিডি প্রতিদিন/একেএ