রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড

ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিন

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড

নামে ক্যান্টিন হলেও রাজনীতি চর্চা, জ্ঞানচর্চা, সংগীত চর্চা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বিভিন্ন সংগঠনের মিটিং, সংবাদ সম্মেলন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু এই ক্যান্টিন। সম্প্রতি মধুর ক্যান্টিনে যুক্ত করা হয়েছে ১০ এমবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ওয়াইফাই রাউটার। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ক্যান্টিনে একটি এলইডি টিভিও স্থাপন করা হয়েছে। তাই এটিকেই বাংলাদেশের একমাত্র ডিজিটাল ক্যান্টিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।

যেভাবে প্রতিষ্ঠা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এটি ছিল নবাবদের বাগানবাড়ির নাচঘর। অনেকের মতে এটি ছিল বাগানবাড়ির দরবার কক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আদিত্য চন্দ্র নামের ব্যবসায়ী প্রথম এখানে ক্যান্টিন স্থাপন করেন। উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুরের শ্রীনগরের জমিদারদের সঙ্গে মধুদার পিতামহ নকরী চন্দ্রের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে নকরী চন্দ্র তার দুই পুত্র আদিত্য চন্দ্র ও নিবারণ চন্দ্রসহ ঢাকায় আসেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নকরী চন্দ্রের পুত্র আদিত্য চন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যবসা প্রসারের দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি নবাবদের বাগানবাড়ির দরবার ঘরে ক্যান্টিন স্থাপন করেন। শুধু ব্যবসায় করা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের সেবা করাও ছিল তার উদ্দেশ্য।

রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এই ক্যান্টিন : ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তার সঙ্গে এই ক্যান্টিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয় এখানে। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই সকাল-বিকাল জমায়েত হয় এ ক্যান্টিনে। দেশের সংকট থেকে উত্তরণ ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার ডাক দেওয়া হয় এখান থেকে। যে কারণে ক্যান্টিনটি ক্রমেই ছাত্ররাজনীতির মূল খুঁটিতে রূপান্তরিত হয়। '৪৮-এর ভাষা আন্দোলন, '৪৯-এর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলন, '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, '৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আসে এ ক্যান্টিন থেকেই। '৬৯ থেকে '৭১ পর্যন্ত বহু বৈঠক মধুর ক্যান্টিনে হয়েছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর